eaibanglai
Homeএই বাংলায়জবর দখল....(২)...জায়গা বুঝে লোক গুঁজে দিচ্ছে সিটিসেন্টারের 'তিন মূর্তি'

জবর দখল….(২)…জায়গা বুঝে লোক গুঁজে দিচ্ছে সিটিসেন্টারের ‘তিন মূর্তি’

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- রোজ দিনই গজাচ্ছে নতুন নতুন দোকান ঘর। ময়ালের গায়ে বিষ ফোঁড়ার মতো বিশ-পঁচিশ মিটার দূরে দূরে মাসে মাসে মাথা তুলছে বাঁশ, দরমার দোকান ঘর আর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ইটের ওপর ইট সাজিয়ে তরতর করে উঠে যাচ্ছে পাকাপোক্ত দেওয়াল। এটাই এখন সিটি সেন্টারের দস্তুর।

“দেওয়াল তোলার আবার নতুন রকমের কায়দা। জবরদখল করে বানানো বাঁশ-দরমার কাঠামোকে চট, বস্তা ও ত্রিপল চাপা দিয়ে আড়াল করে, ভেতর ভেতর টুক টুক করে উঠে যাচ্ছে দেওয়াল। কাজ শেষ হয়ে গেলে খুলে ফেলা হচ্ছে চট- বস্তার আড়াল। আচমকাই লোকে দেখছে, মাটি ফুঁড়ে উঠে এসেছে এক একটি পাকা বাড়ির দোকান ঘর,”-ব্যাখ্যা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এ ডি ডি এ)’ র উচ্ছেদ অভিযানে থাকা কর্মচারীদের একাংশের। তাদের কথায়, “পুরোপুরি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে দখলদার উচ্ছেদ তো হয় না! বার বার ঠিক এমন করেই ভাঙ্গা হয়, যাতে দু- চার দিনের মেহনতে জবর দখল কারীরা ফের ব্যবসা শুরু করতে পারে। আসলে, এসব তো ওপর মহলের ব্যাপার। ওখানে বসেই ঠিক হয়- কোন্ দিকটা ভাঙতে হবে, কতটা ভাঙ্গা হবে, কোথায় কোথায় ছাড় দেওয়া হবে!”

এডিডিএ’র অধস্থন কর্মচারীদের কথায় উচ্ছেদের সময় ‘ছাড়’দেওয়ার আঁচ মিলল। অর্থাৎ, জায়গা মতো লোক বুঝে, সম্পর্ক বুঝে বা ‘অন্য ব্যবস্থা’র দরুন কি এই ছাড়ের সুবিধা মেলে? তাই কি, একই রাস্তার ওপর ডভন ডজন গজিয়ে ওঠা অবৈধ দোকানঘর ছেড়ে স্থানীয় চতুরঙ্গ মেলা ময়দানের আটটি দোকানঘরের গায়ে ঢ্যারা কেটে ‘বেআইনি নির্মান’ চিহ্নিত করল এডিডিএ? ‘অন্য রকম ব্যবস্থা’র দরুনই কি বেকসুর খালাস সারিসারি অগুন্তি দোকানঘর – এ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এলাকাতেই।

আরো প্রশ্ন উঠছে-গজিয়ে ওঠা অবৈধ জবরদখল উচ্ছেদের আগে এডিডিএ’র উপযুক্ত সার্ভে বা রুট ম্যাপ তৈরির সময়ই কি এই ছাড়ের অলিখিত নির্দেশ আসে – নাকি, রাজনৈতিক চাপে কখনো কখনো চোখ বন্ধ রাখে এডিডিএ?

“কোনরকম রাজনৈতিক চাপ তো শাসক দলের তরফ থেকে থাকার কথাই নয়। আমরা এ নিয়ে কখনোই এডিডিএ’র কাছে দরবার করিনি। আবার বলছি, সরকারি কাজে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার কোনো এক্তিয়ারই নেই আমাদের কারো। এসবই এডিডিএ’র প্রশাসনিক ব্যাপার। ভাঙলে ভাঙবে, ছাড়লে ছাড়বে,” -মন্তব্য সিটি সেন্টারে শাসক দলের ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল মুখার্জীর। এই তৃণমূল কংগ্রেসেরই অন্য এক নেতার কথায়, “আমাদের আমলেই সিটি সেন্টার জুড়ে জবরদখলের এত বাড়বাড়ন্ত। এটা ঠিক কথা। তবে, ঠিকমতো খোঁজ নিয়ে দেখুন – তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে জায়গা জমি দখলে আসল পোয়াবারো অবস্থা কাদের? তারা আসলে কোন দল করে? তাদের বেশিরভাগ অংশই ভিন্ন ভিন্ন দলের। উজ্জ্বলবাবুকে খুশি করতে দু-একবার আলগা করে হয়তো মিছিলে পা মেলায়। এরা কেউই কোনোদিন তৃনমূল কংগ্রেসের লোক ছিলনা।”

শহর দুর্গাপুরের মুখ্য প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রই এখন সিটি সেন্টার। দিনে দিনে সেখানে তাই ভিড় বাড়ছে। ভিন্ জেলার থেকেও সেখানে এখন ভিন্ রাজ্যের লোকজন – ফুটপাত থেকে পেল্লাই আবাসন অথবা বিলাসবহুল প্রাসাদ সর্বত্রই গিজগিজ করছে। জেলা সদর আসানসোলের ৭০ শতাংশ জবরদখলকারীই যেমন অবাঙালী, সিটি সেন্টারের দশাও এখন প্রায় সেরকমই। এইসব জবরদখলকারীদের জায়গা বুঝে, ঠিকঠাক গুঁজে দেওয়ার কাজটা বেশ বাহাদুরির সাথেই করে যাচ্ছেন এলাকার ‘তিন মূর্তি’ বলে অভিযোগ। সিটি সেন্টারের শহীদ ক্ষুদিরাম সরণী, অবনীন্দ্রনাথ বিথি, হরেকৃষ্ণ কোঙার সরণী জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো হঠাৎই যেসব দোকান ঘর গজিয়েছে গত চার বছরে, তাতে অন্তত ১.৫০ কোটি টাকার লেনদেন চলেছে সিটি সেন্টারের বাসিন্দা ওই তিন মূর্তির হাত দিয়ে। এই তিন মূর্তির কেউ ঠিকাদার, কেউ স্থানীয় বিচারক আবাসনের ঠিকা কর্মী তো কেউ বা আবার স্রেফ দালাল। কাউকে ঘুরঘুর করতে দেখা যায় নগর নিগমের অলিন্দে, কেউ আবার ব্লক সভাপতির চারপাশে তো কেউ আবার সেখানকার কমার্শিয়াল মার্কেটে। উজ্জ্বল মুখার্জীর সাফ জবাব,”বুঝতে পারছি কাদের কথা উঠছে। ওরা তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ নয়। ওদের আমরা প্রশ্রয় দিই না।”

সত্যিই কি? – সময় বলবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments