মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- একটি পন্য পরিবহন টার্মিনালের পেট চিরে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে পার্কিং লট বানানোর জায়গা বরাদ্দ করে এবার জবরদস্ত বেকায়দায় পড়েছে এ.ডি.ডি.এ। পরিস্থিতি সামাল দিতে, লজ্জা ঢাকতে এবার ‘দখলদার’ উচ্ছেদে নেমে মুখরক্ষা করতে নামতে চলেছে রাজ্য সরকারের ওই সংস্থা।
২০০৭ এ রেলপথ ব্যবহার করে পন্য পরিবহনের ফ্রেট টার্মিনাল ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু করে বাজারে আসে পালোজিক্স ইনফ্রাস্টাকচার নামে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই মোতাবেক দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও তারা একটি রেলওয়ে সাইডিং সহ টার্মিনাল গড়ে তোলে। এর জন্য ২০১২ সালে দুর্গাপুরেরই সগড়ভাঙ্গাঁ এলাকায় সংস্থাটিকে ২৩ একর জায়গা বরাদ্দ করে এ.ডি.ডি.এ। সেই মোতাবেক, সংশ্লিষ্ট জায়গাটিতে পরিবহনের জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলে বেসরকারি সংস্থাটি। মূলতঃ খনি থেকে তোলা কয়লা লরি বোঝাই হয়ে রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চল ও বাঁকুড়ার বড়জোড়ার খনিগুলি থেকে সগড়ভাঙ্গাঁর টার্মিনালে আনা হয়। সেখান থেকেই রেলওয়ে রেকে সেই কয়লা পাঠানো হয় বিভিন্ন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বর্তমানে বড়জোড়ার নর্থ ব্লক খনি থেকে ট্রাকে করে আনা কয়লা এই টার্মিনাল থেকে পাঠানো হচ্ছে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।

সমস্যা হল, ওই টার্মিনালের ভেতরই, রেল লাইনের ৩০ ফুটের মধ্যে বেশ কিছুটা জমি এক প্রাক্তন কোল মাফিয়ার নামে বরাদ্দ করে দিয়ে বসেছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এ.ডি.ডি.এ)। ওই প্রাক্তন কোল মাফিয়া নাকি বরাদ্দ কৃত ওই জমিতে গাড়ী রাখার পার্কিং লট বানাবে। গত বছরই এ ডি ডি এ’র পরিকল্পনা বিভাগের এক কর্তার জোরাজুরিতে ওই প্রাক্তন কোল মাফিয়াকে বিতর্কিত ভাবে ওই জমিটি বরাদ্দ করা হয়। কয়েকমাস এভাবেই কেটে যাওয়ার পর, এখন জমিটিতে নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রাক্তন কোল মাফিয়ার নজরে আসে ওই জমিতে পালোজিক্স সংস্থা একটি কাঠামো বানিয়েই রেখেছে। রাস্তার ধারে ওই কাঠামোটি না ভাঙলে, কোনোভাবেই নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

এমনিতেই গত চার বছর ধরে এ ডি ডি এ তে প্রাক্তন ওই কোল মাফিয়া বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে। সরকারি জমি দখল করে নির্মাণের অভিযোগ ও রয়েছে তার নামে। এ ডি ডি এ র এক আধিকারিক জানান, “আমাদের প্ল্যানিং বিভাগের এক কর্তার সাথে তার সম্পর্ক অতি মধুর। আবার সময় সময় তার কাজ দ্রুত করে দেওয়ার জন্য জেলা শাসকের দপ্তর থেকেও ফোন আসে”। সরকারি জমি দখল নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাওয়ার পর সেই প্রাক্তন কোল মাফিয়া এ ডি ডি এ তে প্রভাব খাটিয়ে এবার অন্য চালু সংস্থার জমিতে থাবা বসাতে চায়।
তবে, চাইলেই তো নয়, তার জন্য দরকার এ ডি ডি এ র ‘মদত’, আর সেটি ই নাকি রীতিমতো পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে ময়দানে নামছে এ ডি ডি এ। গত ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৯ এ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে নির্মাণ বন্ধের নোটিশ জারি করে। গত ১৮ নভেম্বর, ২০০৯ এও ওই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়।


গত ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, এ ডি ডি এ একটি সার্ভে করে জানতে পারে যে পন্য পরিবহন টার্মিনাল নাকি সরকারি জায়গা দখল করে বসে আছে। টার্মিনাল সংস্থার এক আধিকর্তা অতুল পালিওয়াল বলেন, “গা জোওয়ারি করে এ ডি ডি এ আমাদের জমি দখল করে অন্য সংস্থাকে দিতে চাইছে। আমরা প্রতিকার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যাচ্ছি”। কিন্তু, ৬ জানুয়ারি ওই বিতর্কিত নির্মাণ ভাঙতে দল পাঠাচ্ছে এ ডি ডি এ, বলে সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।
