সাভারকারের শিষ্য শাহ, তিনি তাই করছেন, জিন্না’ র পথেই হাঁটছেন

673

সুবর্ণন্যায়ধীশ:

সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে কয়েক’শ কোটি টাকা খরচ করে যে সব এন.আর.সি. জেলখানা বানানো হচ্ছে, তবে কি সেগুলো স্রেফ মুসুলমান ভরার কারাগার? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে নয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনেছেন, তাতে ঠারে ঠোরে মোদি সরকার বুঝিয়েই দিয়েছে- ‘এ বিল আসলে নাকি অনুপ্রবেশকারী ঠেকানোর নয়, মুসুলমান তাড়ানোর বিল’। এই নিয়েই এখন বিস্তর চর্চা দেশ জুড়ে। এন.আর.সি জ্বরে কাঁপতে থাকা ওপার বাংলা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসা হিন্দু জনগণকে এক ধাক্কায় পকেটে পুরতে এটি বলা যায় মোদি সরকারের মরীয়া প্রয়াশ। আসামে গনিত টা ছকের বাইরে চলে গিয়েছিল। বারো লাখ রাম আর সাত লাখ রহিম আসামে উদ্বৃত্ত! আসামকে ঘিরে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যে ভাবে দলের অন্দরে, বাইরে কোনঠাসা হয়ে পড়ল বিজেপি, তড়িঘড়ি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকেই বলতে হল- ‘আসামের এন আর সি তে ভুল আছে। বাতিল করব’। কয়েক হাজার কোটি টাকার পাবলিক মানি খরচ করার পর কিসের তাড়নায় তা বাতিল করা হবে? এ তো মহম্মদ বিন তুঘলকের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে! নাকি, আসল কারন- এই এন.আর.সি সংঘের মনের মতো হয়নি! এ সব তর্ক – বিতর্ক, দশরকম আলোচনার মাঝেই অমিত এর রাখ ঢাক না করেই বলেই দিলেন, ‘হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সিরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন, মুসুলমানরা নয়’। রে রে করে বিরোধীরা এক কাট্টা হয়ে অভিযোগ তুললেন, ‘এ তো নতুন করে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের ষড়যন্ত্র!!’
নতুন করে? আসলে কিন্তু আদৌ তা নয়।
সেটা ১৯৪৩ সাল। হিন্দুত্ব থিওরির জন্মদাতা বিনায়ক সাভারকার কি বললেন? মুসলিম লীগের মহাগুরু মহম্মদ আলি জিন্না যখন ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের মত প্রকাশ
করলেন, কাল বিলম্ব না করে এই সাভারকার বলে দিলেন, মিঃ জিন্নার দ্বিজাতি তত্ব নিয়ে তাঁর সঙ্গেঁ আমার কোনো বিরোধ নেই। আমরা হিন্দুরা নিজেরা একটা জাতি এবং এটা ঐতিহাসিক সত্য যে হিন্দুরা এবং মুসুলমানরা দুটি আলাদা জাতি’। সংঘ গুরুর কথাতেই ঈঙ্গিঁত – তিনি কার্যতঃ পাকিস্তান গঠনকে সমর্থন করেছেন। ভাবখানা এই যে ‘তেলে আর জলে আসলে কখনো মেশে না’।
দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদতে সাভারকার অনুগামী। তিনি চাইবেন ই কি-ভাবে ধাপে ধাপে দেশে সাভারকারের চিন্তা ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া যায়। উনি সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথ পড়েন নি। তাই উনি জানেন না – ‘বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান’, বা ‘শিখ, হুন দল, পাঠান, মোগল এক দেহে হল লীন’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংখ্যা গরিষ্ট মন পেতে বলছেন – ‘কোনো রেশন কার্ড বা প্রমান যোগাড় করার জন্য হুড়োহুড়ি করবেন না। ওসব লাগবে না’। তার মানে? কি করে বুঝবেন – কাঁটাতার টপকে যে লোকটা এল,- তার এদেশে আগমন বৈধ না অবৈধ তা বোঝায় উপায়টা কি তবে? অমিত শা যা বলতে চাইছেন, তা যেন অনেকটা এরকম – ‘তুমি যে-ই হও বাপু অসুবিধা নাই, শুধু মোছলমান হলে চলবে না’। আসলে ভারতকে পুরোপুরি হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর পয়লা ধাপ এটি। এর ভেতর আর কোনো লুকোনো এজেন্ডা নাই। লোকসভায় বিলটি পেশ করে তাই তিনি যখন বলেই দিলেন – অমুসলিম হলে, কার্যতঃ তার ভারতীয় নাগরিক হওয়ার কোনো প্রমান দাখিলের দরকারই নেই, আসলে তিনি এন.আর.সি. বিরোধি হিন্দু ভোট ব্যঙ্ককে এক জোট করার খেলা শুরু করলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here