সন্তোষ মণ্ডল, আসানসোলঃ- গতকালই বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়ে গেল বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ৩ জুন দিনটি বিশ্ব বাই সাইকেল দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয় দূষণ এড়িয়ে পরিবেশকে বাঁচাতে সাইকেল চালানোর সুবিধা গুলিকে প্রচার করা হবে ও মানুষকে সচেতন করা হবে। পরিবেশ বাঁচাতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন সাইকেলের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু যদি স্বাস্থ্যের দিকে তাকানো যায় তাহলে সাইকেল চালানোর উপকারিতা গুলো উপেক্ষা করা যায় না।
সাইকেল নিয়ে যখন একদিকে এত সচেতনতা, প্রচার তখন রাজ্য থেকে যে আস্ত একটা সাইকেল কারখানা উধাও হয়ে গেল সে বিষয়ে কারও কোনও হুঁশ নেই। আসানসোলের পাঁচগাছিয়াতে ইংল্যান্ডের র্যালে কোম্পানির সহযোগিতায় শিল্পপতি সুবীর সেন তাঁর দুই ছেলে অভিজিৎ ও সঞ্জয়কে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সেনর্যালে সাইকেল কারখানা। ১৯৫২ সালে ৫ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই কারখানা। যা ছিল এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইকেল কারখানা। আর এখানে তৈরি সাইকেল শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই নয় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে যেত পাকিস্তান, আফগানিস্তান এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। সেনর্যালের তৈরি ‘র্যালে’, ‘হাম্বার’, ‘রবিনহুড’ ব্র্যান্ডেড সাইকেল তখন যথেষ্ঠ সুনাম অর্জন করেছিল। যন্ত্রাংশ থেকে সাইকেল সব তৈরি হত এই কারখানাতেই। কর্মসংস্থান হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার যুবকের। আর এই কারখানাকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক সংস্কৃতির বাতাবরণ। খেলাধুলা, নাটক এবং সাংস্কৃতিক চার্চার ক্ষেত্র হিসাবে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল সেনর্যালের নাম।
ছয়ের দশকের শেষদিক থেকে ঘন ঘন শ্রমিক আন্দোলনে ব্যাহত হয় কারখানার কাজ। রুগ্ণ হয়ে পড়ে কারখানাটি। নব্বইয়ের দশক থেকে ধুঁকতে থাকা কারখানাটি অবশেষে বন্ধ হয়ে যায় ২০০১ সালে। এরপরই দুষ্কৃতীরা কারখানার যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে জানলা, দরজা এমনকী ইট পর্যন্ত লুঠ করে নিয়ে যায়। বর্তমানে কারখানার জায়গায় শুধু পড়ে ধ্বংসস্তূপ। শুধু কোনওমতে টিকে রয়েছে শ্রমিক কোয়ার্টারগুলি। কারণ, এখনও ওইসব কোয়ার্টারে বসবাস করছেন প্রাক্তন কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। কারখানার আবাসনে বসবাস করা দিলীপ মুখার্জি ও প্রশান্ত সাঁতরারা জানালেন সেনর্যালের গৌরবময় ইতিহাসের কথা। দিলীপবাবু এখনও আগলে রেখেছেন সেনর্যালে কারখানায় তৈরি তাঁর বাইসাইকেলটি।
তবে এখনও আশার আলো দেখেন দিলীপবাবু, প্রশান্তবাবুরা। তাদের মতে শিল্পের জন্য এত ভালো পরিকাঠামো যুক্ত জায়গায় নতুন করে কোনও শিল্প গড়ে উঠতেই পারে। দরকার শুধু সরকারি সদিচ্ছার। এছাড়াও বর্তমানে সবুজসাথী প্রকল্পে রাজ্য বাইরে থেকে সাইকেল কিনছে। তার জন্য খরচ করতে হচ্ছে বহু টাকা। অথচ রাজ্যে সাইকেল উৎপাদন হলে খরচও কমবে ও তার মানও উন্নত হবে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও শিল্পোদ্যোগীদের কাছে সাইকেল কারখানার প্রস্তাব দিয়েছেন। দিলীপবাবু, প্রশান্তবাবুদের মতে সরকার ও শিল্পপতিরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আবার নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে সেনর্যালে। যার জেরে কর্মসংস্থান তো হবেই, পাশাপাশি গোটা এলাকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চিত্রটাও বদলে যাবে।