পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের বিতর্কিত মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল শিল্পাঞ্চলে…দেখুন সেই ভিডিও

797

সংবাদদাতা, আসানসোলঃ আর কয়েকদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চল জুড়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে । এরই মধ্যে হঠাৎ গতকাল গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ঝড়ের গতিতে । ওই ভাইরাল ভিডিওতে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে একটি কর্মিসভায় বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে। যেখানে তিনি দলীয় কর্মীদের বিজেপি কর্মী সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। ভিডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়, “যারা কট্টর বিজেপি, যাদের হেলানো যাবে না, তাদেরকে চমকাতে হবে। বলবেন আপনি যদি ভোট দিতে যান, আমরা ধরে নেব বিজেপিকে ভোট দেবেন। ভোটের পর আপনি কোথায় থাকবেন সেটা আপনার নিজের রিস্ক। আর যদি ভোট দিতে না যান, আমরা ধরে নেব আপনি আমাদের সমর্থন করছেন। আপনি ভালোভাবে থাকুন, ব্যবসা করুন, বাণিজ্য করুন, চাকরি করুন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি।” যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি এই বাংলায় ডট কম।

বিতর্কিত মন্তব্যের সেই ভাইরাল ভিডিও

বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে পাণ্ডবেশ্বর বিধায়কের বিতর্কিত ওই মন্তব্যেকে নিয়ে। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও এদিন টেলিফোন মারফত জানান, ” গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যখনই ভোট হয়, তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরা পুলিশ দুষ্কৃতীকারী ও গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেয়। এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের কালচার। তৃণমূল কংগ্রেস দল খুব ভাল করেই জানে যদি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পান তাহলে তারা বিজেপিকে ভোট দেবেন। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ওই ভাইরাল ভিডিও ক্লিপিংটি নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে অভিযোগ পত্র সহ । আমাদের দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে ।” অন্যদিকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিজেপির বিশিষ্ট লড়াকু নেতা চন্দ্র শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী হয়তো ভুলে গেছেন যে তিনি নিজেই একজন অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হওয়া আসামী। কিছুদিন আগে কলকাতা বিমানবন্দরে অস্ত্র সমেত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার পরেও তৃণমূল কংগ্রেস তাকে বিধায়ক করেছে। এর থেকেই স্পষ্ট যে তৃণমূল কংগ্রেসে গুন্ডা চোর-ডাকাত ও খুনিদের জয়জয়কার । তৃণমূল কংগ্রেসের ওই বিধায়ক যদি ভেবে থাকেন আসানসোল উপনির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের পৌরনিগম নির্বাচনের মতন ভোট লুট ও সন্ত্রাস চালাবেন তা হলে তিনি মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ এই নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের ওই বিধায়ক নিশ্চিত যে তারা এবার হারতে চলেছেন আসানসোল উপনির্বাচনে। তাই মানুষকে ভয় দেখাতে হুমকির সুরে কথা বলছেন। শেষকথা শিল্পাঞ্চলের মানুষই বলবেন।”

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়ে জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি এক্ষুনি শুনলাম। যদি বিষয়টি সত্যি হয়ে থাকে নিশ্চিতবাবে ওই ধরণের ভাষা প্রয়োগ করা উচিৎ হয়নি। বিষটি শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চই দেখবে। আমি নরেনদার কাছ থেকে খবর নেব।”

এদিকে যাকে নিয়ে এত বিতর্ক সেই পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে ভাইরাল ভিডিও নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি উল্টে এর দায় বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির উপর চাপান। তিনি বলেন, “ভাইরাল ফাইরাল তো বুঝিনা! আমি এখনও ভিডিওটি দেখিনি। খবর টবর নিতে হবে। তবে ভিডিও ক্লিপটি পুরনো হতে পারে। যিনি আমাদের জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি এখন বিজেপিতে আছেন। তিনি তখন নির্দেশ টির্দেশ দিতেন। সেই মতো আমরা কাজ করতাম। নীচু তলার কর্মী আমরা, তৃণমূল স্তরের কর্মী। ”

আর এই দায় চাপানো নিয়ে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ককে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা তথা পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি বলেন,” তার মানে একটা জিনিস উনি বুঝেছেন যে, বিজেপির লোকেরা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে ওনারা হারবেন। আর এই ধরণের হুমকি দিচ্ছেন, না দিলেই ভালো হয়। উনি তো অনুব্রত মণ্ডলের শিষ্য! অনুব্রত মণ্ডলতো কিছুদিন পর জেলে থাকবেন। তো এই ধরণের ধমকি যদি দিতে থাকেন তাহলে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে লুডো খেলার জন্য জেলে এক দুজনতো লাগবে। তখন হয়তো এনাকে যেতে হবে।”

সব মিলিয়ে আসন্ন লোকসভা উপনির্বাচন ঘিরে শিল্পাঞ্চল জুড়ে ক্রমশ চড়ছে উত্তেজনার পারদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here