গুয়াহাটি ও কামাখ্যা দেবী দর্শন, কৌস্তুভ করের সাথে

1955

কোন কালে একা

হয় নিকো জয়ী

পুরুষের তরবারি

শক্তি দিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে
বিজয় লক্ষী নারী……

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ” নারী ” কবিতার এই লাইন গুলি দিয়েই এই ভ্রমণ কাহিনীটির সূচনা করলাম। বিগত পাঁচ বছরে আমি বেশ কয়েকবার গুয়াহাটি গিয়েছি এবং গুয়াহাটি গেলেই আমি কামাখ্যা দেবীকে দর্শন করে আসি। এখন যে কাহিনী টা বলছি সেটা ২০১৭ সালের ভ্রমণ এর কথা বলছি। গুয়াহাটি ও কামাখ্যা নিয়ে কথা বলার আগেই অসম নিয়ে দু চার কথা আপনাদের জানিয়ে রাখি । অনেকেই হয়তো অসমের ইতিহাস জানেন, আমার দু চার কথা বলাটা তাদের জন্য যাঁরা জানেন না। অতীতের “আসাম ” পরিবর্তিত হয়ে আজ হয়েছে ” অসম “। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বার বার ভাগ হয়েছে অসম। ২ লক্ষ বর্গ কি মি থেকে কমে কমে আজ অসম এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ৭৮৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৪৭ এর স্বাধীনতায় করিমগঞ্জ ছেড়ে সুন্দরী সিলেট চলে গেল আজকের বাংলাদেশে। ১৯৫১ সালে কামরূপের দেয়ানগিরি পেয়ে গেল ভুটান। এখানেই শেষ নয়, ১৯৬৩ সালে অসম ছেড়ে জন্ম নিল নতুন রাজ্য নাগাল্যান্ড, ১৯৭২ সালের ২১ শে জানুয়ারি গঠিত হলো মেঘালয় রাজ্য এবং ঐ বছরই জন্ম নিল মিজোরাম রাজ্য। অসমকে এতবার বিভক্ত করার পর, আজও অসম উওর পূর্বের প্রবেশদ্বার এবং প্রধান রাজ্য।
চীনের তিব্বতের মানস সরোবর থেকে জাত ব্রহ্মপুত্র নদ অসমের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের দৈঘ্য প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার । এই ২৯০০ কিলোমিটার এর মধ্যে ৭০০ কিলোমিটারই বয়ে গেছে অসমের উপর দিয়ে। প্রতি বছর বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্রের বন্যা অসম বাসির কাছে আতঙ্ক। আসুর (ASSU) গন- আন্দোলন এখন আর নেই। তবু এখনো বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য অসম মাঝে মাঝে অশান্ত হয়ে ওঠে। অতীতের প্রাগজ্যোতিষপুর আজ হয়েছে ” গুয়াহাটি “। গুয়া কথার অর্থ সুপারি আর হাটি কথার অর্থ হাট অর্থাত্ সুপারির হাট । ব্রহ্মার পুত্র দামাল নদ ব্রহ্মপুত্র তথা লোহিতের দক্ষিণ পাড়ে ৫৫ মিটার উঁচুতে দৈতরাজ নরকাসুরের হাতে তৈরি এই গুয়াহাটি শহর। গুয়াহাটিতে যাঁরা যায়, তাদের মুখ্য আকর্ষণ হলো কামাখ্যা দেবীকে দর্শন করা। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আমরা কোলকাতা থেকে গুয়াহাটির বিমান ধরলাম। কোলকাতা থেকে গুয়াহাটি যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা। এক্ষেত্রে বলে রাখি যদি মাস তিনেক আগে বিমানের টিকিট করা যায়, তাহলে ট্রেনে এসি টু টায়ার এর টিকিটের দামেই বিমানের টিকিট পাওয়া যায়। বর্তমান যুগে ট্রেনের থেকে বিমানে করে যাওয়া সুবিধার। এতে বাঁচে সময় বাঁচে অর্থও। গুয়াহাটি বিমান বন্দর থেকে যখন বাইরে এলাম তখন বাইরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন গুয়াহাটির স্থানীয় বাসিন্দা ভাতূপ্রতিম রাজু দেব। ওনার বাড়ি পল্টন বাজার এর কাছে আর্য নগরে। বয়সের বিচারে আমার চেয়ে কিছুটা ছোট হলেও মনের দিক দিয়ে আমার চেয়ে অনেকটাই বড়ো। উনিই আমাদেরকে পল্টন বাজার -এ “হোটেল রেন্ট ইন” এ নিয়ে গেলেন । ঐবার আমরা এই হোটেলেই উঠেছিলাম। হোটেলেটির পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং খাবারের মান যথেষ্ট উন্নত মানের। যে ক’দিন আমরা গুয়াহাটিতে ছিলাম বেশির ভাগ সময়ই রাজুদা আমাদের সাথে ছিলেন। বিভিন্ন ভাবে উনি আমাদের সাথে সহযোগিতা করেছেন, ওনার ঋন আমরা কখনোই শোধ করতে পারবো না। তবে ওনার ঋন আমি স্বীকার করি, আর কষ্ট পায়।
পরদিন সকালে স্নান সেরে আমারা কামাখ্যা দেবীকে দর্শন করতে যাবো বলে তৈরি হয়ে গেলাম। শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উওর-পশ্চিমে নীলাচল পাহাড়ের ৫২৫ ফুট উঁচুতে কামাখ্যা মন্দির। তন্ত্রসাধনার পীঠস্থান এই কামাখ্যা । দৈতরাজ নরকাসুরের তৈরি মূল মন্দিরটি ১৫৫৩ য় বাংলার সুলতান সুলেমানের সেনাপতির হাতে বিনষ্ট হওয়ার পর নতুন করে ১৬৬৫ সালে মন্দির গড়েন কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণ। ডিম্বাকার মৌচাকের আদলে এর শিখর । মন্দিরের ৭ টি চুড়া । প্রাচীন অহোম স্থাপত্যের নিদর্শন এই মন্দিরে দুর্গা, কালী, তারা, কমলা, উমা ও চামুণ্ডার প্রতিভূ রূপে পূজিতা হচ্ছেন দশ মহাবিদ্যার অন্যতমা অষ্টধাতুর দেবী কামাখ্যা। বিষ্ণুচক্রে খণ্ডিত সতীর যোনি পড়ে এখানে। ভারতে যোনি পূজার প্রথা একমাত্র কামাখ্যায়। এটি 51 পীঠের এক পীঠ । আগে মন্দিরে ভিতরটা শুধু প্রদীপের আলোতে আলোকিত হতো । সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এখন মন্দিরের ভিতর খুব কম আলোর LED বাল্ব জ্বলে। অম্বুবাচীতে দেবী ঋতুমতী হন। এই সময় মন্দির 3 দিন বন্ধ থাকে। মন্দির সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে তবে দুপুরে 1টা থেকে 3 টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে । মন্দিরের সামনে আছে সৌভাগ্যকুণ্ড। এখানে স্নান- তর্পণ করে অনেক ভক্ত মন্দিরে পূজা দেন। এখানে দুই রকমের দর্শনের প্রথা আছে। সাধারণ দর্শন এবং বিশেষ দর্শন। সাধারণ দর্শনের জন্য কোন টাকা দিতে হয় না। বিশেষ দর্শনের ৫০০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। আমাদের হাতে সময় কম থাকায় ৫০০ টাকার টিকিট কেটেই দর্শন করে ছিলাম। ভারতবর্ষের প্রথমসারির বহু মন্দির মসজিদ এ আমি পূজা দিয়েছি তার মধ্যে গুটিকয়েক জায়গায় পূজারীর চাহিদা আপনার ইচ্ছাধীন। অর্থাত্ আপনি খুশী মনে যা দেবেন পূজারী সেটাই গ্রহণ করবে, আপনাকে আর একটি বারের জন্যও বলবে না আর কিছু দিন। এর মধ্য কামাখ্যা মন্দিরের পূজারীরাও পড়ে। এটাই কামাখ্যা মন্দিরের পূজারীদের বিশেষত্ব। কামাখ্যা দর্শন করে আমরা চললাম কামাখ্যা মন্দির থেকে ১৬৫ ফুট উঁচুতে ব্রহ্মা পর্বতের শিখরে ভুবনেশ্বরী মন্দির দেখতে। দশ মহাবিদ্যার অন্যতম এই ভুবনেশ্বরী। ভুবনেশ্বরী মন্দির দর্শন করে আমরা চলে এলাম আবার গুয়াহাটি শহরে। গুয়াহাটি শিলং রোড ধরে ১০ কিলোমিটার গেলে অসমের আজকের রাজধানী দিসপুর। এরপর আমরা এলাম গুয়াহাটির কাছারি ঘাটে। এখান থেকে লঞ্চে করে গেলাম ব্রহ্মপুত্রের একটা ছোট্ট দ্বীপ পিকক আইল্যান্ড। এটিই বিশ্বের ক্ষুদ্রতম নদী দ্বীপ যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এই দ্বীপেরই পাহাড়ি টিলার উপরে আছে উমানন্দর মন্দির। এই মন্দির ১৬৬৪ সালে তৈরি হয়। মন্দিরে দেবী কামাখ্যার ভৈরব শিব উপাস্য দেবতা। উমানন্দ মন্দিরের পাশেই চন্দ্রশেখর মন্দির। এরপর আমরা চললাম আর.জি.বড়ুয়া রোডে চিড়িয়াখানা ও বটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে। এইগুলি দেখেপর আমরা এলাম শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বশিষ্ঠ আশ্রম দেখতে। আশ্রমের পাশে তিনটি পাহাড়ি ঝর্ণা সন্ধ্যা, ললিতা ও কান্তার মিলন ঘটে হয়েছে বশিষ্ঠ গঙ্গা । এখানেই বশিষ্ঠ মুনির তপোবন ছিল। এখানে বশিষ্ঠ মুনি তপস্যা করে শাপমুক্ত হয়েছিলেন। পরের গন্তব্য আমাদের পূর্ব তিরুপতি শ্রী বালাজি মন্দির। গুয়াহাটিতে এই মন্দিরটি বালাজি মন্দির নামেই পরিচিত। দক্ষিণ ভারতের তিরুপতি মন্দিরের আদলে তৈরি এই মন্দির । দুই একর জায়গার ওপর ১৯৯৮ সালে তৈরি করা হয়েছে এই মন্দির। মন্দিরের রং ধবধবে সাদা । ঢুকতেই গনেশের মন্দির এবং মাঝের মূল মন্দির ভগবান বালাজির। দক্ষিণ ভারতে যাকে আমরা ভগবান বালাজি বলি এখানে তাঁকে বলি ভগবান বিষ্ণু। এই বালাজি মন্দিরের উচ্চতা ৭০ ফুট। মন্দিরের সামনে ধ্বজা বাঁধার যে স্তম্ভ বা খুঁটি ‘ফ্লাগ পুল’ আছে তার উচ্চতা ৬০ ফুট। এটি একটি মাত্র শাল গাছের খুঁটি থেকে তৈরি। এটি তামার পাত দিয়ে মোড়া এবং তার উপর পিতলের পালিশ করা। ভগবান বালাজির মূর্তিটি একটি মাত্র পাথরের উপর খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে এবং এই পাথরটির ওজন চার টন। মন্দিরের কাঠের পালিশ করা দরজাগুলি দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই এর শিল্পীরা তৈরি করেছে। মূল বালাজি মন্দিরের ডানদিকে দুর্গার মন্দির। গুয়াহাটি যেহেতু দেবী কামাখ্যার পীঠস্থান তাই কামাখ্যা দেবীকে স্মরণ করে এখানে দেবী দুর্গার মন্দির বানানো হয়েছে। আর মূল বালাজি মন্দিরের বাঁ দিকে মহালক্ষীর অবতার দেবী পদ্মাবতির মন্দির। ভগবান বালাজির বাহন গড়ুর ( Garuda )। মন্দির চত্বরে প্রসাদ কেনার সুব্যবস্থা আছে । নামমাত্র মূল্যে লাড্ডু প্রসাদ পাওয়া যায়। গুয়াহাটি এয়ারপোর্ট থেকে শিলং যেতে গেলে NH-02 এর ওপর Lokhra কাছে এই মন্দির। এয়ারপোর্ট থেকে দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার । গুয়াহাটি শহর থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। বিকেলের দিকে যাওয়া সবথেকে ভালো। তাহলে মন্দির চত্বরটা ভালোভাবে ঘুরতে পারা যায়। আজ আমরা সবশেষে এই বালাজি মন্দির দর্শন করে হোটেলে ফিরে এলাম। আগামী কাল আমাদের গন্তব্য হাজো, মদন কামদেব এবং শুয়ালকুচি।
সকাল বেলায় স্নান ও জলখাবার খেয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে পরলাম হাজোর উদ্দেশ্যে। গুয়াহাটি থেকে হাজোর দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার । সরাইঘাট সেতু পেরিয়ে যেতে হয়। হিন্দু, ইসলাম ও বৌদ্ধ এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই হাজো এক পবিত্র তীর্থস্থান। এখানকার প্রধান দেবালয়টি হয়গ্রীব মাধব মন্দির নামে খ্যাত। নারায়ণনের এক রুপ শ্রীহয়গ্রীব মাধব নামে হিন্দুদের কাছে পূজিত হন। ৩০০ ফুট উঁচুতে ৯৩ ধাপ সিঁড়ি উঠে যেতে হয়। দেবতা বিষ্ণু হয়াসুর দৈতকে বধ করে ঠাঁই নেন এখানে। বৌদ্ধরা এই দেবীমূর্তিকে বুদ্ধদেবের এক অবতার জ্ঞানে পূজো করেন। বৌদ্ধভক্তরা বিশ্বাস করেন এখানেই বুদ্ধদেব নির্বাণ লাভ করেছিলেন। ১৫ শতকের রাজা হাজু থেকেই নাকি হাজো নামকরণ। তবে ভিন্ন মত ও আছে। হাজোর পোয়া মক্কা মসজিদ মুসলমানদের কাছে এক পবিত্র উপাসনাস্থল। দ্বাদশ শতাব্দীতে মুসলিম সাধক পির গিয়াসুদ্দিন আউলিয়া এখানে কিছু দিন বসবাস করেন। তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় এই মসজিদ। মসজিদটি তৈরি করার সময় পির সাহেব মক্কা থেকে এক পোয়া পবিত্র মাটি মসজিদের ভিতে মিশিয়ে দিয়ে ছিলেন। তাই মুসলিম ভক্তদের বিশ্বাস মক্কায় হজ করে যে পুণ্য হয় তার এক চতুর্থাংশ পুণ্য হয় এই মসজিদে এসে নমাজ পড়লে। গরুড়াচল পাহাড়ের উপর এই মসজিদ। সব ধর্মের মানুষের কাছে হাজো এক পবিত্র তীর্থস্থান।
হাজো দেখার পর আমরা চললাম উওর- পূর্বের ” খাজুরাহো ” মদন কামদেব দেখতে। গুয়াহাটি থেকে মদন কামদেব এর দূরত্ব ৪১ কিলোমিটার। সময় লাগে ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট। যেহেতু আমরা হাজোর থেকে গিয়েছিলাম তাই আমাদের সময় লেগেছিল ১ ঘন্টা ৫ মিনিট। দূরত্ব ছিল ৩৫ কিলোমিটার। এটি কামরূপ জেলার দেওয়ান গিরি পাহাড়ের উপর। শাল ও সেগুনে ছাওয়া এক ছোট্ট পাহাড়ি টিলার উপরে কামরূপের খাজুরাহো এই মদন কামদেব। ২৪ টিরও বেশী মন্দিরের কমপ্লেক্স এইখানে। সঠিক জন্ম ইতিহাস এখনো পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হয় ১০ থেকে ১২ শতকে পাল রাজাদের সময়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পাঁচ ভাগে গড়ে উঠেছে এই মদন কামদেব বা পঞ্চরথ। উমা ও মহেশ্বর উপাস্য দেবতা। এছাড়াও দেবতা রয়েছেন চতুর্ভুজ শিব, ছয় মাথার ভৈরব এবং আরো অনেক। এই মন্দির গুলির ধংসের সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায় নি। তবে মনে করা হয় ১৮৯৭ এর ভূমিকম্পের ফলে ধংস হয় এই মদন কামদেব । এরপর অবহেলা ও অনাদরে এখানের অনেক জিনিস লুপ্ত হয়ে গেছে । আসাম বায়ো রিসার্চ সেন্টার বসেছে এই পাহাড়ে । ASI এর উদ্যোগে এই মদন কামদেব প্রথম নজরে আসে ১৯৭০ সালে। এখন এই পুরো এলাকাটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ফেন্সি বাজার- র তত্ত্বাবধানে আছে। মদন কামদেব দেখা সম্পূর্ণ করে আমরা চললাম শুয়ালকুচি। এই শুয়ালকুচি গ্রামে তাঁতিদের বাস। বংশ পরম্পরায় অর্জিত দক্ষতার দ্বারা এখানের তাঁত শিল্পীরা রেশম, মুগা ও পাট দিয়ে তৈরি করছেন অতি সূক্ষ্ম কারুকাজ করা খুবই সুন্দর সুন্দর শাড়ি। চোখের সামনে এইসব কারিগরদের কাজ দেখাও একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা। যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে এখান থেকে কেনাকাটাও করতে পারেন ।শুয়ালকুছি কে এই জন্য আসামের ম্যাঞ্চেস্টার বলা হয় । শুয়ালকুচি থেকে আমরা সরাসরি চলে এলাম গুয়াহাটির হোটেলে। পরদিন সকালে আমাদের পরিকল্পনা পায়ে হেঁটে ও অটোরিকশা করে ফেন্সি বাজার এ কেনাকাটা ও স্থানীয় কয়েকটি মন্দির দেখা।
পরদিন সকালে প্রথমেই আমরা গেলাম উজানবাজারের কাছে নবগ্রহ মন্দির তারপর পানবাজার এলাকায় শুক্লেশ্বর মন্দির। এরপর শহর থেকে কিছুটা দূরে পাণ্ডুনাথের মন্দির এবং সবশেষে ইস্কন মন্দির। গুয়াহাটিতে মন্দির এর সংখ্যা অনেক। সেই কারণ এ গুয়াহাটিকে মন্দিরের শহরও বলা যায়। এরপর কিছু কেনাকাটা করতে আমরা ঘুরলাম পান বাজার, ফ্যান্সি বাজার এবং জি এন বরদলুই রোডের পূর্বশ্রীতে। আজই আমাদের গুয়াহাটি ও কামাখ্যা ভ্রমণের শেষ দিন। আগামী কাল দুপুর ১:১০ এর বিমান ধরে কোলকাতা ফিরতে হবে। হোটেলে ফিরে শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে মনে মনে চিন্তা করছি এই কয়েকদিন গুয়াহাটি, কামাখ্যা ও তার আশেপাশে ঘুরে কি কি দেখলাম এবং বহু অজানা অচেনা মানুষের সাথে মিশে, তাদের কাছ থেকে কেমন ব্যবহার পেলাম এবং কি স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরছি। এইবার গুয়াহাটি ও কামাখ্যা এসে দুটি নতুন জায়গা দেখলাম। পাণ্ডুনাথের মন্দির এবং শুয়ালকুচি। আর দেখলাম পাহাড়ি ছোট ছোট জনপদ, যেখানে দোকানদার দোকান করছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে , আবার কখনো পাহাড়ি নির্জন পথের ধারে কোন এক গাছে অজানা অচেনা পাখির কলরব। আর দেখলাম গুয়াহাটি শহরতলীর ফল বিক্রেতা সেই বৃদ্ধাকে যিনি বয়সের কাছে হার না মেনে এই বয়সেও কাজ করে চলেছেন আবার দেখলাম সরাইঘাট সেতুর আগে এক অল্প বয়সী বধূকে, যিনি ছোট্ট দুটি সন্তানকে নিয়ে শশা বিক্রি করছেন। দাম অনেকটা বেশি লাগছে জেনেও ঐ ছোট্ট শিশু দুটির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারিনি, আর দেখেছি অচেনা বহু মানুষ, যারা অম্লান হেসে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। উওর-পূর্ব ভারত যে বাকি দেশের চেয়ে আলাদা, এখানে না এলে ও এখানের মানুষের সাথে না মেলামেশা না করলে সেটা বোঝা যাবে না। এইসব সহজ সরল মানুষদের অকৃত্রিম ও অমায়িক ব্যবহারের টানেই বার বার আমি উওর- পূর্বে ছুটে যায়। এই সমস্ত সহজ সরল মানুষদের সার্থহীন ভালোবাসায় আমার স্মৃতির মধ্যে বন্দি হয়ে রইল।
এই লেখার মধ্য দিয়ে গুয়াহাটি ও কামাখ্যা দেবী সম্পর্কে কতটা বোঝাতে পেরেছি সেটা আপনারা বিচার করবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here