eaibanglai
Homeএই বাংলায়বাগদী পরিবারের দুর্গাপুজোর রোমাঞ্চকর কাহিনী আজও গায়ে কাঁটা দেয়

বাগদী পরিবারের দুর্গাপুজোর রোমাঞ্চকর কাহিনী আজও গায়ে কাঁটা দেয়

সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:- সামর্থ না থাকায় দেবীর নির্দেশে পোড়া রুটি ও পান্তা ভাত ভোগ দিয়েই শুরু হয়েছিল মাতৃ আরাধনা। প্রায় ২০০ বছর ধরে এখনও চলে আসছে সেই রীতি। দেবী দুর্গা, রাজরাজেশ্বরী আমিষ নিরামিষ নানা ব্যাঞ্জনে পূজিতা হলেও বাঁকুড়া জেলার রাউৎখন্ডের বাগদী পাড়ায় আজও পোড়া রুটি ও পান্তা ভাত ভোগ হিসাবে গ্রহণ করেন। কিন্তু কিভাবে শুরু হল এই পূজা? বাগদী পরিবারের পূর্ব পুরুষের মাতৃদর্শন ও দেবী আরাধনার সেই রোমাঞ্চকর কাহিনী গায়ে কাঁটা দেয় আজও।

জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বাঁকুড়া জেলার জয়পুর থানার রাউৎখন্ড ছিল তৎকালীন বর্ধমান রাজা মাহাতব চাঁদের অধীনে। আর এই রাউৎখণ্ড এলাকা দেখভাল ও খাজনা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় এক বাগদী পরিবার। রাজামশাই ওই বাগদী পরিবারের পদবী দিয়েছিলেন আটপৌরি। সেই থেকে ওই গ্রামের নামও হয়ে যায় আটপৌরি পাড়া। বর্তমানে সেই এলাকা বাগদিপাড়া নামে পরিচিত।

দুশো বছর আগে কোনও এক শারদ প্রাতে ওই বাগদী পরিবারের কর্তা গ্রামের অদূরে এক জলাশয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তিনি তার মাছ ধরার জাল একা একা ঠিক করতে পারছিলেন না। সেই সময় এক অপরূপা সুন্দরী রমণী তার জাল ধরে দিয়ে তাকে সাহায্য় করতে চায়। বাগদী পরিবারের ওই কর্তা আগন্তুক রমণীকে জিজ্ঞাসা করেন তুমি কে মা? উত্তরে রমণী পরিচয় জানাতে না চাইলেও তার সাহায্য় নিতে রাজি হন বাগদী কর্তা। মাছ ধরা শেষে কর্তা বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যোগী হলে ওই রমনী বলেন আমি তোমার সাথে তোমাদের বাড়িতে যাব বাবা। বাগদী পরিবারের ওই কর্তা প্রথমে কিছুতেই রাজি না হলেও রমণীর কাকুতি মিনতিতে অবশেষে রাজি হন। এরপর দুজনে গল্প করতে করতে গ্রামের দিকে রওনা হয়, কিন্তু গ্রামের অদূরে এসে ওই রমনীর গলা শুনতে না পেয়ে পিছনে ফিরে কর্তা দেখেন রমনী অদৃশ্য হয়ে গেছেন। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফেরেন কর্তা। জনশ্রুতি ওই রাতেই দেবী স্বপ্নে চতুর্ভূজা বৈষ্ণবি রূপে দেখা দেন বাগদি পরিবারের কর্তাকে। তিনি তাঁকে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরুর করার নির্দেশ দেন। বাগদি পরিবারের কর্তা মাকে অসহায়তার কথা জানালে দেবী নির্দেশ দেন প্রতিদিন বাড়িতে যে আহার হয় তাই দিয়েই তাঁকে ভোগ নিবেদন করতে। সকালেই এই সংবাদ পৌঁছে যায় বর্ধমান রাজার কানে। তড়িঘড়ি তিনি রাউৎখন্ডে পৌঁছন। রাতারাতি তালপাতার ছাউনি করে শুরু হয় চতুর্ভুজার আরাধনা। যেহেতু অভাবের তাড়নায় ওই বাগদি পরিবারের নিত্যদিনের আহার ছিল পান্তা ভাত আর পোড়া রুটি, মায়ের আদেশ মত তাই ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। তারপর নদী দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০০ টা বছর। এখন দেবীর জন্য তৈরি হয়েছে মন্দির। ভোগেও থাকে নানা উপাদেয় পদ। তবে আজও মায়ের নির্দেশ মতো পোড়া রুটি ও পান্তা ভাত দিয়ে ভোগ নিবেদন করেন বাগদী পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments