সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে অবশেষে বাঁকুড়ার নিজের বাড়িতে ফিরলেন ইউক্রেনে আটকে থাকা সৌমাল্য মুখার্জি। শোনালেন যুদ্ধের মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কীভাবে বেঁচেছিলেন। কীভাবে প্রাণ হাতে নিয়ে হোস্টেলের বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন দেশে ফেরার জন্য।
প্রসঙ্গত বছর দুয়েক আগে ইউক্রেনের খারকিভের একটি ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায় বাঁকুড়ার পরমানন্দ পল্লীর সৌমাল্য মুখার্জি। সেখানে থেকেই চলছিল পড়াশোনা। এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। খারকিভ সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা শুরু করে রুশ সেনা। আর এই যুদ্ধের মধ্যেই বহু ভারতীয় পড়ুয়ার সঙ্গে বাঁকুড়ার সৌমাল্যও আটকে পড়েন। রাশিয়ার লাগাতার বোমা গুলি মিসাইল হামলা থেকে বাঁচতে পড়ুয়াদের হোস্টেলের বেসমেন্টে থাকার নির্দেশ দেয় ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রায় তিনশো পড়ুয়ার সঙ্গে সপ্তাহখানেক কাটানোর পর পরিস্থিতি ক্রশম খারাপ হতে শুরু করে। খাবার ও জলের যোগান কমতে থাকে। সৌমাল্য জানিয়েছেন নোংরা জল ফুটিয়ে সেই জলকেই পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করেতে হয়েছে। সৌমাল্যের দাবি ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস কোনওরকম সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। অবশেষে কয়েকজন বন্ধু মিলে নিজেরাই হোস্টেলের বাঙ্কার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো ১ মার্চ প্রাণ হাতে নিয়ে পায়ে হেঁটেই স্টেশেনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন কয়েকজন বন্ধু মিলে ও সেখান থেকে ট্রেনে করে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দূরে পোলান্ড সীমান্তে পৌঁছন। সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ড থেকে বিমানে করে দিল্লি ও কলকাতা হয়ে অবশেষে বাঁকুড়ায় নিজের বাড়িতে পৌঁছন সৌমাল্য।
সৌমাল্য জানান তারা সাহস করে বেরিয়ে এলেও এখন খারকিভ সহ ইউক্রেনের একাধিক শহরে বহু ভারতীয় পড়ুয়া আটকে রয়েছেন। এদিকে দিন যত যাচ্ছে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। খাদ্য ও পানীয় জলের সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের কাছে আটকে পড়া পড়ুয়াদের ফিরেয়ে আনার ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছেন বাঁকুড়ার এই ডাক্তির পড়ুয়া যুবক।
অন্যদিকে বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সৌমাল্যর বাবা মা। সৌমাল্যর মা সোমা মুখার্জী বলেন, “ছেলে বাড়ি ফিরেছে বলে একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছে অন্যদিকে তেমন যারা এখনও সেদেশে আটকে রয়েছে তাদের জন্য মন খারাপ হচ্ছে। সরকার যেন দ্রুত সকলকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।”