নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ “কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি”। ছোটবেলায় এই ছড়া পড়িনি এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর। তবে যে কুমোরপাড়া নিয়ে এই ছড়া সেই কুমোরপাড়ারও এক অজানা ইতিহাস রয়েছে। প্রত্যেক বছর চৈত্র সংক্রান্তি থেকে গোটা বৈশাখ মাস কুমোরপাড়ায় বন্ধ থাকে মাটির হাঁড়ি, কলসি সহ নানান সামগ্রী তৈরীর কাজ। এই এক মাস কুমোরপাড়ায় কোনও কাজ হয়না। কিন্তু কেন? কারণ প্রাচীন রীতি মেনেই এইসময়ে কুমোরপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয় “চাক পুজো”। কুমোর পাড়ার শিল্পীদের বয়ান অনুযায়ী, সারাবছর কুমোরেরা যে চাকা ঘুরিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করেন সেই চাকার পুজোই হল “চাকপুজো”। তাঁরা জানালেন, বৈচিত্র্যের এই চাক পুজোয় প্রথমে কুমোরের চাকায় কিছুটা কাদামাটি রেখে সেই চাকা এক পাক ঘোরানো হয়, ফলে ওই মাটি অনেকটা শিবলিঙ্গের আকার নেয়। এরপর ওই শিবলিঙ্গটিকেই প্রাচীন রীতি ও রেওয়াজ মেনে পুজো করা হয়। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ বিভিন্ন জেলায় কুমোরপাড়ায় গেলেই এইসময় চাক পুজোর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। কুমোরদের কাছে এই দিন খুবই পবিত্র, তাই তাঁরা প্রত্যেক বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ভক্তি ভরে চাক পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। এই পুজো যেমন তাদের কাছে এক পবিত্র দিন তেমনি সারাবছর কাজের শেষে বিশ্রামের সময়। কারণ, এই চাক পুজোর এক মাস তারা তাদের সমস্ত মৃৎশিল্পের কাজ বন্ধ রাখেন। ফলে সারাবছরের দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা থেকেও তারা মুক্তি পান। পরিবারের সঙ্গে সময় দিয়ে, খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন তারা। বিশিষ্ট শিক্ষক তথা বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী বিশ্বনাথ কুম্ভকারের নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বললেন, বাঁকুড়া সহ বিভিন্ন জেলার কুমোরপাড়ায় এই চাক পুজোর রীতি দীর্ঘদিনের। যে চাকার সাহায্যে বছরের বাকি সময় কুমোরেরা মাটির সামগ্রী বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন বছরের শুরুতে সেই চাকাটিকে পুজো করে নিজেদের সারা বছরের কাজ শুরু করেন তারা।