বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থায় চাকরিঃ লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগপত্র বিক্রি বিষ্ণুপুরে

1593

বিশেষ প্রতিনিধি, বিষ্ণুপুরঃ- বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষেলক্ষ টাকার বিনিময়ে ভূয়ো নিয়োগপত্র বিক্রির অভিযোগ উঠল এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন, কারন ওই অভিযুক্ত ঠিকাদারের সাথে শাসক দলের ঘনঘন দল বদলু এক নেতার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
ওন্দা থানার রামসাগরের এক ঠিকাদার কার্তিক মাজি ২০১৮ সালের অক্টোবর, নভেম্বর মাস থেকে বিষ্ণুপুর মহকুমার কয়েকটি ব্লকের কিছু বেকার যুবকের কাছ থেকে দফায় দফায় কয়েক লক্ষ টাকা হড়প করেছে। চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থায় ঠিকাদারির লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার আছিলাতেও সে হাজার হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে প্রায় আধ ডজন যুবকের কাছ থেকে। বিষ্ণুপুর মহকুমার ওন্দা, পাত্রসায়র ও বিষ্ণুপুর থানায় কার্তিকের নামে আলাদা আলাদা করে অভিযোগ দায়েরও হয়েছে। তবে, এঘটনায় এখনো কার্যতঃ কোনো পদক্ষেপি নেয়নি পুলিশ। অভিযুক্ত কার্তিক বুক ফুলিয়ে শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেনা, অভিযোগকারিদেরকে বারে বারে হুমকিও দিচ্ছে- এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এক অভিযোগকারী রাজু বাগদী বললেন, ” আমাকে যখন তখন হুমকি দিচ্ছে কার্তিক। বলছে- যেখানে খুশি জানা, কেউই আমার কিছু করতে পারবেনা। নেতা, পুলিশ, বিদ্যুৎ কোম্পানীর অফিসার সব আমার পকেটে”। ওন্দা থানার দামোদরবাটি গ্রামের রাজুর কাছ থেকে ৭২,০০০ টাকা আদায় করে কার্তিক। নিজেই স্বাক্ষর করে রাজুর হাতে তুলে দেয় একটি ঠিকা সংস্থার নিয়োগপত্রও। তাতে উল্লেখ রয়েছে- বিষ্ণুপুরের বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ৩৩/১১ কে. ভি. এ. বিদ্যুৎ সরবরাহের রক্ষনাবেক্ষন কাজের জন্য রাজুকে ‘স্কিল্ড’ লেবার হিসাবে নিয়োজিত করা হচ্ছে ২ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে ২ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত। যদিও রাজু প্রশিক্ষিত কর্মী নয়, তাই তাকে মাটি কাটা, খুঁটি পোঁতার কাজেই নিয়োজিত করা হছিল গত ৯ মাস যাবৎ। তবে, নামেই চাকরি। রাজুর দাবি, ” আপ্যয়েন্টমেন্ট লেটার দিল। কাজও শুরু করলাম। একজন সাধারন মুজুরেরই কাজ করতাম। তবে, ৯ মাসে একটি বারও মাইনে পাইনি। টাকা চাইলেই জুটতো ধমক, হুমকি। ঘর থেকে খাবার বেঁধে নিয়ে যেতাম। মুখবুঁজে সব সহ্য করতাম”। একই অভিযোগ পাত্রসায়রের বিকাশ মাজি, বিষ্ণুপুরের মুকেশ লোহারের। বিকাশ পাত্রসায়র থানায় আর মুকেশ বিষ্ণুপুর থানায় কার্তিকের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ দায়ের করেছে। রাজু অভিযোগ করেছে ওন্দা থানায়। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই, ওন্দা থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে জমা দেওয়া এক লিখিত জবানবন্দীতে কার্তিক টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে। গত ১৩ অক্টোবরের ওই স্বীকারোক্তিতে কার্তিক জানায়, ” কালীপূজোর আগের দিন টাকা পরিশোধ করব”। তাতে সে রাজু’র পাশাপাশি ধনঞ্জয় গাঙ্গুঁলির কাছেও ৭২০০০ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে।
এদিকে, টাকা নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বীকারোক্তি দিলেও, ওন্দা থানা এখনো তার বিরুদ্ধে প্রতারনার কেস শুরুই করেনি। থানারই একটি সূত্র জানাচ্ছে, যেহেতু অভিযুক্ত লিখিতভাবে কালীপূজো পর্যন্ত সময় চেয়েছে, পুলিশ তাই ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here