বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতাঃ- ঘোষনাই সার। বছর ঘুরে গেলেও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজ এগোয়নি একচুলও। বিষয়টি নিয়ে ওই ঘোষণার পর থেকে অদ্যাবধি নতুন কোনো কথা শোনা যায়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। মুখ বন্ধ রাজ্যের উপশিক্ষামন্ত্রীরও। গতবছর, ভোটের কথা ভেবে, ট্যুইট করে কলকাতার রাজারহাটে নেতাজীর আজাদহিন্দ ফৌজের নামে একটি স্মৃতিসৌধ এবং নেতাজীর নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যাস্। বিষয়টি থেমে যায় সেইখানেই। এরই মাঝে পার হয়ে গেল ২০২২ এ নেতাজীর জন্মদিন। মুখ্যমন্ত্রী ওই বিষয়ে ট্যুইট করেন ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ এ। ‘কিন্তু, কি হলো তারপর?’-এই প্রশ্নের মুখে মাথা চুলকে এলাকার বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি আমতা আমতা করে বললেন,”এ ব্যাপারে আমি ঠিক জানিনা। আমার সাথে এ নিয়ে কারও কোনো আলোচনাই হয়নি। কারণ, তখন তো আর আমি বিধায়ক ছিলাম না।” তবে, ঠারেঠোরে বিধায়ক বুঝিয়ে দিয়েছেন, গত এক বছরে তার এলাকায় আজাদহিন্দ ফৌজের শহীদ স্মারকের নির্মাণ কাজ তিনি শুরু হতেই দেখেননি। তবে কি বিষয়টির ঘোষণাতেই ইতি? মুখ্যমন্ত্রী শুধু নেতাজী ভক্ত আপামর জনতার জন্য একটি ট্যুইট করেই খালাস? রাজ্য তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তর, পূর্ত দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাজারহাটে এমন কোন স্মৃতি সৌধের জন্য অদ্যাবধি দরপত্র ডাকা হয়নি। তাহলে গোটা বিষয়টি কি দাঁড়ালো?
প্রজাতন্ত্র দিবসে নেতাজী স্মরণে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো নাকচ করে সারাদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তড়িঘড়ি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কায়দায় মোদী দিল্লির রাজপথে ইন্ডিয়া গেটে নেতাজীর ত্রিমাত্রিক আলোর মডেল বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সমালোচনা সমানে চলছে ওই মূর্তিকে নিয়েও।
মোদীর সমালোচনায় মুখর এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও কি তবে নেতাজীকে নিয়ে ছেলেখেলা করলেন না? রাজ্যবাসীর সামনে বড় মুখ করে একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়, স্মৃতিসৌধের ঘোষণাই শুধু নয়, তিনি ঘোষণা করেছিলেন তার সরকার নেতাজীর ১২৫ তম জন্মদিনের আগে থেকেই রাজ্যের ব্লকে ব্লকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু, কোথায় সে সব? মুখ্যমন্ত্রী কি ভুলেই গেছেন তার নিজের ঘোষণা?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে, রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের এক পদস্থ কর্তা এদিন বলেন,”বিগত ১০ বছরে এরাজ্যে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। তবে, সরকারি স্তরে নেতাজীর নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কোনো প্রস্তাব গৃহীত হয়নি এখনো পর্যন্ত।” এরাজ্যে অবশ্য কলকাতার গড়িয়াতেই ১৯৯৮ সালে নেতাজীর নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রায় ২০ বছর ধরে চলছে কেন্দ্রের পরিচালনাধীন নেতাজী সুভাষ ওপেন ইউনিভার্সিটি।