eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুস্থদের পাশে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

দুস্থদের পাশে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, জামশেদপুরঃ– পূণ্য অর্জন করতে কেউ ছুটে যায় তীর্থস্থানে। কেউ বা পবিত্র মকরসংক্রান্তিতে ‘সবতীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার’ এর টানে প্রবল ঠান্ডা বা হাজারো কষ্ট সহ্য করে গঙ্গাসাগরে ডুব দিয়ে নিজের সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেলতে। কিন্তু ওদের কাছে ‘পূণ্য’ শব্দটার কনসেপ্টই আলাদা। ওরা ‘দশভুজা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-র সদস্য এবং মানুষের সেবা করাই ওদের কাছে পরম পূণ্যের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে ওরা এভাবেই পূণ্য করে চলেছে।

মকরসংক্রান্তির পবিত্র দিনে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্যাছে গঙ্গাসাগরে ডুব দিয়ে পূণ্য অর্জন করতে, সারাবছর বা জীবনের পাপ দূর করতে তখন ওরা ক’জন এসেছে জামশেদপুরের দলমা পাহাড়ের কোলে অবস্হিত তুবিয়াবেড়া নামক প্রত্যন্ত গ্রামে। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা আদিবাসী এবং খুবই গরীব ও অসহায়। দু’বেলা ঠিকমত খাবার জোটেনা। পড়নে থাকেনা লজ্জা নিবারণের জন্য ঋতুর উপযুক্ত পোশাক। উৎসব ওদের কাছে আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মত, আলাদা কোনো তাৎপর্য বহন করেনা।

সাতসকালেই কম্বল, শাড়ী, ব্লাউজ, সালোয়ার, সোয়েটার, শীতবস্ত্র, ছোটদের পোশাক, বড়দের পোশাক, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জনের জন্য আয়োজন, নিয়ে ওরা হাজির সংশ্লিষ্ট গ্রামে। ছিল ছোটদের জন্য খাতা ও কিছু পড়াশোনার সামগ্রী এবং সামান্য কিছু খাবার ও ফলমূল। ওদের ‘গাইড’ হিসাবে ছিল স্হানীয় সিংহ দম্পতি শ্যামসুন্দর ও সোমা এবং চিরাগ। গ্রামের মুখিয়া অর্থাৎ আদিবাসী সমাজের প্রধান কয়েকটা চেয়ার ও একটা টেবিল আনিয়ে দিলেন। এভাবেই শুরু হলো সংশ্লিষ্ট সংস্হার ‘সাহায্য শিবির’।

যেহেতু পূর্ব নির্ধারিত তাই খবর পেয়েই একে একে গ্রামের ছেলে থেকে বুড়ো সবাই এসে হাজির হয়। সুশৃঙ্খলভাবে তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সঙ্গে আনা সামগ্রীগুলো। এগুলি পেয়ে একরাশ হাসি ঝড়ে পড়ে সবার মুখে এবং সেই হাসি যেন খুশির বার্তা নিয়ে দলমা পাহাড়ে প্রতিফলিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামটির প্রতিটি আনাচকানাচে। প্রসঙ্গত সংশ্লিষ্ট সংস্হা প্রতিবছর দুটো করে শিবিরের আয়োজন করে থাকে। মাত্র দিন কয়েক আগে সাহায্যের ডালি নিয়ে এভাবেই তারা পৌঁছে গিয়েছিল ক্যানিংয়ের হেরোভাঙা গ্রামে।

যাইহোক, সাহায্য শিবিরের আগে তারা তুবিয়াবেড়া গ্রামের আদিবাসী শিশুদের নিয়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে। প্রবল উৎসাহে ৬৩ জন শিশু অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। নুন্যতম প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনজন অসাধারণ ছবি আঁকে। তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য ছিল যৎসামান্য উপহার। ওরা তাতেই খুশি।

সংশ্লিষ্ট সংস্হার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সুভাশিস সরকার, শ্রাবণী ঘোষ ও নন্দিতা চ্যাটার্জী এবং সেবার টানে এরা গিয়েছিলেন কলকাতা থেকে। জামশেদপুর থেকে ছিলেন শ্যামসুন্দর সিংহ, সোমা সিংহ, চিরাগ পাত্র ও কৃষ্ণা চক্রবর্তী।

‘আমি’ নই এখানে ‘আমরা’ সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ – এইভাবেই শুরু করলেন ‘দশভুজা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ যার মানস কন্যা সেই কৃষ্ণা চক্রবর্তী এবং তিনি বললেন – সাহিত্য পত্রিকার হাত ধরে পথ চলা শুরু করলেও সেবার লক্ষ্যে আমরা এই সংস্হাটি গড়ে তুলেছি। বয়স্কদের আশীর্বাদ ও বাচ্চাদের হাসি – এর থেকে বড় পূণ্যের কাজ তো আর কিছু হতে পারেনা। এভাবেই আমরা সাগরের পূণ্যস্নান করলাম দলমার বুকে। দলের সদস্যদের প্রত্যেকের মুখে ফুটে উঠল একরাশ খুশির হাসি।

কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন কৃষ্ণা দেবী ও সাথীরা। এভাবেই হয়তো আবার তারা পৌঁছে যাবে ভারতের অন্য কোনো গ্রামে। নিজেদের সীমিত সামর্থ্যকে পাথেয় করে অন্যকে খুশী করে নিজেরাও মেতে উঠবেন আনন্দে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments