মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- সকালে দুই ছাত্রীর আত্মহত্যার হুমকি আর সন্ধ্যা গড়াতেই আত্ম হননের হুমকি এক ছাত্রের। এখানকার গোপালপুরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজে এই নিয়ে মঙ্গঁলবার থেকেই ধুন্ধুমার কান্ড।
বুধবার ভোর রাতে সোমনাথ পান্ডা নামে কম্পুটার সায়েন্স টেকনোলজির প্রথম বর্ষের ছাত্রটিকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, “তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়, নিয়ন্ত্রনেই আছে। তাকে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সে বেশ কিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিয়েছিল”।

সে যে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চলেছে – এ কথা সোমনাথ রাত্রী ১২.২০ নাগাদ সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। আপলোড করে কিছু টেক্সট ও একটি প্রায় আড়াই মিনিটের ভিডিও। তাতে সে কাতরভাবে জানায়, “কলেজ কর্তৃপক্ষ যে ভাবে অপমান করছে আর হুমকি দিচ্ছে, তাতে আমার পক্ষে আর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। জয়ন্ত বাবুর অনেক টাকা আছে, আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে, কলেজ আমাকে এ কথা বলে দিয়েছে। আমি লোকেরা ভালো করার চেষ্টা করলাম আর….. আজ আমার সব শেষ করে দিয়েছে”। রাত্রী ১২.০৪ টা থেকে ১২.৫৩ টা’র মধ্যে সে ছত্রিশটি পোস্ট করে। তাতে সে দু পাতার একটি স্যইসাইড নোট সহ কলেজের সহপাঠী তিন বন্ধুর কনট্যাক্ট ফোন নম্বর ও আপলোড করে। এ সব সে করে ওই গোপালপুরেই তার মেস বাড়ি থেকে। এরপরই চাঞ্চল্য ছড়ায়। তার আত্মহত্যার হুমকি, স্যইসাইড নোট পৌঁছে যায় দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের কাছে। তার সহপাঠীদের ফোন পেয়ে অসুস্থ ছাত্রটিকে উদ্ধার করতে ওই মেসে পৌঁছে যান তার পরিবারের লোকেরাও। দ্রুত খবর যায় তার কলেজেও। বুধবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছান কলেজের মুখ্য কার্যনির্বাহী মদন সরকার। তিনি জানান, “আমাদের চেয়ারম্যান জয়ন্ত চক্রবর্তী নিজের চিকিৎসার জন্য হায়দ্রাবাদে আছেন কলেজের অধ্যক্ষ রয়েছেন মিজোরামে”। কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন সোমনাথকে ডেকে তীব্র অপমান করায় ছাত্রটি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, সোস্যাল মিডিয়ায় এই পোস্ট প্রসঙ্গে মডোণ বলেন, “এ সব আজগুবি কথা। আমরা জেনেছি ছেলেটি এমনিতেই মানসিক ভাবে অসুস্থ। তার চিকিৎসাও চলছে বলে ওর পরিবারই বলেছে”। তিনি আরো বলেন, “ওকে কোনো অপমানই করা হয় নি। উল্টে ওই ছাত্রটিই কোনো কিছি ভাল করে না বুঝে সোস্যাল মিডিয়ায় কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করার মতো কাজ করেছে। তাই গতকাল ওকে একটু সচেতন করা হয়েছিল মাত্র”।
ঘটনার সূত্রপাত প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রী রিতু সিং ও বৈশাখী রায় কে প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় বসতে না দেওয়াকে ঘিরে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাদের ৩৫ শতাংশ’র নিচে নম্বর থাকায় রাজ্য সরকারের পলিটেকনিক শিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করেনি। এতে হতাশ হয়ে রিতু, বৈশাখী আত্মহত্যার হুমকি দের কলেজ ক্যাম্পাসেই। পরে, কলেজের চেয়ারম্যান জয়ন্ত চক্রবর্তী তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আই.টি.আই. পড়িয়ে পলটেকনিক পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে।
এ দিকে, কলেজের প্রশাসনিক কর্তারা – ‘কি করে কলেজের ভেতরের খবর বাইরে গেল’ এই তদন্ত শুরু করেন। জানা যায় – সোমনাথই ওই দুই ছাত্রীর ভবিষ্যতের বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। অভিযোগ, সোমনাথকে এর পরই ডেকে পাঠিয়ে কড়া ধমক দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম বর্ষের ছাত্রটিকে নাকি এ-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয় – ‘জয়ন্ত বাবুর অনেক টাকা। তোমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে!!’ – এতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহননের পথে হাঁটে ছাত্রটি। দেখুন ভিডিও-