eaibanglai
Homeএই বাংলায়ডি.এস.পি ঠিকা শ্রমিকের লাইনে দুর্গাপুরের শিল্পপতি দেবরাজ

ডি.এস.পি ঠিকা শ্রমিকের লাইনে দুর্গাপুরের শিল্পপতি দেবরাজ

কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, তাও ঠিকা শ্রমিকের লাইনেই দুর্গাপুরের শিল্পপতি, অভিষেকের আগমনের মুখে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির ‘মধু’ এমন – দলের উজ্জ্বল তারকা নেতা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় শহরে প্রবেশের ঠিক আগের দিনই ভরপুর এক শিল্পপতি, ব্যবসায়ী বিশেষ জাদুকাঠির ছোঁয়ায় হয়ে গেলেন ‘সখের’ ঠিকা মজুর, আর এই নিয়েই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা থেকে শুরু করে ইস্পাত নগরী জুড়ে সোমবারের লন্ডভণ্ড করা ঝড়ের পরেই উঠেছে না-থামা বিতর্কের আরেক ঝড়।

শাসক তৃনমূল কংগ্রেসের একাংশ তো বটেই, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও স্পষ্ট কথা, “অভিষেক বন্দোপাধ্যায় মুখে দল থেকে বেনোজল দুর করার কথা বলছেন বটে, কিন্তু, জেলা সফরে তার চারপাশে ঘুরঘুর করা কিছু মৌমাছি যে তার নাম ব্যবহার করে কোথায় কোথায় চাক বাঁধছে, সেইসব চাকে কোন্ কোন্ গুবরে পোকা খোলস বদলে ‘সাধু’ সেজে মধু খেতে ভিড় জমাচ্ছে, তার হদিশ কি তিনি রাখেন, না তার নিয়োজিত ‘আইপ্যাক’ সংস্থা রাখে?

শহর দুর্গাপুরের দেবরাজ চক্রবর্তী এমনই একজন শিল্পপতি – ব্যবসায়ী, যিনি সোমবার দুপুরের পর রাজ্যের শ্রম দপ্তরের নথিতে হয়ে গেলেন মাসিক চোদ্দ হাজার টাকার এক ঠিকা মজুর। এদিন দুপুরেই রাষ্ট্রায়ত্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একজন বৈধ ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তার নাম নথিকরণের পাশাপাশি সরকারি নিয়ম মেনে তার ‘সেফটি টেস্ট’ও হয়ে গেল যথাযথ ভাবে। আর এসবই হল রাজ্যের শাসক তৃনমূল কংগ্রেসের অনুমোদিত আই এন টি টি ইউ সি’র পক্ষ থেকে দেবরাজকে তাদের মনোনীত সদস্য হিসেবে তার নাম প্রস্তাবের পর। এই দেবরাজ আবার পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমূল কংগ্রেসের সদ্য ঘোষিত জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর একজন পারশচর বলে এলাকায় পরিচিত। একসময়ের সিপিএম ক্যাডার দেবরাজ ২০১১র পর পিঠ বাঁচাতে তৃনমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় আসেন। ২০২১ এ হঠাত্ করে বিজেপিতে যোগ দেন। মাত্র একমাস আগেই নাকি নরেন্দ্রনাথের হাতধরে তার ফের তৃনমূলে প্রত্যাবর্তন। সেই দেবরাজই অভিষেকের দুর্গাপুর সফরের আগের দিনই হয়ে গেলেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তৃনমূল মনোনীত ঠিকা শ্রমিক।

কে এই দেবরাজ ?

বাম আমলে তিনজন অংশীদারকে সাথে নিয়ে দুর্গাপুরের উত্তর প্রান্তে গজিয়ে ওঠা হেতেডোবা শিল্পতালুকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে একটি লোহা কারখানা স্থাপন করেন ২০০৫ এ। তিনিই আবার অন্য তিনজন ডিরেক্টরকে সাথে নিয়ে একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা খোলেন ২০১০ এ। ভারত সরকারের কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেবরাজ (ডি আই এন নং: ০১১৫৭৯৮৪) বর্তমানে দুটি সংস্থারই সক্রিয় ডিরেক্টর। দেবাঞ্জনা হার্ডকোক নামের সংস্থাটিতে দেবরাজের সাথে মালিকানায় রয়েছেন অন্ডালের এক বিজেপি নেতা সরোজ মন্ডল।

মজার ব্যাপার হলো, সোমবার সেই দেবরাজের ঠিকা শ্রমিক হিসেবে গেট পাশের পিন (নং – ৪৮১৩৭) ইস্যু করেছে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির এক আধিকারিক বলেন, “তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওনার নাম বৈধ শ্রমিক হিসেবে পাঠানোর পরই আমরা ওনার জন্য গেট পাশ ইস্যুর প্রসেস শুরু করি।”

দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়ন সবসময়ই একটি লোভনীয় মৌচাক। গতমাসেই কোটি কোটি টাকা তছরুপ, লুঠের অভিযোগে এই ইউনিয়নের দুই বরিষ্ঠ নেতাকে বহিষ্কার করেছে তৃনমূল কংগ্রেস। এদিকে, মাস গড়াতেই ফের দুর্নীতির গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। তবে কি কোটি কোটি টাকার সহজ উপার্জনের লোভেই এবার সটান ঠিকা শ্রমিকের ভুখা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লেন শিল্পপতি এই দেবরাজ?

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই এবার হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন তৃনমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা। দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ অভিষেকের আগমনের ব্যস্ততার মাঝেই এদিন সন্ধ্যায় বলেন, “কি করে দেবরাজ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক হলেন, তা আমার জানা নেই। ইউনিয়নের লোকেরাই বলতে পারবে। দেখি, বিষয়টি আমি খোঁজ নেব।” এদিকে, দুর্গাপুর ইস্পাতে তৃনমূল কংগ্রেসের ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ দীপঙ্কর লাহা এদিন বলেন, “এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি কেউ নই। যা বলার সিনিয়রেরাই বলবেন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments