শিল্পশহর জুড়ে রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি? বিপদ বাড়ছে আমজনতার

1537

বর্তমান যুগে রান্নার গ্যাস নেই এমন বাড়ির সংখ্যা দেশে নেই বললেই চলে । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গৃহিনীদের পুরনো দিনের উনুন, কয়লা, গুল, শুকনো কাঠ ইত্যাদি দিয়ে রান্নার দিন প্রায় শেষের মুখে । যদিও আজও মফস্বল কিংবা গ্রামগুলিতে উনুন, কয়লা, গুল, শুকনো কাঠ ইত্যাদির দেখা পাওয়া যায় । কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশজুড়ে রান্নার গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভর্তুকি এবং কম দামে এলপিজি গ্যাসের নতুন সংযোগ বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার ফলে আজ মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে দারিদ্র সীমার নিচে যারা বসবাস করেন তাদের বাড়িতে রান্নার গ্যাস পৌঁছে গেছে । তবে সব কিছুরই যেমন সুফল রয়েছে তেমনি কুফলও রয়েছে। বর্তমান ভারতের নিত্যদিন বেড়ে চলা খনিজ সম্পদের চাহিদা যেমন এক বড় সমস্যা তেমনি তার সঙ্গে একশ্রেণীর মানুষের নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি তথা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের লোভ সমগ্র দেশবাসীর কাছে আজ এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমনিতেই দিনের পর দিন খনিজ সম্পদের ঘাটতি বেড়ে চলায় যেমন সমস্যা বেড়েছে তেমনি বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে সঙ্গে গৃহস্থের ঘরে প্রয়োজনীয় এই রান্নার গ্যাস নিয়ে দুর্নীতি ও দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। কি সেই দুর্নীতি? আজ আমাদের দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজার গুলি থেকে শুরু করে রাজ্যের যেকোনো প্রান্তে একটু চোখ ফেরালেই নজরে পড়বে দু কেজি, ৫ কেজি সাইজের ছোট ছোট সিলিন্ডার দোকানের সামনে সাজিয়ে রেখে তা বিক্রি করা হচ্ছে। বাইরে থেকে দেখলে এর সঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু নজরে না পড়লেও একটু ভেতরে গেলে যে দৃশ্য নজরে পড়বে তা সত্যিই ভয়াবহ। কারণ এই ছোট ছোট সিলিন্ডারগুলি কোন সংস্থার কাছ থেকে বৈধ উপায়ে কেনা হচ্ছে না। তাহলে কিভাবে ভর্তি করা হচ্ছে সিলিন্ডারগুলি? যে সমস্ত দোকানদাররা বা ব্যবসায়ীরা ২ কেজি কিংবা ৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি করেন তারা বাজার থেকে গৃহস্থের কাজে ব্যবহৃত ১৫ কেজি এবং ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত ১৯ কেজি বা ২১ কেজি সিলিন্ডার স্বাভাবিক কিনে নিয়ে আসছেন। এরপর দোকানের ভেতরে কিংবা কোন গুদামে সেই সিলিন্ডার থেকে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গ্যাস বের করে ছোট ছোট সিলিন্ডার গুলিতে ভর্তি করা হচ্ছে। শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবে বাস্তবে এই কার্যকলাপ যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার আন্দাজ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। কারণ যেভাবে ঘরোয়া এবং বিপদজনক পদ্ধতিতে এই সিলিন্ডার গুলি থেকে গ্যাস বের করা হচ্ছে তার ফলে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয় পুলিশ বা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিতে এই সমস্ত সিলিন্ডার গুলি ভর্তি করা হচ্ছে হয় কোন জনবহুল এলাকায় নয়তো ঘিঞ্জি বাজারের ভেতরে কোনও গুদাম ঘরে। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন কোন ক্রেতা যখন তার ছোট খালি সিলিন্ডার ভর্তি করার জন্য দোকানে নিয়ে যান তখন দোকানদার তাকে দোকানে বসতে বলেই খালি সিলিন্ডার নিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। আধঘন্টা পর সেই দোকানদার ফের হাজির হন ভর্তি সিলিন্ডার নিয়ে। কিন্তু কোনভাবেই ক্রেতাকে সিলিন্ডার ভর্তি করার স্থানে নিয়ে যান না তারা। দিনের পর দিন এই ছোট ছোট সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়তে থাকায় এই বেআইনি ব্যবসা এখন শহরের অলিতে গলিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অন্যদিকে দু কেজি বা ৫ কেজি সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করে মুনাফা বেশি হওয়ায় এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমান বাজারে গৃহস্থকে ১৫ কেজির সিলিন্ডার পিছু খরচ করতে হয় ৮০০ টাকা মত আর বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলিতে যে সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয় তার দাম সিলিন্ডার পিছু বারোশো টাকা করে পড়ে। কিন্তু এই সমস্ত দোকানগুলিতে ছোট ছোট সিলিন্ডারে ভর্তি করতে কেজি পিছু গ্যাসের দাম পড়ে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তাহলে হিসাব করে দেখুন, একটা ১৫ কেজি সিলিন্ডার থেকে এই সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা ঠিক কতটা মুনাফা অর্জন করেছেন। তাই দিনের পর দিন এই রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি বেড়েই চলেছে। এখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে এই কালোবাজারি ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসন কেন কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে না? বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাজারে একাধিকবার এই সমস্ত বেআইনি রান্নার গ্যাস কালোবাজারি দোকান গুলিতে পুলিশি অভিযান করা হলেও প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না এই কালোবাজারি। যখনই কোন বাজারে পুলিশি অভিযান হচ্ছে তখন কয়েক দিনের জন্য এই বেআইনি ব্যবসা বন্ধ থাকলেও ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে একদিকে যেমন চড়া দামে গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ তেমনি বিপদজনক উপায় এক সিলিন্ডার থেকে আরেক সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করার সময় বহুবার দুর্ঘটনাও ঘটছে এবং হতাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই এই বেআইনি ব্যবসা কে বন্ধ করতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের সক্রিয় হওয়ার সময় এসে গেছে। কারণ নির্দিষ্ট ব্যবধানে আচমকা অভিযান এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ না গ্রহণ করলে অদূর ভবিষ্যতে এর থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে।