পুলিশ “চামচাবাজি” করছে, প্রকাশ্যে বললেন জীতেন্দ্র তিওয়ারি, দেখুন ভিডিও

6161

নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ এবার রাজ্যের অন্যান্য জেলার রেশ দুর্গাপুরে। ভোট পরবর্তী হিংসার আঁচ ছড়ালো দুর্গাপুরের স্টিল টাউনশিপের হস্টেল অ্যাভিনিউ এলাকায়। তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি থেকে শুরু করে টিভি, আসবাবপত্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। আর এই খবর জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান সদ্য তৃণমূল জেলা সভাপতি পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই জেলা সভাপতির হুঁশিয়ারি, তৃণমূল পার্টি অফিস ভাঙার ঘটনা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে গর্জে ওঠেন তিনি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা। সংঘর্ষ এড়াতে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। সেখানেই পুলিশ আধিকারিকদের প্রকাশ্যে হুমকির সুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুর্গাপুর থানার আধিকারিকদের বলতে শোনা যায়, “বহুত চামচাবাজি হয়েছে, এক্ষুনি ব্যবস্থা নিন নাহলে আমি ব্যবস্থা নেব, আর নাহলে আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব বিজেপির সব পার্টি অফিস। হলও তাই। দেখুন সেই ভিডিও।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গাপুরের বেশ কয়েকটি বিজেপি সমর্থিত ক্লাব এবং পার্টি অফিসকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। স্বভাবতই দুর্গাপুরের বুকে এহেন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত ভোট পরবর্তী দুই রাজনৈতিক দলের এহেন রেষারেষি মোটেই কাম্য নয়, পাশাপাশি সদ্য জেলা সভাপতি পদ প্রাপ্ত এবং আসানসোলের মহানাগরিক জীতেন্দ্র তিওয়ারির মুখ থেকে কর্তব্যরত উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে এইধরনের মন্তব্যও কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। জীতেন্দ্র তিওয়ারির এইধরনের মন্তব্যে স্বভাবতই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নিয়ন্ত্রণাধীনে কর্মরত পুলিশ প্রশাসনের একাংশ। তাদের বক্তব্য, দুর্গাপুর শহরের মানুষ রুচিশীল, শান্তিপ্রিয়, সংস্কৃতি প্রিয় তাই কোনও উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক দুর্গাপুরে বদলি হয়ে এলে দুর্গাপুরের মানসিকতার সঙ্গে নিজেদের এক করে নিতে সচেষ্ট হন। কিন্তু সোমবার রাতের ঘটনা দুর্গাপুর পুলিশ প্রশাসনের মন শাসকদলের নেতা-নেতৃত্বদের এহেন ব্যবহার ও রাওডি আচরণে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ। আজ পর্যন্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও নেতা-নেতৃত্বকে পর্যন্ত দুর্গাপুর পুলিশের বিরুদ্ধে এহেন কুরুচিকর মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কেন এই বেপরোয়া আচরণ? তাহলে কী লোকসভা ভোটের ফলাফলের জেরে মতিভ্রম ঘটেছে শাসকদলের তাবড় তাবড় নেতা-নেতৃত্বদের? ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকারের একজন সাংবিধানিক পদে থাকা এক ব্যক্তির মুখ থেকে রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এহেন আচরণ ও মন্তব্য কী মানানসই? এর আগেও দুর্গাপুরবাসী দুর্গাপুরের বুকে পৌরসভা নির্বাচনে এইধরনের ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন এবং তখনও শিল্পশহরবাসী চুপ করে থেকে সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভোটাধিকারের মাধ্যমে। রাত পার হতেই বিজেপির শতাধিক কর্মীদের নিয়ে একটি মিছিল করে ডেপুটেশন দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানায়। সেখানে বিজেপি নেতা লক্ষণ ঘড়ুই জানান, ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ ঘটনা নিয়ে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর পশ্চিম বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপির বিজয়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবেন। তাঁর অভিযোগ, আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি ও তাঁর দলবলের নেতৃত্বে যে ঘৃন্য হামলা চালানো হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির তরফে দুর্গাপুর থানায় স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিজেপি নেতা লক্ষণ ঘড়ুই।