eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ হাসপাতালের মানবিক মুখ দেখলো শহরবাসী

দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ হাসপাতালের মানবিক মুখ দেখলো শহরবাসী

নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ বেসরকারী হাসপাতালের নাম শুনলেই আজ সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তার কারণ একটাই, ঝাঁ চকচকে হাসপাতালগুলিতে প্রিয়জনের হোক কিংবা নিজস্ব, চিকিৎসা করানোর লাগামছাড়া খরচ। তারওপরে কোনও রোগী ও তার পরিবারগুলি যখন হাসপাতালের বিশাল পরিমাণ বিল মেটাতে না পারেন তখন হাসপাতাল কতৃপক্ষের বেপরোয়া এবং অমানবিক ব্যবহার বর্তমান দিনে বিভিন্ন প্রান্তের বেসরকারী হাসপাতালগুলির নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যেই বেসরকারী হাসপাতাল হিসেবে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো দুর্গাপুরের বিধাননগরে অবস্থিত বিবেকানন্দ হাসপাতাল। ঘটনার সূত্রপাত, ২র জুলাই। দুর্গাপুরের ডিটিপিএস মায়াবাজার এলাকার প্রবীন চিত্র সাংবাদিক নির্মল মজুমদার তাঁর গুরুতর অসুস্থ স্ত্রী সবিতা মজুমদারকে বিবেকানন্দ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বহুদিন ধরেই কিডনির রোগে ভুগছিলেন তিনি। বিবেকানন্দ হাসপাতালে ভর্তি করার পরেও সবিতা দেবীর শারীরিক অবস্থার ক্রমে অবনতি ঘটতে থাকলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে রাখা সত্ত্বেও সবিতা দেবীর শারীরিক অবস্থার কোনওরকম উন্নতি না হলে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের সদস্যরা। একদিকে প্রিয়জনের দুরারোগ্য রোগ এবং অন্যদিকে বেসরকারী হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রাখার বিশাল খরচ বহন করতে অক্ষম ওই পরিবারের তখন দিশেহারা অবস্থা। পরিবারের তরফে হাসপাতালের তরফে মোটা টাকা বিল ধরিয়ে দেওয়া হলেও সেই বিল দেওয়ার মতো আর্থিক পরিস্থিতি ওই পরিবারের ছিল না। তাও তারা পারিবারিক বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকা জোগাড় করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। এরপর আর তাদের কাছে হাসপাতালের বকেয়া বিল মেটানোর কোনও পথ না থাকায় তারা স্থির করেন রোগীকে অন্যত্র কোনও সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুর্গাপুরে অবস্থিত একটি মাত্র সরকারী হাসপাতালেও কোনও বেড না থাকায় কোনও সুরাহা করতে পারেন নি তারা। তখন এক পারিবারিক বন্ধু সাহায্য মারফৎ তারা দুর্গাপুরের ইস্পাত হাসপাতালে যোগাযোগ করে একটি ICU বেডের ব্যবস্থা করেন। এতসবের পরেও একটাই চিন্তা তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কী করে তারা বিবেকানন্দ হাসপাতালের এই পাহাড় প্রমাণ বকেয়া বিল মেটাবেন? ও রোগীকে স্থানান্তরিত করবেন। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর কোনও রাস্তা না পাওয়ায় তারা বিবেকানন্দ হাসপাতালের মালিক শ্রী সুজিত কুমার দত্ত মহাশয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন তার অফিসে। রোগীর পরিজনদের কাছ থেকে সবকিছু শোনার পর ভারাক্রান্ত সুজিত বাবু জানান, হাসপাতালের যে বিল দেওয়া হয় তার মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ-পত্র ও ভেন্টিলেশন মেশিনের খরচ যোগ করা থাকে। শুধুমাত্র বেড চার্জটাই হাসপাতালের নিজস্ব। তাহলেও রোগীর আত্মীয়দের করুন অবস্থার কথা শুনে ও রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে তিনি এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। নিজের ব্যক্তিগত জমানো পুঁজি থেকে তিনি হাসপাতালের বকেয়া বিলটিই নিজে থেকে মিটিয়ে দেন এবং রোগীর পরিজনদেরকে এও জানান, প্রয়োজনে তারা এই হাসপাতালেই রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখতে পারেন। কিন্তু রোগীর পরিজনরা বিবেকানন্দ হাসপাতালের মালিকের এহেন মানবিক ব্যবহার দেখার পর তারা হাতজোড় করে জানান আর তারা তাঁর উপরে বোঝা বাড়াতে চান না, তাই তারা রোগীকে নিয়ে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালের দিকে রওনা হন। হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় শুধু অশ্রু জলের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে হাসপাতালের মালিক সুজিত কুমার দত্তের পরিবার ও তাঁর হাসপাতালের দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করেন তারা। রোগীর পরিজনদের বক্তব্য অনুসারে, এই রকম ব্যবহার যদি দুর্গাপুরের সব বেসরকারি হাসপাতালের রোগীরা পেতেন তাহলে হয়তো অনেক জীবনই বেঁচে যেত। শুক্রবার ভোর ৫টা ১৫ নাগাদ কঠিন লড়াইয়ের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সবিতা দেবী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪০ বছর। খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতাল চত্বরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দুর্গাপুরের চিত্রগ্রাহক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের কর্মকর্তারা ফুল-মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান হাসপাতালের সামনে এবং তারা সবসময় পরিবারের পাশে থাকবেন সেই অঙ্গীকারও করেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের একমাত্র কারণ হল, বিবেকানন্দ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চ্যানেল এই বাংলায়-র পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানায় এহেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য ও সাধারণ জনমানসে সুপার-স্পেশালটি হাসপাতাল নিয়ে মানুষের মনে যে বিরূপ ধারনা জন্ম নিয়েছে সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিল দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ হাসপাতাল। চ্যানেল এই বাংলায় আশা রাখে শ্রী সুজিত কুমার দত্তের মতোই যেন বাকি সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা তাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের ও তাদের পরিজনদের সাথে এহেন মানবিক ব্যবহার ও সহযোগিতা ভবিষ্যতে করবেন এবং দৃষ্টান্ত তৈরী করবেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments