সঙ্গীতা চৌধুরী, বহরমপুরঃ- ঈশ্বরের দেওয়া সবথেকে বড় উপহার হলো সন্তান। সন্তানের চাইতে বড়-একজন মানুষের জীবনে আর কিছু হয়না। সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য একজন মা কত কষ্ট ভোগ করেন। সন্তানকে লালন করার জন্য একজন পিতা কত ত্যাগ স্বীকার করেন। তবুও প্রতিটি পিতা-মাতার কাছে সন্তান বড় আদরের হয়। কথায় বলে কুসন্তান যদি বা হয় কুমাতা কখনো নয়।একজন পিতার ক্ষেত্রেও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। আপনি কী জানেন এই পৃথিবীতে সন্তান কয় প্রকার হয়? অথবা সন্তান কতরূপে জন্ম নেয়? আপনি কি জানেন আপনারই পূর্বকৃত কর্ম আপনার সন্তানের চরিত্রকে নির্ধারণ করে থাকে।
প্রায়শই দেখে থাকবেন কোন বাবা-মা কে ছোট থেকে সন্তানের জন্য এতটুকুও কষ্ট সহ্য করতে হয় না অথচ তাদের সন্তান দেখার মত হয়। আবার কিছু কিছু বাবা-মা আজীবন কষ্ট ভোগ করেন তাদের সন্তানের জন্যই। তবুও তাদের সন্তান ভবিষ্যতে তাদের যন্ত্রণা ই দিয়ে থাকেন। আবার অনেক সন্তান এমন হয় যারা বাবা-মায়ের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে এরা না বাবা মাকে সুখ দেয়, না দুঃখ।এরা যেমন বাবা মার দুঃখের কারণ হয় না ঠিক তেমনি বাবা মার কোন স্বপ্নকেও পূরণ করে না- এমনটা কেন হয় জানেন কী? শাস্ত্রে বলে সন্তান তিন রকমের হয়। এই তিন প্রকার হলো শত্রু, মিত্র আর উদাসীন।
শত্রুভাবাপন্ন সন্তান – আপনি পূর্বজন্মে কারোর কাছে ঋণ করেছিলেন কিন্তু মৃত্যুর আগে সেই ঋণ আপনি পরিশোধ করতে পারেন নি অথবা কারোর অর্থ আপনি আত্মসাৎ করেছেন তখন পরজন্মে ওই ঋণকারী পুত্র হয়ে জন্ম নেয়।এই সন্তানরাই বড় হয়ে বাপ মার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয় এবং বিবাহের পর বাবা মাকে পর করে দেয় ও নানাভাবে কষ্ট দেয়। এমনকি মা-বাবার মৃত্যুর পরও তাদের শ্রাদ্ধশান্তি টুকুও ভালোমতো করে না।
মিত্রভাবাপন্ন সন্তান-এরা ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করে। বাবা-মা কে ভালোবাসে ও বাবা মায়ের মঙ্গল চিন্তা করে। বাবা-মার মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধশান্তি তর্পণ তীর্থ দান ধ্যান ইত্যাদি করে থাকে।বলা হয়ে থাকে যে পূর্বজন্মে আপনি যদি কারোর উপকার করে থাকেন এবং সেই মানুষটি যদি আপনার উপকারের শোধ করে যেতে না পারে তাহলে পরজন্মে সে আপনার উপকার শোধ করতে আপনার সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
উদাসীন সন্তান-এই সন্তানরা সর্বদা উদাসীন ভাবে জীবন যাপন করে। এরা যেমন কিছু দেয় না তেমনি কিছু নেয় ও না। এরা বাবা মাকে যেমন সুখ দেবার চেষ্টা করে না তেমনি দুঃখ দেবার চেষ্টাও করে না। শাস্ত্রে বলা হয়ে থাকে যে যদি কোন ব্যক্তি কোন সাধুর খুব সেবা করে থাকেন এবং মৃত্যুকালে কোন কারনে সাধুবাবার ওই ব্যক্তিকে যদি মনে পড়ে যায় তখন সাধুবাবা মৃত্যুর পর ওই ব্যক্তির ঘরে জন্মগ্রহণ করে। এবং এই রকম সন্তান উদাসীনভাবে জন্মগ্রহণ করে। তারা না বাবা-মার সুখের কারণ হয় না বাবা-মার দুঃখের কারণ হয়। সংসারে সন্তান এই তিন প্রকার হয়ে থাকে এবং আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়ে থাকে যে আমাদের পূর্ব কর্মফলের কারণে আমাদের সন্তানের প্রকৃতি অনেকাংশে নির্ভর করে।