সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ- মামুলি ড্রাইভার! তিন মাসের আগাম মাইনের জন্য সে-ই কিনা লাঠিপেটা করে খুন করল বাড়ীর মালকিন কে?
সোমবার দুপুরে, বর্ধমান থানার অল্প দুরের এই ঘটনায় বিস্তর চাঞ্চল্য ডাক্তার-মহল থেকে সাধারন মানুষের মধ্যে। ঘটনার আকস্মিকতা, হিংস্রতায় হতবাক সকলেই। টানা ছাব্বিশ বছর ধরে চাকরি করা বিশ্বস্ত ড্রাইভার তপন দাস আচমকা কেন এমনটা করল? নিছক মাইনে না পাওয়া নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো গভীর রহস্য- এই চর্চা মঙ্গঁলবার সারা বর্ধমান জুড়েই। যদিও হাজারো প্রশ্নের এখনো অব্দি কোনো সদুত্তর পায়নি তদন্তকারি পুলিশও। তদন্ত তাই অথৈ জলে। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ বর্ধমান শহরের খোসবাগান ডাক্তার পাড়ায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। কারন, খোসবাগানে, থানার পিছনেই বসবাসকারী ডাঃ সুব্রত নাগের প্রাসা দোপম চারতলা বাড়ীতে তখন চলছে ড্রাইভারের তান্ডব। বাড়ির ছাদে উঠে চিৎকার করে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাহায্য চেয়ে হাঁক দিচ্ছেন ডাঃ নাগের সর্বক্ষনের গৃহ পরিচারিকা জবা প্রামানিক। বাড়ির প্রধান ফটক ভেতর থেকে বন্ধ। ভেতরে ডাঃ নাগ আর তার স্ত্রী মৌসুমীকে কুকুর – তাড়ানো লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে তপন। ঠিক সেই সময়ই বাড়ীর মালি কোনোক্রমে দরজা খুলে রাস্তায় আসে। বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় ঘরে ঢোকার মূল দরজা। উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপতে থাকা মালি লোকজনকে জানায় বাড়ীর ভেতরের তান্ডবের কথা। দ্রুত পৌছায় পুলিশও।
কিন্তু, ততক্ষনে তপনের মুহুমুহু লাঠির ঘা’ এ ধরাশায়ী ডাঃ নাগ, তার স্ত্রী মৌসুমী আর ডাঃ নাগের সেবিকা ফিরোজা মল্লিক।
ডাঃ নাগ, মৌসুমী আর ফিরোজা- তিনজনকেই দ্রুত স্থানান্তরিত করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মৌসুমীকে মৃত বলে ঘোষনা করা হয়। তবে, ডাঃ নাগেরও আঘাত তেমন গুরুতর নয় বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকেই অভিযুক্ত ড্রাইভার তপনকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ডাঃ নাগের ছেলে আমেরিকায় কর্মরত। পরিচারিকা জবা’র বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ। সেই বয়ানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর আরেকটি তথ্য- দুর্গাপূজোর মুখে, এভাবেই অগ্রিম টাকা চেয়ে, না পেয়ে মারমুখি হয়ে ওঠে তপন। সেদিন সে মৌসুমীর গলাও চেপে ধরেছিল ডাঃ নাগের সামনেই। জবা বলেন,” জোর কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। তখনই ম্যাডামের গায়ে হাত দেয় তপন। গলা টিপে ধরে”। প্রশ্ন হচ্ছে, এতবড় ঔদ্ধত্বের পরও তাকে কেনো কাজে বহাল রাখা হল? কিসের এত মোহ? জবা’র কথায়,” মাঝে মাঝেই ম্যাডামের সাথে উঁচুগলায় কথা বলত তপন। আমরা কিছু বলতে গেলে ধমকাতো। বলতো- আমার আর ম্যাডামের ব্যাপারে তোরা কখনো আসবি না। বাড়াবাড়ি করলে পিটিয়ে মেরে ফেলবো।” জবার বয়ানের সত্যতা যাচাই করছে পুলিশও। তপনের বাড়ী বর্ধমান শহরেই বাবুরবাগ এলাকায়। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ডাঃ নাগের গাড়ী চালাতো সে। শহরের একাংশের বক্তব্য-” সে কি শুধু গাড়ীটাই চালাতো? নাকি বাড়ীটাও চলতো তারই দাপটে?”
তপনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য খুন, হত্যার চেষ্টা এবং গুরুতর আঘাতের মামলা রুজু হয়েছে। তাকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বর্ধমানের অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা আদালত