eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্ঘটনা ঠেকানোর 'পাহারাদার'ই ডিএসপি'র 'ঘরের জামাই' ?

দুর্ঘটনা ঠেকানোর ‘পাহারাদার’ই ডিএসপি’র ‘ঘরের জামাই’ ?

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ- ঠিকা শ্রমিকদের কবরখানা’ই এখন সেইলের দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা। মুড়ি মুড়কির মতো মরা মজদুরদের ‘হাসতে হাসতে’ চিতায় তোলে যে কারখানা, তারই অতিথি নিবাসের সফেদ চাদরে সুখনিদ্রায় বছরের পর বছর কিন্তু বেশ তোয়াজেই থাকেন কারখানায় শ্রমিক-নিরাপত্তার নজরদারি করার জন্য নিযুক্ত রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক।

কেন?

দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় পরপর মজুরের মৃত্যুতেও ইস্পাত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ জবরদস্ত ‘ কোনো সাজা না হওয়ায় এই প্রশ্নই এখন জোরালো হয়ে উঠছে ইস্পাত নগরী দুর্গাপুরে। যারা প্রশ্ন তুলছেন, তারা বলছেন, “জামাই আদরে রসে ও বশে থাকা সরকারি অফিসার কোন সাহসে ইস্পাত সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? ওনার কলিজাতো কারখানা মালিকদের কাছে বন্ধক থাকে।” দুর্গাপুর ইস্পাত (ডি.এস.পি) কারখানার ডান-বাম সব শ্রমিক সংগঠনই হরে দরে বলতে চেয়েছে, “যে কোনো দুর্ঘটনার পর উনি কারখানায় আসেন মাথা নুইয়ে। তাই, মজুরের মৃত্যুর পর বারে বারে ডি.এস.পি’র হয়ে উনিই সাফাই দেন- অন্য রাজ্যে সেইলের কারখানা গুলিতে দুর্ঘটনা, শ্রমিক মৃত্যুর হার এখানকার চেয়ে অনেক বেশি।” অর্থাৎ, ‘এমন ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই পারে।’

কিসের তাগিদে তিনি এমন বলেন?

ডি.এস.পির’ শ্রমিক সংগঠনের এক বামপন্থী নেতা বলেন, “যে মাথার ছাদ দেয়, তার স্বার্থ দেখাটা তো ওনার দায়বদ্ধতা। তবে, শুধু কি ঠাঁই দেওয়া? ওই অতিথি নিবাসে দুর্ঘটনার পর ঠিকা সংস্থার আনাগোনা, ডি.এস.পি’রই ট্রাফিক বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিকের বাড়তি তৎপরতা আর তারপর সবকিছু ঠিকঠাক ‘মিটে’ যাওয়া এ সবই আমাদের নজরে আছে।” তিনি আরো বলেন, “আমাদের কাছে কিছু ভিডিও, মোবাইল ফোনের কথোপকথনের কল রেকর্ডিং এসেছে। তাতে দুর্ঘটনাগুলিতে মৃত মজুরদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ২০, ৩০ লক্ষ টাকার রফার স্পষ্ট ইঙ্গিতও আছে।”

শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের কলকারখানা গুলিতে শ্রমিক-নিরাপত্তা ও কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রাণঘাতী-বিপদজ্জনক অব্যবস্থা কিছু রয়েছে কিনা দেখার জন্য প্রায় পঞ্চাশ(৫০) বছর ধরেই ‘ইন্সপেক্টর অফ ফ্যাক্টরি’ পদের এক আধিকারিক রয়েছেন। ১৯৪৮ সালের শিল্প আইন মোতাবেক। বাম আমল থেকেই ওই আধিকারিকের কার্যকলাপে বিরক্ত সরকারি, বেসরকারি সমস্ত কারখানারই শ্রমিক সংগঠনগুলি। বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন, ফেরো অ্যালয় কারখানাগুলির মালিক শ্রেণির সাথে তার গোপন ‘আঁতাত’ বারে বারে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিতর্ক, সন্দেহ যে এখনো যায়নি তা বোঝা যায় ডিএসপিতে দুর্ঘটনায় বার বার শ্রমিক মৃত্যুর পর। দুর্গাপুরের বর্তমান ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর অনিমেষ প্রামানিককে ঘিরে ফের নতুন করে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, ডিএসপি’র এক ট্রাফিক বিভাগের পদস্থ আধিকারিক ঠিকা সংস্থাগুলির সাথে নাকি তার হয়ে আলাদা করে ‘কথা বলে নেয়।’ আর তারপরই সব ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই কি? এক প্রশ্নের উত্তরে অনিমেষ প্রামানিক বলেন, ” গত দু’বছরে এখানকার কলকারখানা গুলিতে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি দরুন সাজা কত শতাংশ বেড়েছে- পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। যারা এসব কথা বলছে, তারা এসে দেখে যাক।” তিনি কেন অভিযুক্ত সংস্থা ডিএসপি’র অতিথি নিবাসে থাকেন? প্রশ্ন তুললে তার জবাব, “বিনা ভাড়ায় থাকিনা। প্রতিমাসে ওরা যে ভাড়া নেন, তার রশিদ আছে আমার কাছে।” তিনি একজন রাজ্য সরকারী আধিকারিক। তাদের থাকার জন্য শহরের সিটি সেন্টারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রাজ্য সরকারি আবাসন রয়েছে। ওই আবাসন গুলি তার দপ্তরের ৩০০ মিটারের মধ্যে। অথচ তিনি ডিএসপি’র অতিথি নিবাসে কেন-এ প্রশ্ন ওঠা সঙ্গত’ই।

রাজ্য সরকার, পুলিশ সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক, কর্মীদের থাকার জন্য ইস্পাত কর্তৃপক্ষের কাছে কোয়ার্টার ভাড়া নিয়েছে। অনিমেষ সে সব কোয়ার্টারেও থাকেন না। বছরের পর বছর তিনি ডিএসপি’রই অতিথি নিবাসে।

কেন?

কোনো বিষয়ে ‘বাড়তি নিরাপত্তা’র তাগিদে?’- এ প্রশ্ন কারখানার শ্রমিক সংগঠনের।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments