eaibanglai
Homeএই বাংলায়ডি.এস.পি তে মজুর মৃত্যু কি কাতার-দুর্গাপুর দুরত্ব নামিয়ে আনলো ৪২ ইঞ্চিতে ?

ডি.এস.পি তে মজুর মৃত্যু কি কাতার-দুর্গাপুর দুরত্ব নামিয়ে আনলো ৪২ ইঞ্চিতে ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- ফুটবলের বিশ্বকাপ চলছে কাতারে আর কাতারে কাতারে মজুর মরছে সেইলের দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায়। গত ১২ দিনে ৪ জন। একাধিক দুর্ঘটনায় আহত বহু। দুর্গাপুর থেকে কাতার ৩৬৫০ কিঃমিঃ দুরে হলেও, কারখানায় দুর্ঘটনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজরদারি করার জন্য নিযুক্ত রাজ্য সরকারি এক আধিকারিক সেই দুরত্ব না কি নামিয়ে আনলেন স্রেফ ৪২ ইঞ্চিতে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে উড়ে এসে ডি.এস.পি’র ঝক ঝকে অতিথি নিবাসে ‘ডেরা’ বাঁধা ওই রাজ্য সরকারি আধিকারিকের নাকি কারখানায় মজুর মরলেই পোওয়া বারো। প্রতিটি দুর্ঘটনা, মৃত্যুর পর বাড়ে তার বায়নাক্কা। গত ১২ দিনে মরা ৪ মজুরের লাশে দাঁড়িয়ে এই বায়নাবাবুর নয়া অবদার ‘বিশ্বকাপের খেলা দেখার জন্য একটি ৪২ ইঞ্চি টিভি চাই।’ কর্তৃপক্ষ সেই ‘বায়না’ মেটানোর আগেই বৃহস্পতিবার নাইট শিফটে কাজ করার সময় ডিএসপি’র র-মেটিরিয়ালস্ হ্যান্ডেলিং প্লান্টের সিনিয়র টেকনিশিয়ান আশুতোষ ঘোষালের দেহ পিষে গেল হাইলাইনে। পিষে দুই টুকরো হওয়ার আগে আশুতোষের দেহটি কনভেয়ার বেল্ট ৮০০ মিটার বয়ে নিয়ে গেল।

দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় গত ২রা নভেম্বর ভোর রাত্রের দুর্ঘটনা স্থলের ভিডিও দেখুন

আশুতোষের দেহের অস্থিমজ্জা যখন লৌহ আকরিক গুঁড়ো করার যন্ত্র টুকরো টুকরো করছে, ডিএসপি’র অতিথি নিবাসের সফেদ চাদরে শুয়ে রাজ্য সরকারের এক কারখানা পরিদর্শক সম্ভবতঃ হিসাব কষছেন ‘এটার বদলে কত কড়ি ঘরে আসতে পারে।’

১৯৪৮ সালের ‘কারখানা আইন’ মোতাবেক- রাজ্য সরকার নিযুক্ত একজন ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর তার এলাকায় চালু থাকা কলকারখানা গুলিতে যন্ত্রাংশ, কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন- এটাই সরকারি নির্দেশ।

দুর্গাপুর আর বাঁকুড়া জেলার কলকারখানা গুলির শ্রমিক নিরাপত্তা দেখভালের জন্য আধিকারিক নিযুক্ত হয়েছেন অনিমেষ প্রামানিক। তার দাবি, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এইসব অঞ্চলের কলকারখানা গুলির গাফিলতির বিরুদ্ধে একের পর এক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যা আগে হয়নি।” তা উনি দাবি করলেন বটে, তবে এটাও তার স্মরণে থাকা উচিৎ- ‘কলকারখানায় এত দুর্ঘটনা বা মৃত্যুও আগে কখনো হয়নি।’ প্রশ্ন- ‘উনি কি তবে ঠিকঠাক কাজ করছেন না- নাকি কারখানা গুলো ওনাকে ঠিকমতো পাত্তা দিচ্ছে না!’ নাকি ‘অন্য রকম’ কিছু ব্যবস্থা কাজ করছে মজুরের জীবনের দামে ? গোটা বিষয়টিতে এবার বেশই চিন্তিত দুর্গাপুর প্রশাসন। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “বার বার ডিএসপিতে কেনই বা এত দুর্ঘটনা ঘটছে ? কিসের গাফিলতি- এসব খুঁজে বের করার জন্য আমি ইতিমধ্যে স্থানীয় শ্রম- কমিশনারকে একটি পৃথক তদন্ত করার জন্য বলেছি।” তবে কি অনিমেষের কাজকর্মে এবার সত্যিই আস্থা হারাচ্ছে জেলা প্রশাসন ? অনিমেষকে নিয়ে দুর্গাপুর ইস্পাতের তিনটি শ্রমিক সংগঠন অবশ্য ইতিমধ্যেই রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার কাছে পৃথকভাবে দরবার করেছে বলে জানা গেছে। অনিমেষের প্রতিক্রিয়া- ‘ওসবে কিছু হবে না।’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments