মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- দিনে দুপুরে, প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে চলছে কোটি কোটি টাকার সরকারি জমি, এমনকি খোলা আকাশেরও ভরপুর লুঠ।আর তাতে, হাতে হাত মিলিয়ে লুঠের শরিক কিছু পদস্থ সরকারি অফিসার, কিছু পুলিশ, এক আদালত- কর্মী, গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, শাসক ও বিরোধী দলের বেশকিছু হাফ নেতা, ফড়ে। আরো মজার কথা-চোখের সামনে দেদার এই সরকারি জমি লুঠের ফলাও কারবার দেখেও চোখে ঠুলি পরে ভাতঘুমে রাজ্য সরকারের আবাসন দপ্তর। এরই মাঝে শুধু ‘দায়সারা’ একটি বিঞ্জপ্তি দিয়ে নিজের গায়ের ময়লা ঝাড়ার চেষ্টা করেছে দুর্গাপুর নগর নিগম। ওই টুকুই! তার পরও, নগর নিগমের নোটিশকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে হাওয়ায় ভাসিয়ে জমি আর আকাশ লুঠের অন্যতম মূল পাণ্ডা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শাঁসালো কর্তা আর তার সাগরেদরা বুক ফুলিয়ে নতুন করে সরকারি জমিতে নির্মাণের কাজে উঠে পড়ে লেগেছেন, প্রকাশ্যেই। এসবে উৎসাহ পেয়ে আরো বড় জমি লুঠের কাজ শুরু করে দিয়েছেন এক আদালত কর্মী আর রাজ্য পুলিশের একজন এ.এস.আই। তাদের বক্তব্য, “বেআইনী আবার কি কথা ? আইন তো আমরাই! যাই করবো সকলকে তা মেনে নিতে হবে। মানতে না পারলে হয় আমাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে হবে, নয়তো এখানে থেকেই ভুগতে হবে। পুরসভা, পুলিশ, নেতা, আদালত সবই তো এখন আমাদের পকেটে। যার যার পোষাচ্ছেনা, ভালোয় ভালোয় এখনি ফুটে যাক এখান থেকে।”
দুর্গাপুর শহরের জমির ‘হিরে খনি’ এখন নগরায়নের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার। সেখানেই এই সরকারি জমি-বাড়ি আর আকাশ লুঠের ফলাও কারবার ফেঁদে বসেছেন ওই দূষণ নিয়ন্ত্রণ আধিকারিক, ওই পুলিশ, ওই আদালত কর্মী আর রাজ্যের শাসকদলের দুজন ছুটকো ‘হাফ নেতা’। সাথে এলাকারই কিছু জমি-বাড়ির দালাল। একটি সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান মোতাবেক, ইতিমধ্যেই সংগঠিত লুঠের ওই চক্র বিক্রি করে দিয়েছে অন্ততঃ তিন ‘লক্ষ বর্গফুটের’ বহুমূল্য সরকারি জমি আর প্রায় সমপরিমাণ আকাশ। “হ্যাঁ। শুধু জমি নয়, এরা বুক ফুলিয়ে বেচে দিচ্ছেন আকাশ। সবটাই চলছে তৃণমূল কংগ্রেসের দুজন হাফ নেতা, রাজ্য সমবায় দফতরের কয়েকজন আধিকারিক, এবং রাজ্য আবাসন দপ্তরের দুই আধিকারিক ও কর্মচারীর তদারকিতে,”- এই অভিযোগ লুঠ হয়ে যাওয়া আবাসনেরই একদল বাসিন্দার। আবাসন দপ্তরের এক বাস্তুকারের ভূমিকাও এখন আতশকাচের তলায়। ক্ষুব্ধ আবাসিকদের একাংশের অভিযোগ হাতে পাওয়ার পর গত ১৪ মে দুপুরে দুর্গাপুর নগর নিগমের কমিশনার ওই আবাসনের বাসিন্দা শান্তনু চৌধুরীকে বেআইনি নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি পাঠান। প্রাক্তন অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট কর্মী শান্তনু নগর নিগমের নোটিশ দেখে গোড়ায় হকচকিয়ে গেলেও দু’দিন পরেই দেখা যায় আবাসনের ‘ এম.আই.জি-৭’ নম্বর বিল্ডিং এর গায়ে সাঁটানো সরকারি কাগজটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বুধবার থেকে ফের শুরু করে দেওয়া হয়েছে তিনতলার নির্মাণকাজ। এলাকা থেকেই জানা যায়-নোটিশ আসার পর থেকেই বার দুই নগর নিগমে ঘোরাঘুরি করার পর দুই হাফ নেতাকে ধরে ‘নগদ চাঁদি’র বিনিময়ে গোটা ব্যাপারটাই নাকি ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেছেন লুঠের পাণ্ডা শান্তনু আর তার দুই শাগরেদ। নিজের সরকারি পদাধিকারের অপব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন ওই দূষন পর্ষদ আধিকারিকও, বলে অভিযোগ। দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় গোটা বিষয়টি জানেন – ঠিক কিভাবে জমি-আকাশ লুঠের কারবার চলছে সিটি সেন্টারে। তার বক্তব্য, ” ওটা দেখার জন্য রাজ্য সরকারের আলাদা একটা দপ্তর রয়েছে। দরকার পড়লে ব্যবস্থা তো তারাও নিতে পারে।” যে দপ্তরের দেখার কথা, সেই আবাসন দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা দরজায় খিল এঁটে কি তবে ‘ভাতঘুমে ?’