eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরে জমি লুঠে হতাশ তাপস, অমিতাভঃ পঙ্কজ বললেন-ওরা 'অফ দ্য প্রোমোটার, বাই...

দুর্গাপুরে জমি লুঠে হতাশ তাপস, অমিতাভঃ পঙ্কজ বললেন-ওরা ‘অফ দ্য প্রোমোটার, বাই দ্য ঠিকাদার’

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ- দিন কে দিন জমি, বাড়ী লুঠের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে দুর্গাপুর শহর ও তার সন্নিহিত অঞ্চল। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি, বাড়ী তো বটেই, বাদ যাচ্ছেনা সরকারি জমি এবং রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থার জমিও। আর এসবের নাটের গুরু দুর্গাপুরের প্রায় ডজন খানেক প্রোমোটারের সংগঠিত গোষ্ঠী। দুটি রাজনৈতিক দলের বেশ কিছু নেতা তাদের ডান হাত রেখেছেন এইসব ‘দুর্বৃত্ত’ প্রোমোটারদের মাথায় আর বাঁ হাত নাকি রেখেছেন প্রোমোটারের অফিসের টেবিলের তলায়। যার দরুন, চাইলেও জমি-বাড়ীর বেপরোওয়া লুঠ রুখতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)। বেশিরভাগ প্রোমোটার দরদি নেতাই নাকি রাজ্যের শাসকদল এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধীদলের। প্রাক্তন বাম আমলে সিপিএম-ঘনিষ্ঠ কিছু প্রোমোটার যারা সে যুগে বেশ রসেবসেই ছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের ১১বছরের শাসনে সেই তারাই ফের ডানা-পাখনা মেলে খুলে আম জবরদখল, জমি-বাড়ী লুঠের পাকাপোক্ত চক্রান্তে সক্রিয় হয়ে পড়েছেন। প্রশ্ন- তাহলে কি এই সংগঠিত অপরাধের বাস্তবিকই কোনো সুরাহা নেই?

“আমাদের সীমিত ক্ষমতা। চোর যদি সর্বত্র হয়ে যায়, কি করব? ঘরে ঘরে চোর। যে পারছে বালি চুরি করছে, কয়লাচুরি করছে, জমি লুঠ করছে। আমি কি করেই বা আটকাবো?”- প্রশ্ন খোদ এডিডিএ চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাফ জানিয়েদেন, প্রোমোটারদের জমি-বাড়ী লুঠের বিষয়ে আদৌ কোনো সমঝোতার পথে হাঁটবেনা এডিডিএ। তবে তার কথায় যে হতাশার সুর ধরা পড়ল, তাতে একথাটা বোঝাই যায়-‘চোর ধরতে’ গিয়ে বিভিন্নরকম সমঝোতা দেখে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সেই ‘সমঝোতার’ ভুত ইদানিং যেমন চরে বেড়াচ্ছে এডিডিএ’র অন্দরমহলে তেমনিই সম্ভবতঃ ‘করেখাচ্ছে’ তৃণমূল কংগ্রেসেরই রাজনৈতিক পরিসরে। এই দুই বৃত্তেই দুর্বৃত্তের শাঁড়াশি চাপেই সম্ভবতঃ হতাশা তাপসের গলায়।

হতাশা শুধু তাপসের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকেই গ্রাস করেনি, দিশাহারা রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপিও। দলের দক্ষিনবঙ্গের ‘সুশাসন’ বিভাগের সচীব অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “কি অভিযোগ করব, কাকেই বা জানাবো আর কতই বা বলব? অভিযোগ করে করে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি।” তিনি বলেন, “গত ৬-৭ বছরে দুর্গাপুর জুড়ে তৃণমূলের মদতে দেদার জমিদখল, লুঠ চলছে। আমরা যখন যেমন জানতে পেরেছি প্রতিবাদ করেছি। লাভ হয়নি কিছুই। মানুষ সবই দেখছে। আমরা এখন ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি নিয়েছি। সময়ে সব জবাব দেব।”

জমি-বাড়ী লুঠের স্বর্গরাজ্য এখন বিধাননগর, আঢ়া, কালীনগর, মুচিপাড়া, টেটিখোলা, গোপালমাঠ এমনকি খোদ সিটিসেন্টারেও। অন্যত্র যেমন সরকারি জমি জবরদখল করে বহুতল আবাসন গড়ে উঠেছে, একজনের জমিতে অন্যজন ইমারৎ গড়ে তুলছেন, সিটিসেন্টার, বিধাননগরে কিন্তু দিনে দুপুরে লুঠ হয়ে যাচ্ছে আস্ত বাড়ী। এডিডিএ এবং দুর্গাপুর নগর নিগমের একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারীর প্রত্যক্ষ মদতে একের পর এক বাড়ী সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে হাতবদল যেমন হয়েছে তেমনি সম্প্রসারনও হচ্ছে এবং সরকারি জমির ওপর নির্মাণ করে মূল বাড়ীর অংশ বলে জুড়ে দেওয়ার কাজও চলছে বিনাবাধায়।

জমি-বাড়ী, জবরদখল নিয়ে এত নৈরাজ্য আর তাতে কার্যতঃ অসহায় তৃণমূল কংগ্রেস-বিজেপি, কিন্তু যে দলটা ৩৪ বছর ধরে রাজ্য শাসন করলো, প্রোমোটারদের ভয়ে তারাও কি তাহলে গর্তে সেঁধিয়ে গেল?

“না। সব দেখে বুঝে গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে নেই সিপিএম। আমরা ময়দান ছাড়িনি। কালকেই এখানকার বিধাননগরের একটি রাস্তায় আড়াই লক্ষ টাকা ‘তোলা’ নিয়ে এক তৃণমূল নেতা একটি দোকানঘর বসিয়েছিল। আমরা গিয়ে, পুলিশ ডেকে সেটা উঠিয়েছি। তবে, ঐ নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিস। বুঝতেই পারছি-পুলিস-তৃণমূল আঁততে এসব হচ্ছে নিশ্চয়,” বললেন সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ রায় সরকার।

গত মাসে আসানসোল-দুর্গাপুরের ২৯টি প্রোমোটারি সংস্থার বেআইনি কাজের তালিকা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে এফ.আই.আর. করার কথা ঘোষণা করেন এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় এক মাস অতিক্রান্ত। কি ব্যবস্থা নিল এডিডিএ জানতে চাইলে এদিন তাপস বলেন,”না। এফ.আই.আর. এখনো করিনি কিছু কিছু প্রোমোটার আমাদের শো-কজের জবাব দিয়েছে। স্ক্রিনিং এর কাজ চলছে।”

“কিসের স্ক্রিনিং? মাত্র ২৯টা? তার চেয়ে বহুগুন বেশি জালিয়াতি হয়েছে এবং হচ্ছে। আসলে এই তৃণমূলের সরকারটাই হল ‘ফর দ্য প্রোমোটার, বাই দ্য সাপ্লায়ার আর অফ দ্য ঠিকাদার’। সিন্ডিকেটরাজ, প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা নেই এডিডিএ বা ডিএমসির। প্রোমোটার ঠিকাদাররাই ওদের চালায়। তাই ২০১২ সাল থেকে দেদার খাস জমি, জঙ্গল কাটা সবই চলছে। নেতারা লাখ-কোটি টাকা কামাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা সিটি সেন্টারে বার বার জমায়েত করেছি। আমরা একটা কল সেন্টারের নম্বর(০৩৩-৪১৮০৭৫০৬)ও দিয়েছি সোস্যাল মিডিয়ায় যাতে জমি জবরদখলের কথা মানুষ সরাসরি আমাদের জানাতে পারেন,”বললেন পঙ্কজ। বিজেপির নিস্ক্রিয়তা নিয়ে পঙ্কজের কটাক্ষ, “সবাই জানে, ওরা সব মিলে মিশেই আছে। কে কার বিরুদ্ধে বলবে?”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments