নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর:- সারা দেশজুড়ে চলছে চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউন। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক কোটি বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে মানুষের সুবিধার্থে। অনেক পরিযায়ী শ্রমিক এখনো বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রাস্তায় হেঁটে চলেছেন। পেটে খিদে,পায়ে ফোসকা, ক্লান্ত শরীর আর বিধ্বস্ত ভবিষ্যৎ নিয়ে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক এখনো হেঁটে চলেছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে রাস্তা থেকে বাসের বন্দোবস্ত করে ইতিমধ্যেই তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করার প্রক্রিয়া চালু করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাও সংখ্যা দিনের দিন বেড়েই যাচ্ছে। মানুষের কষ্টের সীমাহীন প্রহর এখনো চলছে।
শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সমাজসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে কোন অসহায়-দুস্থ মানুষ অভুক্ত থেকে না যায় এই শহরের বুকে। এই কাজ শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরে করছেন এইসব মানুষজনেরা।
কিন্তু গতকাল দুর্গাপুর শহর এক অভিনব ঘটনা দেখল যা আগে কখনও নজরে আসেনি দুর্গাপুর বাসীদের। ন্যায়দন্ড হাতে নিয়ে যে বিচারক চোখ বাঁধা আইনের দেবীর উপাসক, শুধু জানেন তথ্য, প্রমাণ ও সাক্ষ্য তারও সেই বাঁধা চোখের ভেতর দিয়ে গড়িয়ে বেরিয়ে এলো চোখের জল। কারণ তিনিও যে মানুষ, তার ভেতরও ধক ধক করছে একটা জীবন্ত প্রাণ। তাই দুর্গাপুর মহকুমা আদালত সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু অসহায় দুস্থ মানুষজনের কষ্ট দেখে তিনিও নেমে পড়লেন আজ ন্যায়দণ্ড ছেড়ে সাধারণের সেবায়।
দুর্গাপুর মহকুমা আদালতের বিচারক শুভদীপ মিত্র জন্মদিন ছিল গতকাল। প্রতিবারই পরিবার ও আপনজনদেরকে নিয়ে মহাসমারোহে নিজস্ব পরিধির মধ্যেই উদযাপন করতেন তার নিজের জন্মদিনটিকে। গুরুজনের আশীর্বাদ ও ছোটদের ভালোবাসা নিয়ে ভরে উঠত জন্মদিনের ওই শুভ দিনটি। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হলো। বিচারক শুভদীপ মিত্র এইবারে তার জন্মদিন পালন করলেন দুর্গাপুর আদালত সংলগ্ন প্রায় ১০০ জন দুস্থ মানুষকে খাবার খাইয়ে ও সেবা দিয়ে। তার এই উদ্যোগকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল দুর্গাপুর মহকুমা আদালতের ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও। বিচারকের উপস্থিতি এবং তার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষজনের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সময় তার চেহারায় এক অন্যরকম দীপ্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তার চোখ, মুখ ও শারীরিক ভাষা থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছিল, যে অন্য যত বারই তিনি জন্মদিন পালন করেছেন আপনজনের সাথে তার থেকে আজ তিনি নিজেকে বেশি আনন্দিত ও উল্লাসিত মনে করছেন। ওই ঘটনার আশেপাশের উপস্থিত থাকা সমস্ত মানুষজন শক্ত, কড়া,ও দৃঢ় মনোভাবের এই মানুষটিকে কেমন যেন এক সহজ-সরল মানুষ হিসেবে দেখছিলন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”