eaibanglai
Homeএই বাংলায়ঝড় বৃষ্টি হলে কখন বিদ্যুৎ আসবে কেউ জানে না, ঘন ঘন লোডশেডিং...

ঝড় বৃষ্টি হলে কখন বিদ্যুৎ আসবে কেউ জানে না, ঘন ঘন লোডশেডিং এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, ফুঁসছে মানুষ

অমল মাজি, দুর্গাপুর :- ঝড় বৃষ্টি হোক বা না হোক, লোডশেডিং দুর্গাপুর শহরে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বর্তমানে তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং-এর তীব্রতা। দিন নেই রাত নেই যখন তখন লোডশেডিং। তীব্র গরমে মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত। তার উপর ঘন ঘন লোডশেডিং মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এমন কোনোদিন নেই যেদিন লোডশেডিং হয়নি। দিনের দিকে দুই তিনবার লোডশেডিং হবেই হবে। কোনও কোনোদিন রাতে বারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে আর আসছে। আর ঝড় বৃষ্টি হলেতো বিদ্যুৎ কখন আসবে কেউ বলতে পারবে না। বিগত বছরখানেক ধরে সগরভাঙ্গা এলাকায় বিদ্যুৎ এই আসে এই যায়। বিশেষ করে দুর্গাপুর বাজার, শান্তিবন পার্ক, এসবি মোড় থেকে জোনাল সেন্টার, সগরভাঙ্গা কলোনি, গোপীনাথপুর গ্রাম, শশাঙ্কপল্লী, ডেয়ারি, সত্যজিৎ পার্ক সহ সমগ্র স্মল ইন্ডাস্ট্রি, বিধাননগর প্রভৃতি কিছু স্থানের চিত্র ভয়াবহ। সারা দিনে এইসব এলাকায় টানা ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে কিনা বলা দুষ্কর।

বিদ্যুৎ সর্বক্ষণ প্রয়োজনীয় জিনিস । দিনে বা রাতে যে কোন সময়েই হোক, বিদ্যুতের অনুপস্থিতি আধুনিক জীবনে হাজার সঙ্কট ও সমস্যার সৃষ্টি করে। সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিদ্যুৎ ছাড়া কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস একেবারে অচল। শিল্প কারখানাগুলোতে প্রতিনিয়ত লোডশেডিং এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা পূর্বের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার নিরন্তর ব্যাঘাত ঘটছে। বিদ্যুৎ না থাকলে সুষ্ঠু জল সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও ইদানিং বারবার লো-ভোল্টেজ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই লো-ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ, ফ্যান, এসি ইত্যাদি অচল হয়ে যাচ্ছে। শিল্পে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে দোকানদাররা-ব্যবসাদাররা । এই বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে শিল্পাঞ্চলের মানুষ । তারা বিদ্যুৎ দপ্তরে বারবার ফোন করে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয় নি।

ওয়াকিবহালদের মতে, ডিপিএল থাকা কালীন এমন সমস্যা এতটা হয়নি। যেদিন থেকে ডব্লুবিএসইডিসিএল ডিপিএলের দায়িত্ব নিয়েছে,সেইদিন থেকে সমস্যা শুরু হয়েছে। এখন এই লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট বিভিন্ন কারণে হচ্ছে । তারা জানান, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার সঙ্গে পর্যাপ্ত হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। আসল কারণ, কারিগরি অদক্ষতা, অবহেলা ও বহু পুরনোযন্ত্র ও সরঞ্জামের আবশ্যিক সংস্কারের কাজের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অক্ষমতা।

আসানসোল জেলা বিজেপির সহ সভাপতি ও প্রাক্তন পুরপিতা চন্দ্রশেখর ব্যানার্জি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যতদিন এই বিদ্যুৎ সরবরাহ ডিপিএলের হাতে ছিল ততদিন এতো লোডশেডিং মানুষকে ভোগ করতে হয়নি। ডব্লুবিএসইডিসিএলের হাতে যাওয়ার পর একের পর এক অভিযোগ উঠছে। আর সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণের ফলে এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে । বিদ্যুৎ খাতে দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা আরও সমস্যার সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, ডিপিএলের হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ, ডিপিএলের জায়গা প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। রাজ্য সরকারের অদূরদৰ্শিতার কারণে ডিপিএলের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। অপরদিকে, দুর্গাপুরে শাসক দলের রাজনৈতিক নেতাদের, দুর্গাপুর প্রশাসনের কর্তাদের তদারকিরও অভাব রয়েছে।

নিত্যদিন লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিল্পাঞ্চলের মানুষ আজ তিক্ত, বিরক্ত ও অতিষ্ঠ। এই চিত্র শুধুমাত্র সগরভাঙ্গা ও পার্শবর্তী এলাকায় নয়, সারা দুর্গাপুরে । দুর্গাপুরবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা, ডব্লুবিএসইডিসিএল-এর নির্দিষ্ট কোন নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানোর কোনও অপশন নেই বা সুযোগ নেই। স্থানীয় নেতারাই আজ অসহায়।

রাতে যদি কারোর বাড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে স্থানীয় সাব-স্টেশনে খবর দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কারণ ডব্লুবিএসইডিসিএল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইলেকট্রিক সাব-স্টেশনের রাতের সার্ভিস বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে মানুষ কোথায় যাবে ? কোথাও যাওয়ার নেই, সারারাত বিদ্যুৎ হীন ঘরে বসে থাকা ছাড়া।

অবশ্য, কোম্পানির টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানোর কথা বলা হচ্ছে ঠিকই, তবে সেই নম্বরে অভিযোগ জানানো হলে একদিন পর একটি ম্যাসেজ দিয়ে দায়িত্ব সারা হয়। ভুক্তভুগীদের অভিযোগ, ওই টোল ফ্রি নম্বর আসলে আইওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। আর যে কয়েকজন আধিকারিকের যেসমস্ত ফোন নম্বর রয়েছে সেইগুলিতে ফোন করলে সঠিক উত্তর মেলে না এবং ব্যাবহারও মধুর নয়। আবার কেউ যদি ফোন ধরে তবে তার ভাঙা ক্যাসেটের মতো একটাই উত্তর, “মেইন লাইন থেকে, কিংবা ১১০০০ থেকে বিদ্যুৎ গেছে আসতে সময় লাগবে।”

এহেন অবস্থায় সাধারণ মানুষ আজ তিতিবিরক্ত। তাদের বক্তব্য, ইলেকট্রিক বিল দিতে একদিন দেরি হলে ফাইন কাটা হয়, অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও কোনও দোষের নয়। এমন চলতে থাকলে আগামীদিনে ক্ষুব্দ মানুষ বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments