সঞ্জীব মল্লিক,বাঁকুড়াঃ- গ্রামের মানুষদের চোখের জলে ভাসিয়ে অবসরকালীন বিদায় নিলেন মাস্টারমশাই। তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে নানান উপহারের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন গ্রামের ছাত্রছাত্রী থেকে তাঁদের অভিভবকরা। তাঁর প্রতি মানুষের ভালবাসা দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না আমরুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকৃষ্ণ মেদ্যা নিজেও। বললেন, অবসরকালীন গ্রামের মানুষদের কাছে এই ভালোবাসা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। মাস্টারমশাইকে বিদায় জানাতে গিয়ে বারেবারেই আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছছিলেন আমরুল গ্রামের মা বোনেরা। মুছবেন নাই বা কেন, তিনি তো পরম আত্মীয়ের মত যত্নে আদরে মানুষ করে তুলেছেন গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। তাই তাঁর বিদায়কাল যেন বুকের ভিতরে বিঁধছিল সকলের। গ্রামবাসীরা তাঁদের প্রিয় মাস্টারমশাইকে সংবর্ধনা জানাতে গিয়ে বারেবারেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছিলেন। অনেকেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। কেউ বা এবার তাঁকে অশ্রুসিক্ত অবস্থায় জড়িয়ে ধরলেন।
শ্যামলকৃষ্ণ বাবুকে সংবর্ধনা জানাতে এসে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রামকৃষ্ণ মন্ডল বলেন ‘সরকারি নিয়মে মাস্টারমশাইকে অবসর নিতে হচ্ছে। কিন্তু ওনার অবসরকালীন জীবনটা বেদনায় ভরে থাকবেন। কারণ যেভাবে উনি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে শিক্ষাদানের মধ্যে দিয়ে সময় কাটাতেন সেটা আর থাকছেনা। আমাদের স্কুলটাও মহাশূন্যতায় ভরে গেল। প্রধান শিক্ষকের চেয়ারটা আজ থেকে খালি হয়ে গেল। আমরা ওনার কাছে আশীর্বাদ চাইব যেন উনি নিজে আমাদের শিখিয়ে পড়িয়ে সেই শূন্যতা ভরিয়ে দেন’।
প্রধান শিক্ষকের বিদায় ব্যাথা বুকে চেপে গ্রামের প্রবীণ মানুষ তপন বৈরাগী বলেন ‘মাস্টারমশাইয়ের অনুপস্থিতিতে স্কুলে তো শূন্যতা সৃষ্টি হবেই। আমাদের মনেও ওনার জন্য শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ওনাকে খুবই ভালবাসতাম। ওনার কর্ম এবং শিক্ষা দিয়ে উনি আমাদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন’।
অবসরকালীন সংবর্ধনা নিতে এসে আপ্লুত আমরুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকৃষ্ণ মেদ্যা বলেন ‘আমার ছাত্রছাত্রীদের বোলব তাঁরা যেন সুশিক্ষিত হয়ে ওঠে। আমি গ্রামের মানুষের ভালোবাসা দেখে খুবই আনন্দিত। আমি চাইব সবাই ভালো থাকুক। অবসর নিলেও আমি মাঝে মাঝে আমার এই স্কুলে এসে সময় দেব। ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার চেষ্টা করব’ ।