নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- সারা দেশজুড়ে চলছে করোনা আতঙ্ক। অথচ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে লকডাউন থেকে আনলক ডাউনের প্রক্রিয়া। বিভিন্ন বাজার হাটে তাই মানুষজনের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে যে ক’টি সবজি বাজার ও বড় বাজার রয়েছে সেখানে প্রতিদিন মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। করোনা কালে মানুষজন অনেকেই নিরামিষ খাবার খেতে পছন্দ করছিলেন। কিন্তু আনলক ওয়ান শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই মাছ-মাংসের দোকানে ভিড় চোখে পড়ার মতো। আর এরই সুযোগ নিয়ে এক প্রকারের অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকানোর প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছে। বাজার গুলিতে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এইসব ব্যবসায়ীরা মোটা মুনাফার লোভে বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী মানুষকে বিক্রি করে চলেছেন দৈনন্দিন।
এমনই এক ঘটনা ঘটল আজ চন্ডীদাস বাজার সংলগ্ন একটি মাংসের দোকানে। চন্ডীদাস বাজারের যাওয়ার রাস্তার উপরে একটি মাংসের দোকানে মানুষজন বড় লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, দেখে থমকে দাঁড়ালেন পথচলতি মানুষ। কি জন্য ভিড় তা জানতে উৎসুক সবাই। খবর নিয়ে জানা গেল যে দোকানের বাইরে একটি সাইনবোর্ডে লেখা ঝুলছে “ছাগলের মাংস ৪০০/-টাকা” কেজি। আর মানুষজনও লম্বা লাইন দিয়ে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে মনের আনন্দে কিনছেন সেই ছাগলের মাংস। ব্যবসায়ী যদিও আইনের ফাঁক রেখে দিয়েছেন বোর্ডে। তিনি পরিষ্কারভাবে লিখে রেখেছেন “ছাগলের মাংস” কথাটি। সাধারনত আমরা যারা মাংস খেতে পছন্দ করি, তারা হয় পাঁঠার মাংস নয় খাসির মাংস কিনে আনি বাজার থেকে।বাজারে বেশ কিছু এমন মাংসের দোকান আছে যেখানে খাসি ও পাঁঠার মাংস বিক্রি হয়। খাসির মাংসের আজকের বাজার দাম/দর ৬০০/-টাকা কেজি। সেই জায়গায় “ছাগলের মাংস ৪০০/-টাকা কেজি”।
কেন এই পার্থক্যটা বোঝাতে আমাদের পাঠকদের জন্য খাসি, পাঠা ও ছাগলের মাংস শব্দের অর্থ কি, তাদের ব্যবহার কি- তা পরিষ্কার করে নিচে দেওয়া হল। খাসি আর পাঁঠার মাংসের পার্থক্য কী? সবাই খাসি কেন পছন্দ করে। মাংসে কি পার্থক্য বলার পূর্বে আসুন জেনে নেই আরো কিছু কারণ, যেই জন্য পাঁঠা থেকে খাসি করা হয়। ছাগল সাধারণত একসাথে অনেক গুলো পালন করা হয়, তাই ব্রিডিং নিয়ন্ত্রণ বা প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করতে পুরুষ ও মহিলা ছাগল আলাদা রাখতে হয়। পাঁঠা একটু উগ্র স্বভাবের, নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সেকারণে কয়েকটি পাঁঠা একসাথে পালা খুব কঠিন কৃষকের জন্য। একটি মাত্র পাঁঠা দিয়ে সব মেয়ে ছাগল কে নিষিক্ত করা সম্ভব। আর মেয়ে ছাগল কে আকর্ষিত করতে পুরুষ ছাগল বা পাঁঠা শরীর থেকে একটি ক্যামিকেল “4ethyloctanal” নিঃসরণ করে যা বাতাসে এসে “4-ethyloctanoic acid” এ পরিনত হয়। এবং উৎকট গন্ধ ছড়ায় যা অনেকেরই অপছন্দ। এটা মাংসেও থাকে, তাই পাঠা এর মাংস অনেকেই পছন্দ করে না। খাসি আর পাঁঠার মাংসে প্রধান পার্থক্য হল পাঁঠার মাংসে গন্ধ থাকে যা খাসির মাংসে থাকে না বললেই চলে।
খাসি এবং পাঁঠার মধ্যে পার্থক্য আছে। এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতী, তবে জন্মের কিছুদিন পরে যে সব পুরুষ লিঙ্গের ছাগলের অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয়, সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। এর কারন হল অন্ডকোষ কাটলে এরা প্রজননে অক্ষম হয়, ফলে মনোযোগ দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে খাসি মোটা-তাজা হয় এবং সুস্বাদু-ও হয়। আর যে সব শাবক বা পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না, তাদেরকেই পাঁঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। এক কথায় বলতে গেলে মেয়ে ছাগলের মাংস শক্ত বা চিমড় হয় কারন তারা বহু দিন ধরে প্রজনন করে আসছে। আর এই দোকানে সেই মাংস-ই বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেকেই মেয়ে ছাগলের মাংস খাওয়া পছন্দ করে না। কিন্তু আজ বেশ কিছু মানুষ লম্বা লাইন দিয়ে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে মনের আনন্দে কিনছেন সেই মেয়ে ছাগলের-ই মাংস।
