Travelling – it leaves you speechless, then turns you into a storyteller. ” Ibn Battuta
বিখ্যাত ভূপর্যটক ইবন বতুতার এই কথাগুলি দিয়েই গুজরাত ভ্রমণ কাহিনীটির সূচনা করলাম। গুজরাত ভ্রমণ নিয়ে কিছু লেখার আগে তার ইতিহাস নিয়ে দু চার কথা আলোচনা করা দরকার। যে কোনো জায়গাতে বেড়াতে গেলে সেই জায়গার ইতিহাস টা জেনে যাওয়া প্রয়োজন। ইতিহাস না জানলে সেই জানা এবং দেখাটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। গুর্জরদের দেশ গুজরাত। খ্রিস্ট পূর্ব 3 শতকে মৌর্যদের অধীনে ছিল এই গুজরাত। ৫ শতকে হূণ আক্রমণে মৌর্য বংশ ধ্বংস হওয়ার পর গুর্জরদের আগমন উওরাখণ্ড থেকে। ৯ শতকে সোলাঙ্কি রাজাদের দখলে চলে যায় গুজরাত। আবার পুরাতাত্ত্বিকরা বলেন ৫০০০ বছর আগেও গুজরাত ছিল ভারতীয় সভ্যতার পীঠস্থান। ১০ শতকে চালুক্য রাজ মুলরাজ সোলাঙ্কির হাতে আধুনিক গুজরাতের জন্ম হয়। আধুনিক আমেদাবাদ শহরের গোড়াপত্তন হয় ১৪১১ সালের ১১ই ফ্রেবুয়ারী এবং তৎকালীন সম্রাট আহমেদ শাহ ১৪১১ সালের ৪ ঠা মার্চ আমেদাবাদ শহরকে নতুন রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে গুজরাত রাজ্যের আয়তন ১,৯৬,০২৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৬,০৩,৮৩,৬২৮ জন। আয়তনে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রাজ্য এবং জনসংখ্যায় ভারতের দশম স্থানে ( ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী) আছে গুজরাত। বর্তমানে গুজরাত এর রাজধানী গাঁধীনগর। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা কোলকাতা থেকে ‘গো এয়ার’ এর বিমানে আমেদাবাদ পৌঁছালাম। আমেদাবাদ এ নামলাম রাত্রি আটটার সময়। এই সেই গুজরাত যা পরাধীন ভারতের মহাত্মা গান্ধীর স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু ঘটনার চিরসাক্ষী। এরপর আমরা বিমানবন্দর থেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। রাত্রি তে আমেদাবাদের আশ্রম রোড এ Hotel Volga তে ছিলাম। এই হোটেল টি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং পরিবার নিয়ে থাকার পক্ষে নিরাপদ।পরের দিন আমাদের গন্তব্য বরোদা এবং “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি”। অবারিত মাঠ গগন ললাট চুমে এক পদধূলি ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রাম গুলি………
ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই লাইন গুলিা বার বার মনে পড়ে যাচ্ছিল। তখনই মনে মনে ঠিক করলাম আজ যখন বরোদা ও “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” দেখতে যাবো, তখনই রাস্তার ধারের একটি আদর্শ গ্রাম দেখে নেবো। সেই মতো স্নান সেরে ও জলখাবার খেয়ে গাড়িতে উঠেই ড্রাইভার কে বললাম যাওয়ার পথে আপনাদের গুজরাত এর একটা আদর্শগ্রাম আমাকে দেখিয়ে দেবেন। গ্রাম দেখবো শুনে ড্রাইভার এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন, যেন মনে হলো গ্রাম কি জিনিস উনি তা জানেন না। তারপর মৃদু হেসে বললেন এটা আশির দশকের গুজরাত নয়। এটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর গুজরাত। ঝাঁ চকচকে হাইওয়ে, বিভিন্ন বড় বড় কলকারখানা ও সুপার মার্কেটের দৌলতে আমেদাবাদের কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে কোন আদর্শ গ্রাম এখন আর নেই। যেতে যেতে ফাঁকা জায়গায় যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বাড়ি আপনি দেখতে পাবেন সেগুলো কে, আর যাইহোক আদর্শ গ্রাম বলা যায় না। একান্তই যদি আপনি গ্রাম দেখতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে আমেদাবাদ থেকে অনেক অনেক দূরে কোনো এক সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায়। আপাতত গ্রাম দেখার ইচ্ছা ত্যাগ করে আমরা চললাম “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” দেখতে। আমেদাবাদ থেকে “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” – র দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। বরোদা থেকে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার এবং সুরাট থেকে দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। নর্মদা নদীর বুকে যে জলাধারটি তৈরি করা হয়েছে তার নাম সর্দার সরোবর ড্যাম। সর্দার সরোবর ড্যাম এর কাছেই এই “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি”। এখানে স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লৌহমানব সর্দার বল্লভভাই পটেল এর ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। গুজরাত বিধানসভার ১৮২ টি আসনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এর উচ্চতা ১৮২ মিটার ঠিক করা হয়েছে। এর ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতা Richter scale- এ ৬.৫ এবং ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন ঝড় সামলানোর ক্ষমতা এর আছে । Larsen & Tubro আগামী ২৫ বছর এর সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষন এর দায়িত্ব পেয়েছে। এটাই হচ্ছে বিশ্বের সবথেকে উঁচু মূর্তি। না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা যায় না এর স্থাপত্য ও শিল্পকলা কে। এই মূর্তি দেখার পর আমার মনে হয়েছে ভারতের Civil engineering আজ কোন স্তরে গিয়ে পৌঁছেচে। এটা দেখার জন্য তিন রকমের টিকিট আছে । ১৫০ , ৩৫০ এবং ১০০০ টাকা। বিভিন্ন দামের টিকিট এ বিভিন্ন রকমের সুবিধা পাওয়া যায়। মঙ্গলবার থেকে রবিবার প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সোমবার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে ।
২০১০ সালে এই মূর্তি তৈরি করার ঘোষণা হয়েছিল এবং ২০১৩ সালের ৩১ শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে এর শিলান্যাস হয়। এটি তৈরি করতে খরচ হয় ২,৯৮৯ কোটি টাকা। এই মূর্তির মূখ্য স্থপতি মহারাষ্ট্রের Ram Vanji Sutar। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের ৩১শে অক্টোবর এর উদ্বোধন করেন। এই “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” দেখে আমরা এলাম বরোদাতে। বরোদাতে আমরা দেখলাম EME Temple, Lakshmi vilas Temple, Sayaji Baug এবং আরো দুই একটা জায়গা। বরোদা দেখার পর আমরা আবার ফিরে এলাম আমেদাবাদ এ। রাত্রি তে আমরা থাকবো এই আমেদাবাদেই। পরের দিন আমাদের গন্তব্য আমেদাবাদ শহর ও তার চারপাশ। পরদিন সকালে স্নান সেরে ও জলখাবার খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম আমেদাবাদ শহর দেখতে। প্রথমেই আমরা গেলাম সবরমতী নদীর ধারে মহাত্মা গান্ধীর সৃতি বিজরিত সবরমতী আশ্রম। তারপর একে একে দেখলাম গীতা মন্দির, সর্দার স্টেডিয়াম, হাতিসিং জৈন মন্দির, কাঁকারিয়া লেক, অক্ষরধাম মন্দির এবং আরো কয়েকটি । আমেদাবাদ শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ভারতের প্রথম ১০ টি শহরের মধ্য ৬ নম্বরে। ১ নম্বর এ আছে ইন্দোর। সবশেষে রাত্রি ১০ টাই সোমনাথ যাবো বলে সোমনাথ এক্সপ্রেস ট্রেন ধরলাম। আমেদাবাদ থেকে সোমনাথ যারা যান তারা এই এক্সপ্রেস ট্রেন টিকেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬ টা তেই ভেরাবল পৌঁছে যায়। ভেরাবল থেকে সোমনাথের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার । অটো ধরে সহজেই আসা যায় অথবা প্রাইভেট কার ও সহজেই পাওয়া যায়। সকাল ৭ টার মধ্যে সোমনাথ এর হোটেলে পৌঁছে আমরা স্নান ও জলখাবার খেয়ে দিউ (Diu) যাবো বলে তৈরি হয়ে গেলাম। সকাল ৯ টা নাগাদ দিউ এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। দমনের মতোই দিউ এর মূল আকর্ষণ এর প্রকৃতি। দিউ শহরের একটা আলাদা মাদকতা আছে। ছোট্ট শহর, কংক্রিটে মোড়া পথঘাট, বাড়ি গুলিও পর্তুগিজ ধারার। দিউ এ দেখলাম দিউ Fort, ঘোঘলা বীচ, নাগোয়া বীচ, চার্চ এবং আরো বেশ কয়েকটি জায়গা। বিকেল ৪ টার সময় আবার আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। ৫ টার সময় আমরা এলাম সোমনাথ মন্দির দর্শনে। এখানে একটা কথা বলে রাখি গুজরাতে সন্ধ্যা হয় রাত্রি ৮ টা তে এবং আমেদাবাদ বাদে পুরো গুজরাতে আমিষ খাবার পাবেন না। এই সোমনাথ মন্দির অনেক ইতিহাস এর সাক্ষী। সোমনাথ আজকের নয়। মার্কো পোলোর ভারত বিবরণীতে সোমনাথের কথা বলা আছে। গজনির সুলতান মামুদ ১০২৬ এ আঘাত হানেন সোমনাথে। লুণ্ঠন হয় সোমনাথ মন্দির এর ধনরত্ন ও নানান সম্পদ। বার বার ১৭ বার আক্রান্ত হয়েছে সোমনাথ মন্দির। তবুও অনাদিকাল থেকে দেব মাহাত্ম্য আজও অমলিন সোমনাথ। ১৭০৬ এ দিল্লির বাদশা ঔরঞ্জজেবের হাতে শেষবার ধংস হয় সোমনাথ। দীর্ঘদিন পর ১৯৪৭ এর ১২ ই May সর্দার বল্লভভাই পটেলের উদ্যোগে ১৯৫০ এর ৮ ই May সাগর পাড়ে নতুন করে মন্দির হয়। নাম তার মহামেরু। ১৯৫১ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি ড: রাজেন্দ্র প্রসাদ এর হাতে দেবতা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এটি দ্বাদশ জ্যোতিলিজ্ঞের একটি অন্যতম লিজ্ঞ। সোমনাথ মন্দির আরব সাগরের পাড়েই । এর পরিবেশ খুবই সুন্দর। একবার গেলে মনে হয়, কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়ে যায়। বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়ে অবশেষে রাত্রি ১০ টার সময় হোটেলে ফিরে এলাম। হোটেলে রাত্রি তে বিশ্রাম। আগামীকাল আমাদের গন্তব্য গির অরণ্য, পোরবন্দর এবং সবশেষে দ্বারকা। পরদিন সকালে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে গিরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম। গির অরণ্যের যেটা সংরক্ষিত এলাকা তার নাম দেবালিয়া। এখানে Interpretation Zone Safari Park আছে। এখানে সিংহের দেখা অবশ্যই পাওয়া যায়। দেবালিয়া তে সিংহ দর্শন করে আমরা চলে এলাম পোরবন্দর। গির অরণ্যের আশে পাশে অনেক হোটেল আছে যেখানে শুধু মাত্র গুজরাতি খাবার পাওয়া যায়। গুজরাতি খাবার খেয়ে দেখবেন, আশাকরি খারাপ লাগবে না। এরা সাধারণত রুটিই বেশি খায়। বিশেষ করে বাজরার রুটি। গুজরাতি থালি খেয়ে আমরা সোজা চলে এলাম পোরবন্দর। পোরবন্দর এ দেখলাম কীর্তি মন্দির ও সুদামা মন্দির । পোরবন্দর থেকে চলে এলাম দ্বারকা। দ্বারকা হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থ। সপ্তপুরীর এক পুরী দ্বারকা। দ্বারকার মূল আকর্ষণ দ্বারকাধীশ মন্দির। যাইহোক আমরা চলে এলাম মন্দিরে। মন্দির দর্শন করে ও কিছু সময় ওখানে কাটিয়ে আমরা চলে এলাম হোটেলে। এটিই দ্বারকার একমাত্র হোটেল যেটা Sea beach এর ওপরই। দামে এবং মানে এটি কাঞ্চন তুল্য । দ্বারকা তে রাত্রি যাপন করে পরদিন সকালে দ্বারকার আরো কয়েকটি মন্দির দর্শন করে আমরা চললাম ভেট দ্বারকা। দ্বারকা থেকে ভেট দ্বারকার দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার । বাল্যসখা সুদামার আনা ভেট-ই নাকি দ্বারকার সাথে অলঙ্কার জুড়ে হয়েছে ভেট দ্বারকা। তবে অন্য মত ও আছে । অনেকে আবার বেট দ্বারকাও বলেন। বেট কথার অর্থ দ্বীপ। স্থানীয়দের দাবি, ভেট দ্বারকাই শ্রীকৃষ্ণের মূল দ্বারকা। তবে আজকের এই মন্দির ১৯ শতকে গড়ে উঠেছে। ভেট দ্বারকা দর্শন করে আমরা চললাম মিঠাপুর। ভেট দ্বারকা থেকে দ্বারকা যেতে গেলে রাস্তার উপরেই পরে মিঠাপুর। ভারতবর্ষের সমস্ত বড়ো নুনের কারখানায় এই মিঠাপুরে। তাই একে ভারতের Salt City ও বলা হয়। মিঠাপুর থেকে আমরা এলাম নাগেশ্বর । এটিও দ্বাদশ জ্যোতি লিজ্ঞের অন্যতম। এই মন্দির দর্শন করে আমরা চলে গেলাম জামনগর। জামনগরে রাত্রি বাস করে পরদিন সকালে দেখতে গেলাম জামনগর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ৪২ টি দ্বীপ নিয়ে গড়া ১৬২.৮৯ বর্গ কিঃমি ব্যাপ্ত ভারতের প্রথম মেরিন ন্যাশনাল পার্ক টি। এর প্রাকৃতিক শোভা অতি রমনীয়। জাডেজা রাজপুতদের দেশ এই জামনগর। আধুনিকতা ও প্রাচীনতা দুই-ই মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে এই জামনগরে। ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প সংস্থা। ভারতবর্ষের শিল্প বিপ্লব ঘটেছে এই জামনগরে। বিশ্বের বৃহতম Refining Hub টিও এই জামনগরে। জামনগর এর প্রতিটি জায়গায় Reliance Industries এর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কয়েকটি ভোজনালয়ের সামনে যখন রাত্রের খাবার খাবো বলে দাঁড়িয়ে আছি, তখন দেখলাম পাশাপাশি দুটি ভোজনালয়, একটা চীনা এবং অপর টি জাপানি । পাশাপাশি এই দুটি রেস্টুরেন্ট কে দেখে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেল । অনেক দিন আগে শুনে ছিলাম । চীনে মেয়েরা ভালো রান্না করতে পারে এবং জাপানি মেয়েরা ভালোভাবে সংসার সামলাতে পারে । যে মানুষের বাড়িতে চীনে রাঁধুনি ও জাপানি বউ আছে, সে মানুষ-ই সবথেকে সুখে থাকে। এই দুটি রেস্টুরেন্ট থেকো যারা খাওয়া দাওয়া করে বের হচ্ছে তাদের মুখে কিন্তু কোন অতৃপ্তির ছাপ দেখতে পাচ্ছিনা । তাই আমরা জাপানি রেস্টুরেন্ট এ খেতে ঢুকলাম। এখানে যে যে খাবারগুলি আমরা খেলাম তার স্বাদ খারাপ নয়। মনে মনে ভাবলাম, জাপানি মেয়েরা সংসার সামলানোর সাথে সাথে রান্নাতেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছি এই কয়েকদিন আমি গুজরাতের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঝড়ের গতিতে ছুটে বেড়ালাম এবং চেষ্টা করলাম গুজরাতের রুপ, রস ও সৌন্দর্য যথা সম্ভব উপভোগ করার। ভারতের প্রতিটি রাজ্যই সৌন্দর্যের দিক দিয়ে আলাদা আলাদা। গুজরাতও এর ব্যতিক্রম নয়। উপরি পাওনা হিসাবে পেলাম এখানকার মানুষ জনের স্বার্থহীন অকৃত্রিম আতিথেয়তা। সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি নেই তার খোঁজ না নিয়েই অচেনা অজানা কিছু মানুষ অম্লান হেসে আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সমস্ত সরল মানুষ গুলির মুখচ্ছবিও আমার সৃতির মধ্য বন্দী হয়ে রইল। এই সমস্ত ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। ঘুম ভাঙল সকাল ৬ টার কিছু পরে। দুপুর ১২.৫০ -এ চেন্নাই এর বিমান ধরতে হবে। যথা সময়ে বিমানবন্দরের দিকে রওনা হলাম। মনে মনে জামনগর এর সাথে গুজরাতকেও বিদায় জানিয়ে চেন্নাই উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলাম।
মার্কিন কবি Wallace Stevens এই কথা গুলি দিয়েই এই ভ্রমণ কাহিনীটির সমাপ্তি ঘটালাম ।” The most beautiful in the world is, of course, the world itself. ” – Wallace Stevens গুজরাত ভ্রমণ এখানেই শেষ করলাম। আমি সাহিত্যের ছাত্র নই। তাই ভাষার মানও খুব একটা উঁচু স্তরে নিয়ে যেতে পারিনি। যেটুকু পেরেছি, সেটুকু সোজা কথায় বলার চেষ্টা করেছি। ভালো বা খারাপ যায় লাগুক না কেন, আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।