eaibanglai
Homeএই বাংলায়গুসকরায় শেষ হলো নাট্য প্রতিযোগিতা

গুসকরায় শেষ হলো নাট্য প্রতিযোগিতা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হলো নাটক। একটা সময় কলকাতার সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য নাট্যদল। একদল নাট্য পাগল যুবক-যুবতীর সৌজন্যে পাড়ার যেকোনো সামাজিক উৎসবের অন্যতম অঙ্গ ছিল নাটক। প্রথমে আর্থসামাজিক সমস্যা এবং পরে সর্বগ্রাসী মোবাইলের দৌলতে অনেক নাট্যদল বন্ধ হয়ে গেলেও গত তেত্রিশ বছর ধরে নিজেদের নামের অর্থকে সার্থক করে শিল্পীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চলেছে গুসকরা ‘শিল্পী সমন্বয়’। শুধু নিজেরাই নাটক করে ক্ষান্ত থাকেনি এলাকার নাট্যপ্রিয় মানুষদের নাট্য পিপাসা মেটানোর জন্য গত সতেরো বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক দলকে নিয়ে আয়োজন করে চলেছে নাট্য প্রতিযোগিতার। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটলনা।

ট্রেন বিভ্রাটের জন্য নির্ধারিত তারিখের পরিবর্তে ১৮-২০ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিন ধরে নয়টি নাটক নিয়ে গুসকরা বিদ্যাসাগর হলে আয়োজিত হয় ‘বিমল মুখার্জ্জী’ স্মৃতি নাট্য প্রতিযোগিতা। এরমধ্যে সাতটি ছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাতটি বহিরাগত দলের ও দুটি নাটক ছিল আয়োজক সংস্থা ‘শিল্পী সমন্বয়’ গোষ্ঠীর।যদিও সংস্হার নাটক দুটিকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখা হয়। তারিখ পরিবর্তন হলেও নাট্য পিপাসু মানুষের উৎসাহের কোনো ঘাটতি হয়নি। তিন দিন ধরে হলে ভিড়ই তার প্রমাণ।

প্রতিযোগিতা শুরু হয় আয়োজক সংস্থার শিল্পীদের অভিনীত ‘অবয়ব’ নাটক দিয়ে এবং শেষ হয় তাদেরই অন্য নাটক ‘দ্বিতীয়ার চাঁদ’ দিয়ে। শুরুতেই সংস্থার শিল্পীরা অভিনয়কে যে উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন সেই রেশ বজায় রেখেছিল প্রতিযোগিতার জন্য নির্ধারিত মাঝের সাতটি নাটক দল। প্রতিটি নাটক এত উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যায় যে বিজয়ী দল নির্ধারণ করতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ে যান দুই বিচারক অপূর্ব দে ওরমাপতি হাজরা।

শেষ পর্যন্ত অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণের পর প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে কৃষ্ণনগর সিঞ্চন গোষ্ঠীর ‘সমুদ্র মন্হন’ নাটক। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রানীকুঠি জিয়নকাঠির ‘আত্মরতি’ এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ব্যান্ডেল আরোহী গোষ্ঠীর ‘যতীনবাবু শুনছেন’ ও চন্দননগর সংস্হিতি গোষ্ঠীর ‘মিশন-৭২’। উপস্থিত দর্শকরা যেভাবে আয়োজক সংস্থার ‘দ্বিতীয়ার চাঁদ’ নাটকের প্রশংসা করেছেন তাতে প্রতিযোগিতায় নাটকটি থাকলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারত।

অনুষ্ঠানের শেষে বিজয়ী দলগুলির হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এছাড়াও প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও সহ অভিনেতা, অভিনেত্রী ও সহ অভিনেত্রী, পরিচালক সহ অন্যান্যদের পুরস্কৃত করা হয়। ‘শিল্পী সমন্বয়’ এর পক্ষ থেকে দক্ষিণেশ্বর নট কথা গ্রুপের কর্ণধার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। গুসকরা শহরের মধ্যে ২০২২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যেসব ছাত্রছাত্রীরা নব্বই শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সেরকম মোট ৪৫ জনকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।

এর আগে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন করেন বরানগর স্ববাক নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক নীলিমা চক্রবর্তী। সংস্হার ‘সাতত্য’ পত্রিকার আবরণ উন্মোচন করেন বিধানসভার প্রাক্তন মুখ্য সচেতক মহ: মসীহ।

প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী, ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগম, নাট্য একাডেমির সদস্য মলয় ঘোষ, দক্ষিণেশ্বর ‘নটকথা’ গ্রুপের কর্ণধার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ললিত কোনার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংস্থার সভাপতি ডা: শ্যামল দাস এই প্রতিযোগিতার আয়োজনের কারণ ব্যখ্যা করেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার আশা আগামী দিনে সবার সহযোগিতায় এই প্রতিযোগিতা আরও উচ্চমার্গে পৌঁছে ‍যাবে।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘শিল্পী সমন্বয়’ এর সম্পাদক সুব্রত শ্যাম বললেন – বর্তমান পরিস্থিতিতে নাটক চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। তারপরও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো অনেক দল যেভাবে নাট্য অনুশীলনী করে যাচ্ছে সেটা খুবই প্রশংসনীয়। সরকার যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে খুব উপকার হয়।

অন্যদিকে কুশল বাবু বললেন – যেসব সংস্থার জন্য বাইরের এলাকায় গুসকরার সাংস্কৃতিক জগতের একটা আলাদা পরিচিতি আছে তার অন্যতম হলো ‘শিল্পী সমন্বয়’ গোষ্ঠী। দীর্ঘদিন ধরে এবং ধারাবাহিক ভাবে এই সংস্থা গুসকরার বুকে সাস্কৃতিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমার আশা এদের দেখাদেখি অন্যান্য সংস্থাগুলো এগিয়ে আসবে। পুরসভার পক্ষ থেকে যদি কিছু করা যায় সেই ব্যাপারে অবশ্যই আমরা ভাবনা চিন্তা করব।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments