eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুজোর ঘট আনলেন মুসলিম গৃহবধূ

দুর্গাপুজোর ঘট আনলেন মুসলিম গৃহবধূ

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- সিনেমার পর্দায় আমির, সলমান, শাহরুখদের বারবার বিভিন্ন পুজোয় মেতে উঠতে দ্যাখা গ্যাছে। সেখানে তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের পরিবর্তে শিল্পীর পরিচয় বড় হয়ে উঠেছে। জামালপুরে মেহমুদ খান বা গলসীতে ফজিলা বেগমকে দুর্গাপুজোয় উদ্বোধন করতে দ্যাখা গ্যাছে। বীরভূমের পাথরচাপড়িতে হিন্দু-মুসলিমদের একসঙ্গে দরগায় চাদর রাখতে দ্যাখা যায়। ইদের সময় হিন্দু বন্ধুদের আদরের অত্যাচার সহ্য করতে হয় মুসলিম পরিবারগুলোকে। ব্যাণ্ডেল চার্চে বা কেকের দোকানে ভিড় দেখে বোঝা যায়না বড়দিন মূলত খ্রিষ্টানদের অনুষ্ঠান। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মাঝে মাঝে দু’একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও সারা বাংলা জুড়ে প্রতিবছরই এই ঐক্যের দৃশ্য দ্যাখা যায়।

তবে সম্ভবত সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গ্যালো সপ্তমীর দিন। কলাবৌয়ের দোলা বহন করতে দ্যাখা গ্যালো মুসলিম গৃহবধূকে। কখনো হাতে তার মঙ্গল ঘট। একদল উগ্র সাম্প্রদায়িক মানুষের বিষবাষ্পে সক্রিয় হয়ে কম্যুউনালিজম যখন মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন সত্যিই এএক বিরল দৃশ্য। এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল গুসকরা শহরের একাংশ এবং শহরে আগত মানুষ।

গত ২ রা অক্টোবর ছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন। গুসকরার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সঙ্গে ৯ নং ওয়ার্ডেও হচ্ছে দুর্গাপুজো। নিয়ম মেনে আনা হচ্ছে দোলা সহ ঘট। সেখানেই দ্যাখা গ্যালো অন্যান্যদের সঙ্গে দোলা কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন গুসকরা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বেলী বেগম। কখনো দ্যাখা গ্যালো তার হাতে রয়েছে মঙ্গল ঘট। দৃশ্যটি দেখে অনেক পথ চলতি মানুষ থমকে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দৃশ্যটি ক্যমেরাবন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে এই প্রথম নয় এর আগেও বেলী দেবীকে বিভিন্ন উৎসবে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দ্যাখা গ্যাছে।

ধর্ম নিয়ে নবীন প্রজন্ম মাথা না ঘামালেও বিষয়টি নিয়ে প্রবীণদের অধিকাংশ জনই খুশি। দু’এক জন বিরূপ মন্তব্য করলেও অধিকাংশের বক্তব্য – এটাই আমাদের দেশের সঙ্গে গুসকরার প্রকৃত চিত্র। এখানে প্রতিটি উৎসবে সবাই মিলে আনন্দ করে।

যিনি এই বিরল দৃশ্য ঘটালেন সেই বেলী বেগম নিস্পৃহ কণ্ঠে বললেন – আমি তো নতুন কিছু করিনি। ধর্ম ও উৎসব এক নয়। ধর্মের দিক দিয়ে আমি মুসলিম হলেও আমার প্রথম পরিচয় আমি বাঙালি। আমি বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি যেখানে সবার অধিকার আছে। উৎসবের সময় আমাদের দেশে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন বলে আলাদা ভাবে কিছু চেনা যায়না। সবাই একসঙ্গে মেতে ওঠেন। প্রসঙ্গত বেলী দেবীর পরিবারের সদস্যরা বা পাড়ার লোক এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখছেন না।

পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন- গুসকরায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে পালন করেন। সেখানে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড় উৎসবের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। এই দৃশ্য বাংলা সহ এই দেশের প্রতিটি কোণে দ্যাখা যায়। এটাই হলো বাংলা তথা ভারতবর্ষ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments