eaibanglai
Homeএই বাংলায়তৃণমূলের নব জোয়ারে কি শিল্পাঞ্চলে 'ভাটা', আসল জোওয়ারে ভাসছে কংগ্রেস ?

তৃণমূলের নব জোয়ারে কি শিল্পাঞ্চলে ‘ভাটা’, আসল জোওয়ারে ভাসছে কংগ্রেস ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নব জোয়ার কর্মসূচীর মাঝেই কর্ণাটকের ভোটের ফলের দরুণ এবার নাকি জেলায় জেলায় কংগ্রেসের জোয়ার এসেছে। ফলে, এবার ঠান্ডা মাথায় ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বেশ কিছু জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব, যার মধ্যে অন্যতম পশ্চিম বর্ধমান জেলা। ওদিকে, বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃনমূল, বিজেপি ছেড়ে জাতীয় কংগ্রেসের পতাকার তলায় ভিড় জমাচ্ছেন বহুজন। রবিবারই সেখানকার ছাতনা ব্লকের তেঘরি পঞ্চায়েত এলাকার ৫০ টি পরিবার তৃনমূল, বিজেপি ছেড়ে সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তৃনমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ১৮ মে বাঁকুড়া জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে আসছেন। তার আগেই আচমকা এই বিপর্যয় ধামাচাপা দিতে দলীয় নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অল্পদিন আগেই সারেঙ্গা, রাইপুর ব্লকে ২০০ পরিবার তৃনমূল কংগ্রেস ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিল। দলছাড়া এইসব দীর্ঘদিনের তৃনমূল পরিবারগুলির অভিযোগ তৃনমূলের স্থানীয় নেতাদের অত্যাচার, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই তাদের এই পদক্ষেপ।

পশ্চিম বর্ধমানের দলবদলের পূর্বাভাসে বোঝা যাচ্ছে, ‘আঙুল ফূলে কলাগাছ’ কিছু তৃনমূল নেতার জমিদার সুলভ আচরন আর সিপিএম – বিজেপির সাথে সমান স্বচ্ছন্দ একশ্রেণীর স্থানীয় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে ওঠবস করা নেতাদের বেআবরু ‘কামানোর ধান্দা’য় ঘর ভাঙছে শাসক তৃণমূলের।

বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, শনিবার দুপুরের পর থেকেই জেলার কয়েকজন কংগ্রেস নেতার মোবাইল ফোনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র বেশ কিছু স্থানীয় নেতা, সমর্থক এবং ক্যাডার সরাসরি কথা বলেছেন। তারা নাকি কংগ্রেসে ফিরে আসা এবং যোগদানের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন।

“অনেকেই যোগাযোগ করছেন কাল থেকে। তারা দুর্গাপুরের বেনাচিতি, গোপালমাঠ, ইস্পাত নগরী এমনকি সিটিসেন্টার, বিধাননগর থেকেও কংগ্রেসের জয়ে আমাদের জাতীয় নেতা রাহুল গান্ধীকে অভিনন্দন তো জানাচ্ছেনই, কংগ্রেসে যোগদান করার ইচ্ছাও প্রকাশ করছেন। তারা কারা সেসব নাম, ঠিকানা আমরা এখনি প্রকাশ করবো না। জানাজানি হলে তারা তৃনমূলের হাতে আক্রান্ত হতে পারে।” তবে, তিনি জানান, “ওই দুটি দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা-অপমানের দরুণই ওরা তৃণমূল, বিজেপি ছেড়ে জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা হাতে নিতে চাইছেন,” বলে দাবি কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর। দেবেশ বলেন, “আসলে পাড়ায় পাড়ায় নেতা সেজে থাকা ঠিকাদার, দালাল, শহরের তিন চারজন ব্যবসায়ীর মাতব্বরি আর কিছূ গুন্ডাদের হাত থেকে তারা এবার বাঁচতে চাইছেন। তারা এটাও বুঝেছেন- জাতীয় কংগ্রেস ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই।” দেবেশ ছাড়াও জেলার বাইরের প্রদেশ নেতৃত্বও এই আচমকা যোগদানের ঝোঁক যে গত ২৪ ঘন্টায় বেড়েছে, তা বেশ টের পাচ্ছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য তরুণ রায় বলেন, “এসব এখন হবে। তবে, আমাদেরকে সমঝে চলতে হবে। ঝাঁকের কই হয়ে যারা হঠাৎ করে দলে আসতে চাইছে, তাদের সবার জন্য তৃণমূল বা বিজেপির মতো হাট করে দরজা খুলে দিলে আগামী দিনে আমাদের সমস্যা বাড়বে।” তিনি আরো বলেন, “এটা শুধু কর্ণাটকের ফলাফল নয়। এই বাংলার সাগরদিঘী উপনির্বাচনে বাইরন বিশ্বাসের জয়ের পর থেকেই আমরা আঁচ পারছিলাম। কর্ণাটকের ফল আসলে তৃণমূলের নব জোওয়ার কর্মসূচীকে নব ভাটায় পরিণত করে জোওয়ার এনেছে কংগ্রেসই।”

কংগ্রেস নেতাদের ধারণা, দেশে তো বটেই, দীর্ঘ পাঁচ দশক পর এ রাজ্যেও কংগ্রেসের প্রকৃত সুদিন আসতে চলেছে। কংগ্রেস এমনটা ভাবলেও, বাস্তবে কি তা আদৌ হচ্ছে? বেনাচিতি- ভিরিঙ্গি এলাকার এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বললেন, “আমার কাছে খবর আছে, কাল সন্ধ্যার পর থেকে দুর্গাপুর- আসানসোল- রাণীগঞ্জের বিভিন্ন ব্লক তো বটেই, পুরসভার বেশকিছু কাউন্সিলর, প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবেশ চক্রবর্তীর নম্বরে ডায়াল করছে।” তবে তার কথায়, “কংগ্রেস যতটা লাফাচ্ছে, এ রাজ্যে আদৌ ততটা উচ্ছ্বাস নেই। ওরাই পার্টি অফিসের সামনে নিষিদ্ধ চকলেট বোমা ফাটাচ্ছে। ওদের তো কোনো সংগঠনই নেই। যে কটা লোক আছে, তাদের নিজেদের ভেতরেও কোন্দল কম নেই।”

তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য নিযুক্ত জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। একটি সূত্র জানায়, “জেলায় শনিবার সন্ধ্যার পর দ্রুত বদলাতে থাকা রাজনৈতিক চাঞ্চল্য, বিশেষতঃ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের মুখেই এমনটা হওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে নরেন্দ্রনাথের। তিনি নিজেও বিচলিত, তাই এখনই এনিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে, দলের অন্যতম জেলা নেতা, প্রাক্তন জেলা সভাপতি উত্তম মুখার্জি রবিবার বলেন, “যারাই তৃণমূল কংগ্রেসে আছেন, তারা প্রায় সকলেই কংগ্রেস থেকেই এসেছেন, আমাদের মতো। কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয় নিশ্চিতভাবে অভিনন্দন যোগ্য, কারণ তারা বিজেপির মতো অপশক্তিকে দক্ষিণ ভারত ছাড়া করেছে।” তিনি আরো বলেন, “যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাদের নেত্রী বলে মনে করেন, তারা কখনোই অন্য কোনো দলে যেতে পারবেন না। এসব নিছক গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।

কংগ্রেসের সাথে সিপিএমের এখন জোটের দোস্তি। কর্ণাটক জয়ে কংগ্রেসের পথে এই ‘মিছিল’ দেখে জোট সঙ্গী সিপিএম কি ভাবছে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার রবিবার বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসে, বিজেপিতে চোর বাটপাড়দের সাথে ভালো মানুষেরা আর কিছুতেই থাকতে পারবেনা। ওরা তাই ভালো জায়গা, ভালো বিকল্প খুঁজছেন। স্বভাবতঃই তারা কংগ্রেসের পথে।” পাশাপাশি পঙ্কজ আরো বলেন, “রবিবারেই দুর্গাপুরেরই জেমুয়াতে আমাদের একটি সভায় বহু তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী, সমর্থক এসে ভিড় করেন। আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থাটা আলাদা রকম। তাই আমরা এদিন ওদের হাতে দলীয় পতাকা দিতে পারিনি বটে, তবে ওরা যে এখন থেকে আমাদের সাথেই রইলেন, তা তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments