eaibanglai
Homeএই বাংলায়কাউকে আড়াল করতেই শিল্পপতি দেবরাজ মজুরের লাইন থেকে বিতাড়িত ?

কাউকে আড়াল করতেই শিল্পপতি দেবরাজ মজুরের লাইন থেকে বিতাড়িত ?

কেউকেটাদের আড়াল করতে শিল্পপতি দেবরাজকে মজুরের লাইন থেকে সরালো তৃণমূল

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- রাষ্ট্রায়ত্ব দুর্গাপুর ইস্পাতে নিয়োগ কেলেঙ্কারি থেকে দলকে বাঁচাতে এবার দেবরাজকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে সক্রিয় তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শ্রমিক সংগঠন কারখানা কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ঠিকা শ্রমিকের তালিকা থেকে মুছেই দিল শিল্পপতি দেবরাজ চক্রবর্তীর নাম। দলের শীর্ষ নেতা এবং রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বিষয়টিতে সাফ জানিয়ে দেন, “এইসব উৎপাত সহ্য করা হবে না। ওকে ইমিডিয়েট বসিয়ে দিতে বলেছি। কি করে এই রকম লোক দলের নাম করে ঠিকা শ্রমিক সেজে কারখানায় ঢুকে যাচ্ছে, সেটাও খোঁজ নিতে বলেছি।”

দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’কে মলয় ঘটক এমন নির্দেশ দেওয়ার পরই দুর্গাপুরের শিল্পপতি দেবরাজ চক্রবর্তীর নামে ইস্যু করা দুর্গাপুর ইস্পাতের গেট পাশটি বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু,কোন ছুতোয় একজন শিল্পপতি ঠিকা শ্রমিকের খোলস পরে মজুরের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লেন, তা নিয়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন দেড় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোন রিপোর্ট জমা করেনি।

কেন ? গড়িমসি ? নাকি, আরো অনেক ‘সত্যি’কে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ? কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে ? প্রশ্ন আরো আছে- ‘এইসব দেবরাজেরা যদি কেঁচো হয়, তবে কেউটে কারা কারা ? তাদের কি তবে দুধ কলা দিয়ে পুষছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ? তারা কি কেউকেটা ?

“২০২১ তেও যে বিজেপির প্রকাশ্য নেতা ছিলো, এমন বড় ও প্রভাবশালী এবং অর্বুদপতি এক শিল্পপতি ব্যবসায়ী মাসিক মাত্র হাজার দশেক টাকার ঠিকা চাকরিতে ঢোকে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ও তৃণমূল ইউনিয়নের যোগসাজসে। মনে করা হচ্ছে যে এই ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র ও অসৎ উদ্দেশ্য আছে,” দাবি ডি এস পি’র সিটু ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পদক সৌরভ দত্ত’র।

“রাষ্ট্রায়ত্ব ডিএসপিতে যা ইচ্ছে তাই করছে টিএমসি। যেখান সেখান থেকে ধরে এনে টাকা নিয়ে লোক ঢোকাচ্ছে। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে। দেবরাজের মতো ধান্দাবাজদের শ্রমিক সাজিয়ে কারখানায় ঢোকাচ্ছে। এসব আমরা বরদাস্ত করবো না। কে ঢুকছে, কোথা থেকে আসছে, সব আমরা চেক্ করবো,” বললেন বিজেপি নেতা এবং দুর্গাপুর (পশ্চিম)’র বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই। তবে, দেবরাজ ইস্যুতে প্রকাশ্যে বেশি ঘাঁটাঘাটি করতে যথেষ্ট ইতস্তত করছে বিজেপি। কারণ, দেবরাজ তো তাদেরই ঘরের ছেলে! ২০১১ তে ঘটাকরে তাকে দলের সম্পদ বানিয়ে ঘরেতোলে গেরুয়া শিবির, কোনো রাখঢাক না করেই। একসময়ের সিপিএম ক্যাডার দেবরাজ মওকা বুঝে টি এম সি তে পিছল কেটে ঢুকে পড়ে। হয়ে যায় তৎকালীন পুরসভার এক মেয়রের কোলের ছেলে। সর্বক্ষণ তাকে ওই মেয়রের অফিস চেম্বারেই ঠাই বসে থাকতে দেখাযেত। তারপর, হাওয়া বুঝে সটান বিজেপিতে।

এখন আবার পদ্মবন থেকে ঘাসফুল।

“এইরকম দেবরাজের মতো আরো অন্ততঃ এক ডজনের নাম এক নিঃশ্বাসে বলে দেওয়া যায়- যারা দিনের বেলায় টিএমসি আর রাতের বেলায় বিজেপি। ঠগ বাছতে ওদের গাঁ উজাড় হয়ে যাবে,” মতামত জেলা কংগ্রেসের সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর। তার যুক্তি, “পেটের দায়ে সাধারণ মজুরেরা জামা বদল করে থাকে, নেতা বদল করে থাকে অনেক সময়। কিন্তু, এরকম দেখিনি- দলে দলে ঘুরে ফিরে মধু খাওয়া শাঁসালো লোকজন কিনা ঠিকামজুর সেজে কারখানায় ঢুকছে ! আসল মতলবটা বুঝতে খুব কি অসুবিধা হয় কারো ? খোঁজ নিন- ওরকম লোককে কে কে হঠাৎ আমদানি করল ? ও কি শ্রমিক আন্দোলন করে আসা অপরিহার্য কেউ ? ওই ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নে আরো বেশ কিছু নাম পাচ্ছি – যারা পেশায় হয় ব্যবসায়ী, নয়তো আবার শহরেই চাকরি দেওয়ার দোকান চালায়, কেউ কোটিপতি ঠিকাদার – এরাও আছে। তারা ঠিকা মজুরদের সংগঠনে কি করে ? কিসের লোভে ?”

মুখে এসব বললেও, রাস্তায় নেমে বা প্রশাসনিক স্তরে সেভাবে প্রতিবাদই হোক বা প্রতিরোধ কোনটাই করতে দেখা যায়নি কারখানার প্রধান শ্রমিক সংগঠন সিটু বা তার দোসর ইনটাককে। তবে, বৃহত্তর প্রতিবাদে পথে না নামলেও, দেবরাজ ইস্যুতে ঝাঁঝের সাথে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও দুর্গাপুর (পূর্ব)’র বিধায়ক প্রদীপ মজুমদারের সামনেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারই দলের মহিলা সেলের সদস্যরা। গত সপ্তাহে। ইস্পাতনগরীতে। মন্ত্রী গোটা বিষয়টিতে ছিলেন নির্বিকার।

“আসলে উনি ভদ্র জন। কাদা ঘাঁটতে চান না। এসব কারবার এড়িয়েই চলেন,” মন্তব্য এক আইএনটিটিইউসি নেতার। তার আরো যুক্তি, “আসলে এইসব এখন আসানসোল, পাণ্ডবেশ্বরে বসে ঠিক হয়। শহর দুর্গাপুরের নেতারা, এ ব্যাপারে কাঠের পুতুল মাত্র।”

ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নটির সভাপতি শ্রমমন্ত্রীর ভাই অভিজিৎ ঘটক, আর দেবরাজকে আচমকা বিজেপি থেকে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে, দায় ঝাড়তে এ বিষয়ে নরেন্দ্রনাথ বলে দেন, “কি করে দেবরাজ ঢুকে পড়লো জানিনা। খোঁজ নিতে হবে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার যাত্রায় দুর্গাপুরের মেলাময়দানে, অভিভাবক দাদার সাথে এক শারিতে বসে অভিজিৎ ঘটক বলেন, “দেবরাজ ইস্যুতে ডিএসপিকে যা বলার আমরা বলে দিয়েছি। কোনো কন্ট্রাকটর সংস্থা ওই ব্যক্তির নামে গেট পাশ দেওয়ার আবেদন করে বলে জেনেছি। ওসব একেবারেই আলাও করছিনা। দেবরাজের নাম নথিভুক্ত হয়েছিল ইস্পাত নগরীতে পথঘাট, ঘরবাড়ী মেরামতির জন্য নিযুক্ত একটি সংস্থার ঠিকা মজুর হিসাবে। কিন্তু তিনি অনায়াসে ঢুকছিলেন ইস্পাত কারখানার ভেতরেও। উল্লেখ্য, শহরের পাশে হেতেডোবা শিল্পতালুকে একটি লোহা কারখানার মালিক এই দেবরাজ। সেখানেও তারি মতো মজদুরি করেন বেশ কিছু ঠিকা শ্রমিক।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments