eaibanglai
Homeএই বাংলায়পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

সংবাদদাতা দুর্গাপুর, আসানসোল:-সারাদেশের সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলা, আসানসোল শহর তথা শিল্পাঞ্চল জুড়ে বুধবার সাড়ম্বর ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা ভাষা শহীদ দিবস। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের ঢাকার রাজপথ তাদের বুকের রক্তে লাল করে শহীদ হয়েছিলেন রফিক,জব্বার,সালাম,বরকত সফিউররা। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম নজির এটি। বাংলাদেশের গৌরবময় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সমগ্র বিশ্বের অনেক দেশে এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।

সারাদেশের সাথে সাথে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারে অবস্থিত সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন ও দুর্গাপুর পৌর নিগমের যৌথ প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। এদিনের এই অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদ স্মারকে মালা অর্পণ করেন দুর্গাপুর মহকুমা শাসক ডাক্তার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় সহ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এদিনের এই অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধাঞ্জলি, আবৃতি,গান, আলোচনা, কুইজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সমগ্র অনুষ্ঠানটি দুর্গাপুর তথ্য ও সাংস্কৃতি আধিকারিক সমম্বিতা মাইতির কুশল পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।

শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর এডিসন রোডের ভাষা শহীদ স্মারক স্মৃতি ময়দানে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়। সকালে ভাষা শহীদ স্মারক বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যে দিয়ে মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ‘মোদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলাভাষা কিম্বা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গান ছাড়াও আরও অনেক দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিভিন্ন সঙ্গীত দলের শিল্পীরা এই দিনটির তাত্পর্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা। অনেক কবি স্বরচিত কবিতাও পাঠ করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কাকলি দাসগুপ্ত।

অন্যদিকে আসানসোলে ভাষা শহীদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির তরফে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস হিসেবে পালন হয়ে থাকে। তাই এই উপলক্ষে এদিন আসানসোল কল্যাণপুর হাউসিংয়ে ভাষা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, সমাজকর্মী জয়া মিত্র, ডাঃ অরুনাভ সেনগুপ্ত, প্রণতি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরঞ্জিত সুলেখাপুত্র, অমল বন্দ্যোপাধ্যায় সহ প্রায় দুশো জন কবি ও সাহিত্যিক। এছাড়াও ছিলেন অধ্যাপক ডঃ সন্দীপ ঘটক, ডঃ আভা মল্লিক আসানসোল পুরনিগমের বোরো চেয়ারম্যান অনিমেষ ওরফে অনির্বাণ দাস, কাউন্সিলর অর্জুন মাঝি সহ অনেকে।

আসানসোলঃ- পশ্চিম বর্ধমান জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগ। আসানসোলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ও আদিবাসী নৃত্যের কর্মশালা। পশ্চিম বর্ধমান জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে বুধবার আসানসোলের কন্যাপুরে আদর্শ শ্রমিক মঙ্গল কেন্দ্রের সভাকক্ষে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এছাড়াও এদিন আদিবাসী নৃত্যের কর্মশালা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো ৷ প্রদীপ জ্বালিয়ে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শ্রম ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরি, আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলম, পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি বিষ্ণুদেও নুনিয়া, আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়, উপ শাসক ও উপ সমাহর্তা তারকনাথ চন্দ্র, রাজ্যের উপ তথ্য অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ভারপ্রাপ্ত জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক আজিজুর রহমান ও আসানসোল মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক নরেন্দ্রনাথ দত্ত।

আসানসোলঃ- আসানসোল পুরনিগমের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন। আসানসোল পুরনিগমের উদ্যোগে বুধবার যথাযথ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এদিন এই উপলক্ষে আসানসোল পুরনিগমের আশুতোষ হলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছিলেন মেয়র বিধান উপাধ্যায়, পুর কমিশনার রাজু মিশ্র, পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি দপ্তরের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়, ওএস বীরেণ অধিকারী সহ একাধিক কাউন্সিলার ও কর্মীরা।
মেয়র সহ অন্যান্যরা বলেন, এই দিনটার সবার কাছে একটা আলাদা গুরুত্ব আছে।

রুপনারায়নপুর:- রুপনারায়নপুরে সামাজিক সংগঠন ” ভাবনা” র উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। পরম্পরা বজায় রেখেই আসানসোলের রূপনারায়নপুরের সামাজিক সংগঠন “ভাবনা”র উদ্যোগে মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত ২১ ফেব্রুয়ারির সন্ধিক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান হল রূপনারায়ণপুরে। গত আট বছর ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ব্যতিক্রমী এই আয়োজন শিল্পাঞ্চলের মানুষের কাছে বিশেষ আগ্রহের হয়ে উঠেছে। এদিনও রাত সওয়া বারোটা বাজলেও বহু ভাষাপ্রেমী মানুষ ঐ অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন। শহীদ স্মরণে স্মারকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বক্তব্য, গান, আবৃত্তি, কবিতায় এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। এদিন সকলের হৃদয় জয় করে নেন রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসরিন সুলতানা। তিনি প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের সঙ্গেই উদাত্ত কণ্ঠে পরিবেশন করেন, “ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা… যার রেশ থেকে যায় অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত। সংগঠনের সভাপতি কবি আবৃত্তিকার ও সাংবাদিক বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব মন্ডল, রাজা চট্টোপাধ্যায়, টিয়া চট্টোপাধ্যায়, নিরাপদ পাল, অভয় মন্ডল, সহ অন্যান্যদের ঐকান্তিক চেষ্টায় এই আয়োজন সফল হয়। এদিন বিশেষ করে পিস ওয়েলফেয়ারের ছাত্র-ছাত্রীদের আবৃত্তির কোলাজ বাংলা ভাষাকে নিয়ে অসাধারণ। সংগীতশিল্পী সুকান্ত মজুমদার, স্বর্ণাভ সাহার সঙ্গীত শ্রোতাদের অবশ্যই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে উৎসাহিত করবে। বাবলু মাজি, গোরাচাঁদ মন্ডল, সংক্ষিপ্তা মাহাতার আবৃত্তি প্রশংসনীয় ছিল। তপন মাহাতা ও শুভদীপ সেনের বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারীর অভিজ্ঞতা নিয়ে বক্তৃতা শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে।

পাঠভ্যাস গড়ে তোলা এবং বজায় রাখার কাজে সহায়তার লক্ষ্যে, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ও রেড বুক ডে কে সামনে রেখে ১নং বিদ্যাসাগর এভিনিউ তে, হিন্দুস্থান স্টীল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন ডি.এস.পি. ইউনিটের পরিচালনায়, কমরেড অজিত মুখার্জি নামাঙ্কিত একটি পাঠকেন্দ্র চালু করা হলো । এটির উদ্বোধন করলেন CITU জেলা সভাপতি কমরেড প্রবীর মন্ডল। এই পাঠকেন্দ্র টি সমৃদ্ধ করতে সকলের কাছেই আবেদন করা হয় সাধ্য অনুযায়ী বই দান করার জন্য। ইতিমধ্যেই ২৫ জনের বেশি এই পাঠকেন্দ্রে বই দান করছেন।

কুসংস্কার,সরাসরি ধর্মীয় প্রচার ও স্থুল সংস্কৃতির নিদর্শন সম্বলিত পুস্তক ছাড়া বাংলা, হিন্দি বা ইংরাজী ভাষায় লিখিত যে কোন বই এর সাগ্রহে ,অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করা হবে। এই উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এর অধ্যপক ‌ডঃ সৌভিক মুখোপাধ্যায়। আলোচ্য বিষয় – ভাষা ও জাতিস্বত্বা উনিশ ও বিশ শতকে ভারতের অভিজ্ঞতা,কয়েকটি ঘটনা।

বাঙালির গর্ব এটাই বাংলা ভাষায় দেখিয়েছিল তার সন্তান তাকে রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিতে পারে আর অন্য কেউ নয় । কথায় আছে নিজের মাতৃভাষাকে সম্মান করো , লালন করো , পালন করো নাহলে একদিন ইতিহাস তোমাকে উপহাস করবে । বাঙালি দেখিয়েছে তার প্রাণ দেওয়ার ইতিহাস আজ বিশ্বের বুকে মাতৃভাষা দিবস এনে দিয়েছে । যে ভাষায় শিশু তার মায়ের কন্ঠে শোনা ভাষা বলতে শুরু করে , যে ভাষায় শিশু তার প্রথম শব্দ উচ্চারণ করে সেই ভাষাই তার মাতৃভাষা ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments