কুমারমঙ্গলম পার্ক সন্ধ্যের পরই নিষিদ্ধ পল্লীতে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর

18094

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীতে তিন দশকেরও বেশি আগে তৎকালীন ইস্পাত মন্ত্রী কুমার মোহন কুমার মঙ্গলম নামে একটি শিশু উদ্যান পার্কের শুভ উদ্বোধন হয়েছিল। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পক্ষ থেকে তৎকালীন আধিকারিকরা এই পার্কর্টিকে সুসজ্জিত করে এবং তা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহার যোগ্য করে তুলেছিলেন। ইস্পাত নগরীর মধ্যে অবস্থিত এই পার্কটি প্রথম থেকেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসতেন এই পার্কটির সৌন্দর্য দেখতে। কিন্তু কালের কালচক্র দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবস্থা এক দশক আগে যখন রুগ্ন ছিল তখন এই পার্কটির দেখভাল করার জন্য এক বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম প্রথম সেই সংস্থার পক্ষ থেকে পার্কটিকে সুসজ্জিত এবং সুরক্ষিত রাখা হয়েছিল কিন্তু কিছু বছর আগে অব্দি। কয়েক বছর আগে ইস্পাত কর্তৃপক্ষ লিজ দিয়ে দেওয়া এই সংস্থার কাছ থেকে মোটা টাকা বকেয়া হওয়ায় তাদেরকে নোটিশ করে। বেসরকারি ওই সংস্থার পক্ষ থেকে আদালতের দ্বারস্থ হয়, জানানো হয় যে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে বৈমাত্রিক সুলভ আচরণ করছে। দীর্ঘদিন আইনি লড়াইয়ের পর একটা সময় আদালত ইস্পাত কর্তৃপক্ষ পক্ষেই রায় দান করেন। কিন্তু তার পাল্টা হিসেবে ওই বেসরকারি সংস্থাটি উচ্চতর আদালতে আবেদন জানান। ঠিক তারপর থেকেই পার্কের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ইস্পাত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক ও পানীয় জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় পার্কর্টিতে। এই অবস্থাতেই পার্কর্টি চলছে প্রায় দু’বছর ধরে। সূর্য ডুবলেই জোড়ায় জোড়ায় যুবক-যুবতীদের আনাগোনা শুরু হয়। এই পার্কর্টির ভেতরে কোনরকম পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকলেও বেসরকারি এই পার্ক পরিচালন সংস্থাটি টিকিট কেটে যুবক-যুবতীদেরকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেন। গুট গুটে অন্ধকারের মধ্যেই যুবক-যুবতীরা লিপ্ত হয় অসামাজিক কার্যকলাপে। ইস্পাত নগরী ভেতরের এই পার্ক হওয়ায় তার একদিকের গেট তিলক ও ডেভিড রোডের দিকে। স্থানীয় ডেভিড ও তিলক রোডের বাসিন্দাদের অভিযোগ সন্ধ্যের পরে জোড়ায় জোড়ায় যুবক-যুবতীরা অশ্লীলভাবে এই জায়গাটিকে ব্যবহার করে। সাধারন মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে পেরোতে পর্যন্ত পারেন না। বহুবার তার পার্ক কর্তৃপক্ষকে বাসিন্দাদের তরফ থেকে অভিযোগ জানালেও তারা তার কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয় বাসিন্দারা ছয় নম্বর ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কে এই অভিযোগের কথা জানালেও অভিযোগ নিয়ে কাউন্সিলররা পার্ক কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করল তার কোনো সমাধান এখনো হয়নি। গতকাল তারই এক বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল কুমারমঙ্গলাম পার্কের ভেতরে। স্থানীয় বাসিন্দারা লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেন পার্কের ভেতরে থাকা একটি রেস্টুরেন্টে, মারধর করা হয় কয়েকজন পার্কের কর্মীকেও। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সন্ধ্যের পর যখন আলো নেই গোটা পার্কটিতে তখন কেন সন্ধ্যের পরে টিকিট কেটে দলে দলে যুবক-যুবতীদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ এই পার্কর্টি এখন নিষিদ্ধ পল্লীতে পরিণত হয়েছে। দুর্গাপুর তথা আশেপাশে অঞ্চল থেকে বহু যুবক যুবতীর মুখ ঢেকে সন্ধ্যের পর এই পার্কে প্রবেশ করেন এবং অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। তাদের আরও অভিযোগ তাদের ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে রাস্তায় বেরোনো দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশকেও বহুবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তাই বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কালকে।
কুমারমঙ্গলম পার্কের এই সমস্যা নিয়ে যখন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রাজীব ঘোষ এর সঙ্গে কথা বলি তখন তিনি জানান “কুমারমঙ্গলাম পার্ক যে বেসরকারি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়েছিল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পক্ষ থেকে সেই লিজের মেয়াদ অনেক দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই মর্মে একটি মামলা করা হয়েছিল ইস্পাত কতৃপক্ষের থেকে, সেই মামলাটিতে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ জয়লাভ করেছেন ও এই মাসের ৫ তারিখে অর্ডার স্থানীয় ইস্পাত নগর প্রশাসনিক ভবনে এসে গিয়েছে। ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা বকেয়া আছে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের কাছে ওই সংস্থাটির। তিনি আরও জানান অবিলম্বে তারা এই পার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে কালকে ইস্পাত নগর প্রশাসনিক ভবনে অভিযান করবেন এবং পার্কটিকে দখলমুক্ত করবেন ওই সংস্থার হাত থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here