নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- স্কুলের টিউশন ফি নিয়ে ঝামেলার জেরে এক মহিলা কর্মীর হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের অভিভাবক ফোরামের কিছু সদস্যের ও দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে শিল্পাঞ্চল জুড়ে। অভিযুক্ত অভিভাবকদের ও দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর এ-জোন স্থিত বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দির। স্কুলের প্রিন্সিপাল সৌরভ মিশ্র জানিয়েছেন “আদালতের রায় মেনে টিউশন ফি–তে ২০ শতাংশ ছাড় দিয়েই তারা নতুন ফি স্ট্রাকচার তৈরি করেছেন। ৯৯ শতাংশ অভিভাবক সেই স্ট্রাকচারে অনুমোদন জানিয়ে টিউশন ফি দিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু অভিভাবক ফোরামের দুই সদস্য অভিজ্ঞান দীক্ষিত, সুজয় সরকার সহ কয়েকজন অভিভাবক স্কুলের ফি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ঝামেলা করছিলেন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে তারা স্কুলের প্রিন্সিপাল ও সেক্রেটারির সঙ্গেও দেখা করে কথা বলেন। যদিও তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। অবশেষে, বুধবার স্কুলের এক মহিলা স্টাফ, যিনি ক্যাশ কাউন্টারে দায়িত্বে ছিলেন, তার উপর তারা চড়াও হন অভিযুক্ত দুই অভিভাবক।” এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুল চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। শেষে পুলিশ গিয়ে ওই মহিলা কর্মীকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ঘটনায় গুরুতর জখম হন আক্রন্ত মহিলা স্কুল কর্মী। এখানেই শেষ নয়, স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ওই অভিভাবকেরা স্কুলের শিক্ষিকাদেরও রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন, স্কুলের বাইরে দেখে নেওয়ার। ফলে স্কুলের শিক্ষিকারও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বুধবারের ওই ঘটনার পরই নিন্দার ঝড় উঠেছে শহর জুড়ে। প্রশ্ন উঠেছে যেখানে, অভিভাবক স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা, কর্মীদের সম্মান জানানো তো দূরের কথা তাদের উপর চড়াও পর্যন্ত হতে পারেন, সেখানে তাদের সন্তানরা, স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা কী শিখবে? ছোট মনের উপর এর প্রভাবই বা কী পড়বে?
অন্যদিকে অভিযোগের তীর গার্ডিয়ান্স ফোরামের যে দুই কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে, তাদের একজন অভিজ্ঞান দীক্ষিত ফোন মারফত জানান স্কুল কর্তৃপক্ষের আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেন, “ওই ঘটনা ঘটার সময় স্কুল চত্বরে উপস্থিতই ছিলেম না। স্কুল কর্তৃপক্ষ সুজয় সরকার নামে আমাদের এক সহকর্মীকে বলপূর্বক স্কুলের ভেতরে আটক করে রেখেছিলো, তাকে উদ্ধার করতেই মূলত সেদিন স্কুলে গিয়েছিলেম।” তিনি আরো দাবি করেন, “সুজয় সরকার এর মতন নিপাট ভদ্রলোক কোন রকম ভাবেই কোন মহিলা তো দূরের কথা কোনো পুরুষের শরীর স্পর্শ করতে পারেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশের কাছে।” উক্ত ঘটনার জন্য পুলিশি পদক্ষেপ হলে তারা আইন অনুসারে বন্দোবস্ত গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, “যেকোনো স্কুল কর্মী আঘাতপ্রাপ্ত হওয়াটা দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। কিন্তু গার্ডিয়ান্স ফোরামের কোন ব্যক্তি এই ঘটনার সাথে জড়িত নয় সেকথা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, হতে পারে কোনো দুর্ঘটনার কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে বা ওই মহিলা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। এর সঙ্গে অভিভাবক বা ফোরামের কোনো সদস্যকে কোনোভাবেই জড়িত নন তার উপযুক্ত প্রমাণ তাদের কাছে আছে।”
প্রসঙ্গত করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি স্কুলের ফি দিতে সমস্যা হওয়ায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন অভিভাবকরা। তাদের সেই মামলার রায়ে টিউশন ফি-তে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেসরকারি স্কুলগুলি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত।