সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ- জাতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে অবশেষে গ্রেফতার হলেন সবং সজনীকান্ত কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নির্মল বেরা। সোমবার তাঁকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তপশিলি জাতি ও উপজাতি নিপিড়ন বিরোধী আইনে অধ্যাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবারই তাঁকে মেদিনীপুর আদালতে পেশ করা হলে এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। মঙ্গলবার ফের তাঁকে আদালতে তোলা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে। করোনা কালে একটি অনলাইন ক্লাস চলার সময়ে আদিবাসী বলতে কাদের বোঝায়? এই প্রশ্নের উত্তরে সজনীকান্ত কলেজের অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি যখন পড়ুয়াদের বলেছিলেন ‘যে আদিবাসী বলতে দেশের প্রাচীনতম আদিবাসীদের বোঝায়’, তখন সহকর্মী অধ্যাপক নির্মল বেরা ওই অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের উপস্থিতিতে জানান যে, অধ্যাপিকা পড়ুয়াদের ভুল পড়াচ্ছেন এবং অধ্যাপক বেরা ওই অনলাইন ক্লাসেই বলেন যে, “যারা গাছে গাছে ঝুলে তারাই আদিবাসী”। এরপরই সরব হন অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি। তিনি অভিযোগ করেন যে তিনি তপশিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ায় তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক ড: নির্মল বেরা তাকে প্রায়ই জাতি পরিচয় তুলে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন এবং খুব সুচারু ও নিপুণ ভাবে মানসিক হেনস্থা করে থাকেন, যা এক প্রকার নির্যাতনের সমান। অধ্যাপক বেরার এই আচরণের বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষকে জানানো হলেও তিনি কার্যত নিশ্চুপ থাকেন বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনায় জল গড়ায় বহু দূর। গত সেপ্টেম্বর মাসেই সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, অধ্যক্ষ, গবেষক মিলিয়ে প্রায় ১৪০ জন বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী পাপিয়া মন্ডি’র পাশে দাঁড়ান। এক স্বাক্ষরিত পত্র রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পাঠান তাঁরা। পাশাপাশি দেশজুড়ে শুরু হয় জনমত। এরপর বিষয়টি নিয়ে আদিবাসী সমাজের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল আন্দোলনে নামে। তদন্তের গড়িমসি করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে কলেজ এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করে তারা। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। অবশেষে সোমবার অভিযুক্ত অধ্যাপককে গ্রেফতার করে সবং থানার পুলিশ।