মনোজ সিংহ
সারা দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। সরকারের নির্দেশে স্কুল কলেজ সব বন্ধ। তার মানে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা সব ঘরে থাকার কথা। আর লকডাউন থাকার জন্য এই বছর থেকে নতুন নিয়মে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেশন শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সিলেবাস কমে যাবে।
তাহলে বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলি অনলাইন ক্লাস শুরু করছে কেনো ? এই অনলাইন ক্লাস কিন্তু ছাত্র ছাত্রীদের এক ফোঁটাও স্বস্তি দিচ্ছে না। একথা হলপ করে বলা যায়। সরকার যতই নির্দেশ দিক, এই অনলাইন ক্লাস আসলে স্কুল খুলে রাখার নামান্তর। এই অনলাইন ক্লাস, প্রকারান্তে সরকারি নির্দেশকে অমান্য করার সমান।
সিলেবাস কমিয়ে সেশন সেপ্টেম্বরে মাস থেকে শুরু করার যখন নির্দেশ রয়েছে , তখন কেনো এমন বাহাদুরি দেখিয়ে অনলাইন ক্লাস চালু করা হচ্ছে ?
আসলে বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে মাসিক যে মোটা টাকা ফিজ নেয়, এই লকডাউনের ফলে স্কুল বন্ধ থাকায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর যখন লকডাউন উঠে যাবে তখন যে কয় মাস স্কুল বন্ধ ছিল সেইসব মাসের ফিজ দাবি করতে পারবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারণ স্কুল ফিজ বুকে উলেখ আছে – ইলেকট্রিক বাবদ, জল বাবদ, লাইব্রেরি বাবদ, প্লে- গেম বাবদ, ইত্যাদি বাবদ ফিজ কিভাবে দাবি করবে স্কুল কর্তৃপক্ষ ? স্কুল বন্ধ থাকায় কেউ স্কুল যায়নি। অর্থাৎ কোনও ছাত্র ছাত্রী ওই সব ব্যবহার করেনি, তাহলে ওইসবের বাবদ ফিজ দেবে কেনো ? সেইসব বাবদ ফিজ চাওয়াটাও অন্যায্য।
এইসমস্ত বিষয় চিন্তা করেই স্কুলগুলি অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। এই অনলাইন দেখিয়ে ওই সমস্ত ফিজ বাবদ মোটা টাকা নেওয়ার একটা ফাঁদ।
আর অনলাইন ক্লাস করা সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সবার একটা করে দামি মোবাইল থাকা বাধ্যতামূলক। আর প্রতিদিন অনলাইন ক্লাস করলে ২ থেকে ৩ জিবি নেট খাবে। তাহলে এই নেট রিচার্জ করার টাকা কে দেবে ? সব ছাত্র ছাত্রীরদের পক্ষে সেটা কি সম্ভব ?
আবার, যেসমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা এই বছর ক্লাস টেন -এর ফাইনাল পরীক্ষায় বসেছিল , তাদেরতো সব পরীক্ষা হয়নি লকডাউনের জন্য। তাদেরকে কিভাবে এইসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলি ক্লাস ইলেভেন-এ ভর্তি নিচ্ছে ? এখনো পরীক্ষা হল না, পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল না, কে পাশ ফেল করলো জানা গেলো না। তাসত্বেও কেনো ক্লাস ইলেভেনে ভর্তি নিতে শুরু করে দিলো ? ছাত্র ছাত্রীদের হাতে ইলেভেনের নতুন বই নেই। কে কোন স্ট্রিম নিয়ে পড়তে পারবে, পরীক্ষার রেজাল্ট না দেখে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাসত্বেও ইলেভেনের অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিলো স্কুলগুলি। পুরোপুরি বেনিয়ম চলছে। কি আশ্চর্য, এনিয়ে সরকারও কিছু বলছে না। প্রশাসনও নীরব।
যারা এই বছর HS পরীক্ষায় বসেছিল তাদেরও সমস্ত পরীক্ষা হয়নি এই লকডাউনের কারণে। কই তাদেরতো কলেজে ভর্তি করছে না। যা হবে সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম হওয়া উচিত। এই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র শিক্ষা দপ্তরও নীরব।
যেহেতু সরকার ঘোষণা করেছে, এই বছর স্কুলের সেশন কয়েক মাস পিছিয়ে যাবে, সেইখানেই ধাক্কা খেয়েছে স্কুলগুলি। সেক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ কেজি থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে এপ্রিল মাস থেকে ফিজ নিতে পারবেনা। আগে এপ্রিল মাস থেকে ফিজ নিতো। এবার লকডাউনের কারণে মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে মে মাস পর্যন্ত স্কুল বন্ধ। তাহলে যে কয় মাস স্কুল বন্ধ, সেই মাস গুলোর ফিজ নিতে পারে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবছর আই সি এস ই এবং সি বি এস ই (ক্লাস টেন-এর ফাইনাল ) পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয় জুন মাসে। আর ইলেভেনে ক্লাস শুরু হয় জুলাই মাস থেকে। কিন্তু এই বছর তা হবে না। অর্থাৎ এই বছর জুলাই মাসে যদি পরীক্ষা শেষ হয়, তাহলে রেজাল্ট বের হওয়ার পর, সেই সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইলেভেনের ক্লাস শুরু হতে পারে। তাই এবার লকডাউনের জন্য কোনোভাবেই এপ্রিল, মে, জুন মাসের ফিজ নিতে পারবে না স্কুলগুলি। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এতেই ফেঁসে গেছে স্কুলগুলি।
তাই যে করেই হোক ফন্দি ফিকির করে, অর্থাৎ অনলাইন ক্লাস দেখিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে ফিজ নেওয়ার একটা কৌশল তৈরী করেছে স্কুলগুলি। কিন্তু বুঝতে পারছে না, এই লকডাউনের ফলে মানুষের হাত একেবারেই শূন্য। তাহলে কিভাবে তারা এই মোটা টাকা ফিজ দেবে ?
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলির এই তুগলকি কান্ড কারখানার বিরুদ্ধে সরকারের উচিত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।