সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ:-
হাতে মাত্র আর বাকি কয়েকটা দিন। দুর্গাপূজাকে ঘিরে দম ফেলার ফুরসৎ নেই কাউর। অথচ সর্বত্র যখন উৎসবকে ঘিরে খুশির আমেজ চলছে, তখন এই দুর্গাপুজোর প্রধান কান্ডারী তথা কান্দির বিস্তীর্ণ এলাকার প্রতিমাশিল্পী মহল্লায় নিস্তব্দতা সর্বত্র। একদিকে হাতে আগাম প্রতিমা তৈরীর বায়নার সামান্য টাকার পুঁজি, সেই সঙ্গে দ্রুত বেড়ে যাওয়া মূর্তি তৈরীর কাঁচামাল থেকে শুরু করে সাজের উপকরণের দামে নাভিশ্বাস পরিস্থিতি এখন কান্দির মৃৎশিল্পীদের। এই ব্যাপারে কান্দির মৃৎশিল্পী গৌরাঙ্গ পাল, সুজয় দাসেরা একজোটে বলেন,”জানিনা কি করে এই অল্প সময়ে কাজ শেষ করবো। একদিকে আগাম বায়না নিয়ে বসে রয়েছি সেই সঙ্গে হু হু করে মাটির দাম থেকে শুরু করে, প্রয়োজনীয় কাঁচা বাঁশ, সুতলি রং গয়না, কাপড় সমস্ত কিছুর দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে আমাদের”। কান্দির পালপাড়া দাসপাড়া সহ একাধিক জায়গায় প্রতিমা শিল্পীদের বাস। দীর্ঘদিন ধরে বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে তারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই পুজোর সময় বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলোতে বছরের ঠিকা শ্রমিক কিংবা দিনমজুরের কাজ করেই তাদের দিন গুজরান করতে হয়। এমত অবস্থায় আচমকা দূর্গা পূজার প্রতিমা তৈরীর বরাত নেওয়ার পরেও হঠাৎ করে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আতান্তরে পড়েছেন তারা। জানা যায়, যেখানে গত বছর প্রতিমা তৈরির প্রধান কাঁচামাল হিসেবে এক ট্রাক্টর মাটির দাম আড়াইশো থেকে ৩০০-৩৫০ টাকা ছিল এ বছর তা এক ঝটকায় বেড়ে এই শেষ মুহূর্তে ৬০০থেকে ৭০০টাকায় পৌঁছেছে। এখানেই শেষ নয় দাম বেড়েছে রং তুলি কাপড়েরও।৪০০- ৫০০টাকার ন্যূনতম দেবীর সাজে সাজের কাপড়ের দাম এবছর বেড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় পৌঁছেছে। ফলে সব মিলিয়েই চূড়ান্তভাবে না কালে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। কান্দির বিস্তীর্ণ এলাকার ওই মৃৎশিল্পীরা অভিযোগ করে বলেন, কেবল কাঁচামালের দামই বাড়েনি, সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রতিমা মন্ডপে পৌঁছে দেওয়ার পরিবহন খরচও। অথচ ক্লাব কর্তারা তারা তাদর বরাদ্দের টাকা এক পয়সাও বাড়াতে চাইনা। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের সকলেরই মাথাপিছু কাজের বরাতও কমেছে গত বারের থেকে অনেকখানি। যেখানে গত বছর একজন সাধারণ মানের শিল্পী ও ছোটখাটো মিলিয়ে মাথাপিছু কুড়ি থেকে বাইশটা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছে, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ১৫তে। হয়তো সামনের দিনে তা আরও কমবে। জানিনা কিভাবে দ্রুত কাজ শেষ করবো। এব্যাপারে স্থানীয় ক্লাব কর্তা বিভাস মন্ডল রাজু হালদার বলেন,”এটা ঠিক কথা আচমকা কাঁচামালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কান্দির মৃৎশিল্পীরা সমস্যায় পড়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ইচ্ছে থাকলেও চাঁদা সংগ্রহের পরিমাণ কমে যাওয়ায় আমরা তাদের বাড়তি টাকা হাতে তুলে দিতে পারছিনা। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেভাবেই হোক তাদেরকে অন্তত কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণের সাহায্য করতে পারি”।