eaibanglai
Homeএই বাংলায়শেষের সেদিন ভয়ংকর

শেষের সেদিন ভয়ংকর

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- গত ২৯ শে নভেম্বর উত্তর চব্বিশ পরগণার সুন্দরবন সংলগ্ন হিঙ্গলগঞ্জের সামশেরনগরে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব নির্ধারিত সভা। সভা মঞ্চ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে সোয়েটার, কম্বল, চাদরের মত শীতবস্ত্র তুলে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। অথচ নির্দিষ্ট সময়ে মঞ্চে সেগুলো এসে পৌঁছালোনা। ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকদের চরম গাফিলতি সামনে চলে আসে। সময়মতো বেতন না পেলে এরাই আবার হৈচৈ শুরু করে দেয়।

তবে এটাই প্রথম নয়। দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর কর্মসংস্কৃতি নিম্নমানের। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারি দপ্তরে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাধারণ মানুষ তো তাই সেগুলো সামনে আসেনা। নেহাত ঘটনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জড়িত তাই বিষয়টা কাগজের সামনের পাতায় স্থান পেল। তবে বর্তমানে একটু কমলেও রাজ্যে নিম্নমানের কর্মসংস্কৃতি কিন্তু শুরু হয়েছিল সেই বাম আমল থেকে।

বাম আমলে অবসর গ্রহণের পর অবসরকালীন ভাতা পেতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারিদের একটা বড় অংশের সরকারি অফিসে বারবার যাতায়াত করতে গিয়ে চটির সোল ক্ষয়ে যেত। কতজন যে জীবিত অবস্থায় ভাতা পাননি তার ইয়ত্তা নাই। সরকার বাধ্য হয়ে তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে। যার মূল কথা ছিল – আপনি যদি সঠিক সময়ে কাজ না করেন তাহলে আপনিও সঠিক সময়ে অবসরকালীন ভাতা পাবেন না। তখন সরকারি কর্মচারিদের একটা বড় অংশ দেরিতে অফিসে আসত, চেয়ারে বসত, কাগজ পড়ত, শেষে বাড়ি ফেরার জন্য তৎপর হতো। দলের সভা থাকলে সেখানে হাজির হতো। ইচ্ছে হলে একটু আধটু কাজ করত। অধিকাংশ জন ছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য। সুতরাং তাদের বিপক্ষে কিছু বলার বা করার ছিলনা। ভাবখানা ছিল – যেটুকু করছি এটাই যথেষ্ট। কিছু বলতে গিয়ে আধিকারিকদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে – এই উদাহরণও আছে। জ্যোতি বাবু আক্ষেপ করে একবার নাকি বলেছিলেন – কাকে কাজ করতে বলব, চেয়ারকে? যদিও তিনি পর মুহূর্তে সেটা হাল্কা করার চেষ্টা করেছিলেন। আদালত নির্দেশ না দিলে উচ্চমাধ্যমিকের ফল নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ হতোনা। মাধ্যমিকের খাতা দেখার গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে বাম আমলে প্রথম জনৈক ছাত্র আদালতের শরণাপন্ন হয়। বাম আমলে অবসর গ্রহণের পর অবসরকালীন ভাতা পেতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারিদের একটা বড় অংশের সরকারি অফিসে বারবার যাতায়াত করতে গিয়ে চটির সোল ক্ষয়ে যেত। কতজন যে জীবিত অবস্থায় ভাতা পাননি তার ইয়ত্তা নাই। সরকার বাধ্য হয়ে তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে। যার মূল কথা ছিল – আপনি যদি সঠিক সময়ে কাজ না করেন তাহলে আপনিও সঠিক সময়ে অবসরকালীন ভাতা পাবেন না।

তখন কর্মসংস্কৃতি কেমন ছিল তার বড় প্রমাণ – ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে জাতি ও উপজাতির সার্টিফিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন। এদের একটা বড় অংশ বহু চেষ্টা করেও সার্টিফিকেট পায়নি এবং তারা যথেষ্ট প্রবীণ। একই সমস্যা র‍্যাশন কার্ড সহ বিভিন্ন পরিচয় পত্রের সংশোধনীর জন্য হয়রানি।

তৃণমূল আমলে পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন হলেও এক শ্রেণির নীচু তলার কর্মীদের মানসিকতার সেভাবে পরিবর্তন হয়নি। আজও তাদের মধ্যে কাজ করবনা -এই মানসিকতা থেকে গ্যাছে। যার ফলশ্রুতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনলাইন পরিষেবা চালু করা। হয়তো আগামীতে এর পরিসর আরও বাড়তে পারে।

শোনা যায় চাষীদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্লকের কৃষি দপ্তরে বিভিন্ন ফসলের বীজ এসে পৌঁছায় অথচ সময়মত সেগুলো চাষীদের কাছে পৌঁছায় না। প্রতি বছর আলু চাষের সময় রাসায়নিক সারের কালোবাজারি শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর নীরব থাকে। আলুচাষ প্রায় শেষ হওয়ার মুখে তাদের হম্বিতম্বি বাড়ে। কেউ কেউ বলে সার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দপ্তরের কর্মীদের অশুভ আঁতাতের জন্য এটা ঘটে। নির্দিষ্ট সময়ের পাঠ্যপুস্তক বিতরণের সময় শিক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধে দেরি হওয়ার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়না। বিভিন্ন জেলার ডিআই ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের গাফিলতির জন্য দীর্ঘদিন আগে বদলি হওয়া বহু শিক্ষক নাকি সার্ভিস বুক সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাকি আজও পায়নি – এই অভিযোগও সামনে আসছে।

শোনা যায় সরকারের প্রাপ্য বিভিন্ন ট্যাক্স জমা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বহু হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। যেদিন থেকে অনলাইনে এটা জমা দেওয়ার সিস্টেম চালু হয় সেদিন থেকে সরকারের নাকি ট্যাক্স আদায় অনেক বেড়ে গ্যাছে। সরকারি পরিসংখ্যান সেটাই বলছে। একই সমস্যা হতো ট্রেড লাইসেন্স রিন্যুউ করতে গিয়ে। আজ সেটাও দূর হয়েছে। একইভাবে ব্যাংক পরিষেবা, ট্রেনের টিকিট কাটা থেকে শুরু বিভিন্ন হয়রানিমূলক পরিষেবা অনলাইনে শুরু হয়ে গ্যাছে। লকডাউনের সময় অনলাইনে পড়াশোনা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সম্ভবত সেটা লক্ষ্য করে অনেক ‘লার্নিং অ‍্যাপস’ এসে গ্যাছে। যেমন আগে ছিল কোচিং সেণ্টার। আরও অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে বারবার মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়।

পুনশ্চ – বেশ কয়েক বছর আগে কোনো একটি সরকারি দপ্তর থেকে হয়রানির শিকার হওয়া জনৈক প্রবীণ ব্যক্তিকে ক্ষুব্ধ ভাবে বলতে শুনেছিলাম প্রতিমাসে যতজন হয়রানির শিকার হবে তদন্ত সাপেক্ষে যতক্ষণ না সেটার সমাধান হচ্ছে ততক্ষণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীদের বেতন বন্ধ করে দিতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments