নিজস্ব সংবাদদাতা,মুর্শিদাবাদ:- মন্ত্রপুত দই পড়া দিয়ে আমজাদ শেখের দিব্যি মারণ ক্যানসার সারানোর পসার জমে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার খলিফাবাদ গ্রামে কয়েকমাস থেকেই।ক্রমশ এই বুজরুকীর বহর বাড়তেই তা নজরে পরে এক এক করে স্থানীয় প্রশাসন থেকে জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের।তড়িঘড়ি তারা এলাকা পরিদর্শন করেন দফায়।তাতে কাজও হয় খানিকটা।বুজরুক আমজাদ পরিস্থিতি বুঝে পিঠটান দেয়।এই পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে আচমকা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে।আমজাদের দেখা না পেলেও দূর দূরান্ত থেকে আসা তার তার অগণিত অন্ধ ভক্ত পুলিশ বাহিনী(মহিলা সহ),প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তিদের উপর দফায় দফায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।শুরু ইঁট,পাথর আর লাঠি দিয়ে পুলিশ ও তাদের গাড়ী কে লক্ষ্য করে আম জনতার মুহূর্মুহ আক্রমণ।মুড়ি মুড়কির মত পুলিশ ও তার গাড়ির উপর ছুটে আসতে থাকে উন্মত্ত জনতার ইঁটের চাই।সেই ইঁটের আঘাতে গুরুতর জখম হয় হারিহর পাড়া থানার ওসি আব্দুস সালাম সহ প্রায় ১২জন পুলিশ কর্মী,এছাড়াও ওই উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইঁটের আঘাতে আহত হয় স্থানীয় মানুষ জনও।গুরুতর জখম অবস্থায় থনার ওসি কে কোন রকমে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।পরে নিয়ে যাওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে।সেখানেই তিনি আশঙ্কা জনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেই রাতের শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে।এদিকে এই খবর জেলার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে পৌঁছতেই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) অনিশ সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও রাফ ঘটনাস্থলে রওনা দেয়।সেই সঙ্গে এলাকা দর্শনে আসেন বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যালও।শুরু হয়েছে পুলিশি টহলদারী।এই ব্যাপারে জেলার এক উচ্চ পুলিশ আধিকারিক বলেন , “এইদিন পুলিশ এলাকা পরিদর্শনে গেলে একদল বহিরাগত উত্তেজিত জনতা অকারনে পুলিশ বাহিনী ও গাড়ির উপর হামলা চালায়।পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে”।এদিকে আমজাদের খোঁজে চলছে চিরুনি তল্লাশিও।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সম্প্রতি হরিহরপাড়ার খলিলাবাদ গ্রামে রব উঠে এলাকার এক দর্জি আমজাদ শেখ রাতারাতি মন্ত্রপুত দই দিয়ে শরীরের যে কোন স্থানে ক্যানসার সরিয়ে দিচ্ছেন।এই বুজরুকি ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের ভগীরথপুর,রেজিনগর,বেলডাঙ্গা ছাড়াও জেলার দূর দূরান্ত,ডোমকল,জঙ্গিপুর,কান্দি,লালবাগ থেকে হাজারে হাজারে মানুষ কাকভোরে আমজাদ শেখের দোয়ারে দই এর হাঁড়ি নিয়ে এসে হাজির হচ্ছেন। ভিড় এতই বাড়তে থাকে যে,তা গ্রাম ছাড়িয়ে মেন রাস্থা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।কার্যত আমজাদের এই পসার ঘিরে এলাকায় অলিখিত মেলার হরেক দোকানও বসে। সব মিলিয়ে অন্ধ বিশ্বাসের কারবার রমরমিয়ে চলতে থাকে।যদিও এক্ষেত্রে টাকা পয়সার লেনদেনের কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত মেলেনি।এরই মধ্যে জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ ও এলাকার বুদ্ধিজীবী মানুষের কথায় সারা দিয়ে পুলিশ এই দই পড়া বন্দ করতে দিন দুয়েক আগে ওই গ্রামে হানাও দেয়।যদিও এই দিনের ঘটনায় স্থানীয় একাংশের দাবি, আমজাদ আলি নামে ওই ওঝা নাকি মানুষের ভালোই করছিল। তার দই পড়া খেয়েই নাকি দুরারোগ্য ক্যানসার নাকি সারতে শুরুও করেছিল।যদিও তার কোন সঠিক বিজ্ঞানসম্মত প্রমান মেলেনি। এদিনের বিক্ষোভকারীর দাবি, ‘‘ আমজাদ গরিব মানুষের ভালো করছিলেন। কোনও পয়সা না নিয়েই চিকিৎসা হচ্ছিল। হাসপাতাল, নার্সিংহোমে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। আমাদের মতো গরীব মানুষদের সেই সামর্থ্য নেই। পুলিশ জোর করে ওনাকে এলাকা ছাড়া করেছে”।এই দিনের এই দুঃসাহসিক আক্রমণের ঘটনায় জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক সজল বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,”এটা খুব দুঃখ জনক ব্যাপার যেভাবে অবুজ উত্তেজিত জনতা বুজরুকি আর অন্ধ বিশ্বাস কে প্রশ্রয় দিতে এই হামলা চালালো তাতে আগামী দিনে মানুষের অনেক বেশি করে বিজ্ঞান মনস্ক হতে হবে । না হলে এই সমাজ ধংস অনিবার্য”।
Home Flash News দই পড়া দিয়ে ক্যান্সার সারাবার ওঝার বুজরুকি থামাতে গিয়ে অগ্নিগর্ভ এলাকা,অন্ধ ভক্তদের...