eaibanglai
Homeএই বাংলায়তবুও প্রজাতন্ত্র দিবস!

তবুও প্রজাতন্ত্র দিবস!

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- দেখতে দেখতে আরও একটা ২৬ শে জানুয়ারি এসে গ্যালো, ভারতের ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। আগের মতই রীতি মেনে দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য রাজ্যের রাজ্যপাল বা মুখ্যমন্ত্রীরা ভারতের জাতীয় পতাকা তুলবেন। ভাল ভাল ‘সুগার কোটেড’ কথা বলবেন। দিল্লির রাজপথে ভারতীয় জওয়ানদের কুচকাওয়াজ হবে। বিভিন্ন রাজ্যের সুসজ্জিত ট্যাবলো বের হবে। কিন্তু ৭৪ বছর পরেও অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গ্যালো।

বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ভারতের বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগষ্ট ভারত স্বাধীন হয়। ক্লাব বা দেশ যাইহোক না কেন সেটা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট নিয়মকানুন অর্থাৎ সংবিধান। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও ভারতের নিজস্ব কোনো সংবিধান ছিলনা। অনেক আলোচনা ও সংশোধনের পর ভারতের সংবিধান রচিত হয় এবং ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারির গুরুত্ব বজায় রাখতে ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। এই দিনটি গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ভারতের সম্পূর্ণ নাম হয় সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র ভারত। 

কিন্তু যেভাবে প্রতিমূহুর্তে দেশনায়কদের সৌজন্যে ঘাড়ের উপর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প নিশ্বাস ফেলছে বা বাক্ স্বাধীনতা বিপন্ন হচ্ছে তাতে কি আর আমাদের দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যাবে – প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো বাক্ স্বাধীনতা। এটা ঠিক বাক্ স্বাধীনতার নামে অযথা মানহানি করার অধিকার কারও থাকতে পারেনা। কিন্তু এখন সত্য কথা বলতে গেলেও আপনার গায়ের উপর দেশদ্রোহী তকমা সেঁটে যাবে অথবা বিভিন্ন রাজ্যের শাসকদল পুলিশ দিয়ে আপনাকে হয়রানি করবে। আর নিজেদের ব্যর্থতা ভুলিয়ে দেওয়ার মোক্ষম ওষুধ হলো ধর্মের সুড়সুড়ি।

বিপ্লবীদের শায়েস্তা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতে পুলিশি ব্যবস্থা চালু করে। আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্বাধীন ভারতেও পুলিশি ব্যবস্থা থেকে যায়। ধীরে ধীরে বিরোধীদের জব্দ করতে ব্যবহার করা হতে থাকে পুলিশকে অথবা কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআইকে। পুলিশের পরিচয় হয় দলদাস। সুপ্রিম কোর্ট তোতাপাখি বলে সম্বোধন করে সিবিআইকে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সফলতা দেশের জনগণের প্রকৃত শিক্ষার উপর নির্ভর করলেও ইংরেজ আমলে কেরাণী তৈরি করার শিক্ষা ব্যবস্হা থেকে বের হয়ে এখনো আমরা যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে কেন্দ্র বা রাজ্যের প্রতিটি শাসকদল শুধু নিজেদের ভাবনা প্রয়োগ করার চেষ্টা করে গ্যাছে। দায়বদ্ধতা ও সদিচ্ছার অভাবের জন্য আজও দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে গ্যালো। গণতন্ত্রের সফলতার প্রথম শর্ত মুখ থুবড়ে পড়ল।

প্রজাতন্ত্র দিবসে রঙিন পোশাক পড়ে একদল বাচ্চা যখন আনন্দে মেতে উঠবে, একাধিক গাড়ির কনভয় ছুটিয়ে পতাকা উত্তোলন করতে যাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতারা তখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যাবে একদল অভুক্ত, অর্ধ উলঙ্গ ছেলেমেয়ে একমুঠো খাবারের জন্য অসহায় ভাবে আনন্দে মেতে ওঠা ছেলেমেয়েদের দিকে, গাড়ির কনভয়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদের অধিকাংশই পথশিশু। এদের না আছে মাথার উপর ছাদ, না আছে শিক্ষা, না আছে ঋতুর উপযুক্ত পোশাক। আজও সরকার এইসব পথশিশুদের নুন্যতম চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। তবুও আজ প্রজাতন্ত্র দিবস!

রাজনৈতিক নেতা এবং দূর্নীতি যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে বারবার দূর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মারাত্মক ফৌজদারী অপরাধ। এটা ঠিকই রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময় মিথ্যা মামলা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার রাজনৈতিক দলগুলো আজও মিথ্যা মামলা বা দুর্নীতি বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোনো সদর্থক উদ্যোগ নিতে পারলনা। এবড় লজ্জা!

বিচারবিভাগ, প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম – গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলো আজ দুর্বল হতে হতে দুর্বলতর হয়ে উঠছে। আইনসভায় একমাত্র শাসকদলই শেষ কথা, বিরোধী দলগুলোর কোনো গুরুত্বই থাকছেনা। এরফলে স্বৈরতন্ত্র যে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ক্ষমতার নেশায় পাগল রাষ্ট্রনেতাদের সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নাই। আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সংবাদ মাধ্যম তো অনেকদিন আগেই নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। যেটুকু ছিল কর্পোরেট সেক্টরের সৌজন্যে সেটাও গ্যাছে। সাদা-কালো বিচার করার পরিবর্তে রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি শুরু হয়েছে।

সংবিধান প্রণেতারা একটা মহতী লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংবিধান রচনা করেছিলেন। এক শ্রেণির ধান্দাবাজের হাতে পড়ে তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাষ্ট্রের পদাধিকারীরা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে অযথা সংবিধানের সমালোচনা শুরু করেছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মূল কাঠামোকে অবিকৃত রেখে নিশ্চয়ই যুগোপযোগী সংশোধনী করা যেতেই পারে। কিন্তু মূল সংবিধানের উপর আঘাত কাম্য নয়। আমরা সাধারণ মানুষ এসব বুঝিনা। আমরা চাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বাঁচতে। এই ছোট্ট চাওয়াটুকু পূরণ করতে রাষ্ট্র নায়করা কি সত্যিই কি কোনো সৎ উদ্যোগ নেবে?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments