নিজস্ব প্রতিবেদন, সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- স্মরণাতীতকাল থেকে বহরমপুরের আঁধারমানিক গ্রামে খুবই জাগ্রত একটি মন্দির আছে ‘শীতলা মাতার মন্দির’। মন্দিরের বর্তমান পূজারী দিলীপ ভট্টাচার্যের পূর্বসূরী
জানকীনাথ ভট্টাচার্য মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনেও একটি গল্প আছে। চাঁই সম্প্রদায়ের একজন মানুষ জমি পরিষ্কার করার সময় পাথর ভেবে মায়ের শিলা অংশটুকু দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়। সেই রাতেই মা ঐ মানুষটিকে স্বপ্ন দিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন। ঐ মানুষটি তখন জানকীনাথবাবুর কাছে আসেন। জানকীনাথ বাবু মাকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার উত্তরসূরিরা বংশানুক্রমে মায়ের সেবাকার্যে নিযুক্ত আছেন।

ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দা রামগোপাল মন্ডলের সাথে কথা সূত্রে জানতে পারি অলৌকিক কিছু ঘটনা-“একবার আঁধারমানিক গ্রামের একটি পাড়ার মানুষ মায়ের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। মায়ের রোষানলে পড়ে ঐ পাড়ার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন।কেউ হয়ে যান বোবা ,কেউ হয়ে যেন অন্ধ। শুধু তাই নয় মায়ের মন্দির সংলগ্ন বটগাছ গুলিকে মায়ের অংশবিশেষ রূপে পুজো করা হয়। ওই বট গাছ কাটতে এলে কিছু মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কারোর সংসার হয় ছন্নছাড়া।” মন্দিরের সহ-সভাপতি গোপীনাথ সরকারের সাথে কথা বলার পর জানা গেল মায়ের অংশবিশেষ রূপে পূজিত এই বটগাছগুলি নিয়েই সম্প্রতি একটি বিবাদ হয়েছে।তার কথায়-“এই বটগাছ গুলির মধ্যে দুটি বটগাছ আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে ঝড়ে হেলে পড়ার কারণে অন্যের জমির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখন জমির মালিক চাইছেন বটগাছ দুটি কেটে ফেলতে।আমরা ঐ বটগাছ দুটির অধিকৃত জমি খরিদ করার প্রস্তাব দিলে মালিকপক্ষ তৎক্ষণাৎ তা প্রত্যাখ্যান করেন।”তবে তারা ফরেস্ট অফিস, থানা, এসপি পঞ্চায়েত, এমনকি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে পর্যন্ত আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বিশাখা মন্ডল মন্দির কমিটির সঙ্গে সহমত পোষণ করে জানান- “আমি চাইনা মায়ের অংশবিশেষ বটগাছ দুটি ফেলা হোক। এর জন্য যত লড়াই করতে হয় করব। মানুষের ভাবাবেগে আমি আঘাত করতে দেবো না। “মানুষের ভক্তি বিশ্বাসে লালিত বটগাছ দুটিকে রক্ষা করার জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর গ্রামের সাধারণ মানুষেরবিশ্বাস- “ঐ গাছে মা আছেন মা অবশ্যই কিছু অলৌকিক সাধন করবেন।”
প্রতিবছর দূর-দূরান্ত থেকে অগণিত ভক্ত ওই মন্দিরে আসেন মনস্কামনা নিয়ে। ভক্তিযুক্ত মনে বিশ্বাস নিয়ে ডাকলে মা সকলেরই মনস্কামনা পূর্ণ করেন। ওখানকার মা এমনই জাগ্রত। যারা তাঁকে মানেন না তাদের তিনি বুঝিয়ে দেন তাঁর অস্তিত্ব। যারা তাঁকে মানে তাদের রোগমুক্তি ঘটান। অপুত্রকের সন্তান লাভ ছাড়াও নানা রকমের রোগ ব্যাধি সেরে যায় এই মন্দিরে পুজো দিলে। বৈশাখ মাসের শনি মঙ্গলবার পুরো একমাস ধরে মেলা বসে মায়ের মন্দিরকে ঘিরে।