eaibanglai
Homeএই বাংলায়নববধূর বিয়ের রিসেপসনে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা

নববধূর বিয়ের রিসেপসনে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দক্ষিণ ২৪ পরগণাঃ- দক্ষিণ ২৪ পরগণার দক্ষিণ কুমড়াখালি গ্রাম। জাহির হোসেন মন্ডল ও জয়নাব জাহানের বিয়ের রিসেপসন চলছে। পাঁচ শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি হাজির। উপস্থিত আছেন আত্মীয়স্বজনরা। কচিকাচারা সেজেগুজে নিজেদের মত করে আনন্দে মশগুল। একেবারেই চেনা পরিবেশ, চেনা ছন্দ। কেউই হয়তো আন্দাজ করতে পারেনি এরপর কি হতে চলেছে!

বর্তমান যুগে শিশুদের ক্ষেত্রে এক চরম অভিশাপ হলো থ্যালাসেমিয়া। এটি একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। ফলে  থ্যালাসেমিয়া বাহক সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগে থাকেন।

ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। বাবা অথবা মা, কিংবা বাবা-মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। এক সমীক্ষায় দেখা যায়- বাবা-মা উভয়েরই রক্তে থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকলে ২৫℅ ভূমিষ্ট শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু দু’জনের যেকোনো একজন যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন তাহলে নবজাতকের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তবে নবজাতক থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে যা কোন রোগ নয়।

এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হলো রোগের বাহকদের মধ্যে বিয়ে যাতে না হয় সেই বিষয়ে সচেতন হওয়া। প্রয়োজন বিয়ের আগেই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় এর জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামক পরীক্ষাটি করার। এর ফলে ভবিষ্যতে শিশু থ্যালাসেমিয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকবে।

কিন্তু সমস্যা হলো লজ্জায় অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করতে রাজি হননা। আবার সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে পাড়ায় পাড়ায় শিবির করে সেভাবে প্রচার না থাকার জন্য মানুষও সচেতন নন। ফলে দেশে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর্থিক ও মানসিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবার।

মানুষকে সচেতন করার জন্য নিজের বিয়ের রিসেপসন অনুষ্ঠানটিকে বেছে নিলেন জাহির। আমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা বার্তা দিলেন তিনি। তার বার্তায় উৎসাহিত হয়ে একে একে নাজিয়া পারভিন, মানতাসা জমাদার, সুমিন্দ্র দেবনাথ, সাহিরুল জমাদার, আকাশ অধিকারী, অফমান লস্কর সহ প্রায় ৫৪ জন থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় পরীক্ষা করান। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন। তাদের প্রত্যেককে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ‘গণদর্পণ’ এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দেবাশীষ দাস ও অসীমা দে।

প্রসঙ্গত কলেজ জীবন থেকেই জাহির সাহেব বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। কখনো তাকে দ্যাখা গ্যাছে রক্তদান শিবিরে, কখনও বা আম্ফান, আইলার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত সুন্দরবনের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মা-বাবা হলেন তার সবচেয়ে বড় উৎসাহদাতা। এবার পাশে পেলেন নববধূ জয়নাব জাহানকে। প্রশ্ন করতেই যিনি লাজুক হেসে বললেন – সব জেনেশুনেই মানুষটিকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করেছি।

কথা হচ্ছিল দুর্গাপুরের বিশিষ্ট স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ডা.কবিতা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বললেন – থ্যালাসেমিয়া কোনো অভিশাপ নয়। দরকার একটু সচেতনতা। বিয়ের আগেই যদি রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া হয় তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে। সমাজ বাঁচবে, শিশু বাঁচবে।

অন্যদিকে জাহির সাহেব বললেন – চ্যারিটি বিগিনস এ্যাট হোম সূত্র ধরে আমি আমার বিয়ের রিসেপসনের দিন এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছি। ঐদিন বহু আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে সঙ্গে আমার আত্মীয়রা থাকবেন। তাদের একজনকেও যদি বিষয়টি বোঝাতে পারি তাহলে তারাও আরও দশজনকে বোঝাবে। আমার সৌভাগ্য আত্মীয় ও অতিথিরা আমার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি ধন্য প্রথম থেকেই আমার মা-বাবা আমাকে উৎসাহ দিয়ে গ্যাছেন। এমনকি আমার সদ্য পরিণীতা বধূও আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও দেবাশীষ দা ও অসীমা দি আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments