মানব শরীরে ট্যাটুর একাল সেকাল

2501

নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ উপরের ক্যাপশান শুনলেই যেকেউ বুঝে নিতে পারবেন ঠিক কি নিয়ে এই প্রতিবেদন। আধুনিক এই যুগে ট্যাটু শব্দটি শোনেন নি এরকম মানুষ খুঁজে বেশ দুষ্কর, বরং দিন যত এগোচ্ছে ততই শরীরে নানান রং-বেরঙের আঁকি-বুঁকিতে মেতে উঠছে আধুনিক যুবসমাজ। কখনও বিশেষ কোনও মানুষের নাম আবার কখনও বিভিন্ন ক্যাপশন আবার কখনও বিচিত্র সব রঙিন ছবি (জীবজন্তু, নক্সা,) এমনকি ভগবানের ছবিও বাদ যায়নি সেই শরীরী আঁকিবুকিতে। রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে এমন যুবক-যুবতীদের দিকে বর্তমানে খুব সহজেই নজর যায় যাদের হাতে, পায়ে, ঘাড়ে বিভিন্ন রকমের নকশা ট্যাটু চোখে পড়ে। মূলত দক্ষিণী ধাঁচ থেকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এই ট্যাটু করার মূল উদ্দেশ্যই হল সাধারণ আর পাঁচজনের থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখানো। তবে ট্যাটুর এই চল সাম্প্রতিক নয়, আজ থেকে বহু বছর (পড়ুন খ্রিস্টীয় প্রায় ৩০০০ অব্দ) আগে থেকে মনুষ্য সমাজে ট্যাটুর প্রচলন ছিল। তবে সময় ব্যতিরেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ট্যাটু আঁকা হত মানুষের শরীরে। বর্তমান যুগে যেমন ড্রিল মেশিনের মত ইলেকট্রিক মেশিনের সাহায্যে শরীরে ট্যাট্যু আঁকা হয়ে থাকে, প্রাচীনকালে তেমনটা হত না। সেইসময় ট্যাটু ছিল প্রচন্ড বেদনাদায়ক। কারণ, প্রাচীন কালে বিভিন্ন প্রথা মেনে কখনও শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সরাসরি ক্ষত করে আবার কখনও চামড়া পুড়িয়ে ট্যাটু বানানোর প্রচলন ছিল। যা বেশিরভাগই দেখা যেত বিভিন্ন দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে, ক্রমশ তা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক ট্যাটুর রূপ নিয়েছে। কিন্তু ট্যাটু সম্পর্কে আধুনিক যুব সমাজের মধ্যে যে ক্রেজ চোখে পড়ে সে তুলনায় ট্যাটুর সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রয়েছে এরকম যুবক বা যুবতীর দেখা পাওয়া খুবই দুষ্কর। জানা যায়, পলিনেশিয়ার ট্যাটাও ইংরেজি শব্দ থেকেই বর্তমান এই “ট্যাটু” শব্দের উৎপত্তি। কিন্তু প্রাচীন সেই ট্যাটু থেকে বর্তমান যুগের এই আধুনিক ট্যাটুর নামের মিল থাকলেও বদলেছে ট্যাটু তৈরীর ধরণ, বৈচিত্র্য এমনকি ট্যাটুর কারিগরীতেও। আগে আদিবাসী সম্প্রদায় নিজের শরীরে ট্যাটু বানাতো বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজ মানতে কিন্তু বর্তমানে সেই ধর্মীয় রেওয়াজের জায়গা দখল করেছে আধুনিক ফ্যাশন। আজকের দিনে ট্যাটু আর ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ মেনে নয়, শুধুমাত্র কেতাদুরস্থ ফ্যাশন বজায় রাখতে আর অন্য পাঁচজনের দৃষ্টি আকর্ষন করতেই বর্তমান যুগের এই ট্যাটু। এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ইউরোপে বর্তমানে প্রতি ৩০ জন মানুষের মধ্যে একজনের শরীরের কোনও না কোনও জায়গায় ট্যাটু রয়েছে। আর সেই ইউরোপীয় ধাঁচকে অনুসরণ করে উল্লেখযোগ্য হারে আমাদের ভারতবর্ষেও বাড়ছে ট্যাটুর চল। বিভিন্ন সিনেমার নায়ক-নায়িকা, ক্রিকেটার, ফুটবলার থেকে শুরু করে বর্তমান গায়ক-গায়িকাদের শরীরে ট্যাটু টিভির পর্দায় নজরে আসতেই তখনই বিভিন্ন ট্যাটু পার্লারে ছুটে যাচ্ছে আজকের যুব সমাজ সেই ট্যাটুর নকল করতে। কিন্তু কিভাবে এই ট্যাটু তৈরী হয়? বর্তমানে বিভিন্ন ট্যাটু পার্লারে একপ্রকার বিদ্যুৎ চালিত মেশিন ব্যবহৃত হয় ট্যাটু করার জন্য। সুইচ দিলেও এই ড্রিল মেশিনের মত দেখতে মেশিনটির অগ্রভাগে লাগানো সূক্ষ্ম সূচ নানা রঙের রাসায়নিক কালি সমেত মানুষের ত্বকের অনেক গভীরে ঢুকে যায়। সাধারণত নিকেল থেকে তৈরী এই রঙের ঘনত্ব অনেক বেশী থাকায় আমাদের রক্তের লোহিত কনিকা এই রঙকে ধংস করতে পারে না। ফলে ত্বকের একটা স্তরে গিয়ে এই ট্যাটুর কালি আটকে যায়। জল বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রং আর উঠতে পারে না। এইভাবেই একবার এই ট্যাটু করলে তা সার্জারি ছাড়া কোনোভাবেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এখানে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন আমাদের শরীরে ট্যাটুর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে। অবশ্যই এই ট্যাটু থেকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে মানব শরীরে। ট্যাটুর রং তৈরীতে মূলত ব্যবহার করা হয় নিকেল ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক, যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও যাদের স্কিন অ্যালার্জী রয়েছে তাদের জন্য এই ট্যাটু খুবই বিপজ্জনক। তাই শরীরের কোনও স্থানে ট্যাটু করার আগে সব দিক বিচার-বিবেচনা করে তবেই সেদিকে এগনো বুদ্ধিমানের কাজ।