সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী), বহরমপুরঃ- প্রাণরাম কবিবল্লভ তাঁর ‘কালিকামঙ্গল’ কাব্যে শক্তিপারম্যের চরমতম এক উপাখ্যান লিখেছিলেন। সেই উপাখ্যানের কথায় আজকে বলবো। একসময় শিবার দেবী পার্বতী বৃষের উপর চেপে ভ্রমণ করতে বেরিয়েছিলেন। এমন সময় দেবাদিদেব মহাদেবকে দেবী পার্বতী জিজ্ঞেস করলেন,“ হে মহেশ্বর! তোমার গলায় কেন হাড় মালা? কেন তুমি গায়ে ভস্ম মেখে থাকো? কেনই বা তুমি দিগম্বর আর কেনই বা তোমার ভিক্ষুক বেশ?” শিব এর উত্তরে বললেন, “প্রিয়ে! তুমি মনের সুখে যতবার দেহত্যাগ করেছো, তা স্মরণ করে আমি চিতাভস্ম মেখেছি, কঙ্কালের কণ্ঠহার পরেছি আল উদাসীন হয়ে ভিক্ষা করি। আর শোকলাজহীন মহাযোগীর বস্ত্রে কিবা কাজ?”- দেবাদিদেবের এই বাক্যে দেবী ক্রুদ্ধা হলেন মুহূর্তেই, কারণ এই কথার মধ্যে দেবীর বারংবার জন্মমৃত্যু অর্থাৎ দেবীর অনিত্যতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। শক্তির প্রতি শিবের এই কটাক্ষ দেখে নিজের তত্ত্ব জানাতে দেবী তক্ষুনি শিবকে এক রক্তনদী দেখালেন। ভয়াবহ রক্ত নদী দেখে দেবাদিদেব রহস্য-ভেদ করার জন্য ধ্যানমগ্ন হলেন। কিন্তু দেবীর মায়ায় শিব এই নদীর তত্ত্ব অনুধাবন করতে না পেরে শেষমেষ দেবীর শরণাপন্ন হলেন। দেবী তখন সহাস্যে নিজের তত্ত্ব সম্পর্কে বললেন, “যতবার আমি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরকে প্রসব করেছি, ততবারের প্রসব রক্ত নদীর আকারে অদ্যাবধি বয়ে চলেছে।” শুনে চমকে উঠলেন শিব। আরম্ভ করলেন দেবীস্তব।
কালিকামঙ্গলে রয়েছে-
“হাসি কহে নারায়ণী হরি হর পদ্মযোনি
প্রসবিনু আমি যত বার॥
সেইত রক্তের নদী বহে হর অদ্যাবধি
শুনি হর হৈলা চমকিত।”
