যুদ্ধশেষে যুধিষ্ঠিরকে সান্ত্বনা দিতে ভীষ্ম কী গল্প বলেন জানেন?

27

সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব থেকে মা সারদা, সকল অবতার পুরুষরা বারংবার বলেছেন আমাদের ভাগ্যে যা কিছু হয় তা পূর্ব নিদৃষ্ট, পূর্বনির্ধারিত। আমাদের জীবনে শোক আসে, মৃত্যু আসে,বিপদ আসে, আমরা তার পিছনে নানান রকম কারণ খুঁজি, ভাবি সেই কারণটি না এলে হয়তো আমাদের জীবনে এই বিপদটি আসতো না, কিন্তু এটা ঠিক নয়। আসলে বিপদ হোক বা শোক সবই ভগবানের অঙ্গুলী হেলনে হয়। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প বলা যায়। মহাভারতের যুদ্ধের পর যুধিষ্ঠিরের মনে তীব্র বিষাদ আর বৈরাগ্য সৃষ্টি হয়। ভয়ংকর ক্ষয়কারী এই যুদ্ধের কারণ হিসেবে যুধিষ্ঠির নিজেকে মনে মনে দায়ী করতে থাকেন। এই সময় তিনি পিতামহ ভীষ্মের কাছে এলে, শরশয্যায় শুয়ে থাকা ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে একটি গল্প বলেন। একজন ব্রাহ্মণের আট বছর বয়সের সর্বগুণ সম্পন্ন একটি সুন্দর পুত্র ছিলো,সর্পদংশনে হঠাৎ ছেলেটির মৃত্যু হলে ব্রাহ্মণ শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

এরপর এক ব‍্যাধের হাতে সাপটি ধরা পড়ে ও ব‍্যাধ সাপটিকে নিয়ে ব্রাহ্মনের কাছে উপস্থিত হয়ে সাপটিকে পুত্রহত‍্যার উপযুক্ত শাস্তি দিতে বলে। কিন্তু সত্ত্বগুণী ব্রাহ্মণ সাপটিকে শাস্তি দিতে রাজি ছিলেন না। তিনি বললেন যে, সাপটিকে শাস্তি দিলেই তো আমি আর আমার মৃত পুত্রকে ফিরে পাবো না অর্থাৎ তুমি সাপটিকে ছেড়ে দাও। ব্যাধ ব্রাহ্মণের কথায় রাজি হলো না, সে সাপটিকে দোষারোপ করতে থাকে, তখন সাপটি বলে, ব্রাহ্মণ পুত্রের মৃত্যুর জন্য আমাকে কেন দায়ী করো? আমি তো মাত্র যমের আদেশ পালন করেছি!- যম তখন বললেন , আমি তো ব্রাহ্মণ পুত্রের মৃত্যুর জন্য দায়ী ন‌ই, কাল উপস্থিত হওয়াতে আমাকে কালের আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছে। কালকে তখন আহ্বান করা হলে কাল বললো, আমি কী করবো? ছেলেটির পূর্ব জন্মার্জিত কর্মফল অনুযায়ী তার এতোটুকুই আয়ু ছিলো আর সর্পাঘাতেই মৃত্যুর বিধান ছিল। সুতরাং তার কর্মফলই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী।- এ কথা শুনে ব্রাহ্মণও শোক ত্যাগ করলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here