যুদ্ধরত সেনার জন্য রক্ত, ওষুধ, খাবার ও জল নিয়ে তৈরি থাকুন ভারতবাসী

1219

নিউজ ডেস্কঃ পুলওয়ামা ঘটনার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ৪২ জন জওয়ানের শহীদ হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন দেশের বহু মানুষ। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এহেণ কাপুরুষোচিত হামলার কড়া নিন্দা করে সুর চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের মদতপুস্ট জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নির্মূল করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তিনি। আর তারপরেই পুলওয়ামা হামলার ঠিক ১২ দিনের মাথায় মঙ্গলবার ভোর রাত্রে ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে সরাসরি আঘাত হানা হয় পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন POK-এর ৮০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে তাদের ছত্রছায়ায় গঠিত জঙ্গি সংগঠণগুলির একাধিক জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে। ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের মাত্র ২১ মিনিটের অপারেশনে মৃত্যু হয় প্রায় ৩০০ জঙ্গির। সূত্রের খবর অনুযায়ী যাদের মধ্যে রয়েছে জঈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মাসুদ আজহারের তিন নিকট আত্মীয়। বায়ুসেনার অতর্কিত প্রত্যাঘাতে গুঁড়িয়ে যায় পাকিস্তানের বালাকোটে থাকা জঈশ-ই-মহম্মদের প্রধান ঘাঁটিও। আর তারপর থেকেই সরগরম দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতের পাল্টা জবাব দিতে বুধবার ভারতীয় আকাশ সীমার তিন কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়ে পাকিস্থানের দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাল্টা প্রতিরোধে পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভেঙে পড়েছে বলে খবর। এই ঘটনার পরেই নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ভারতীয় বায়ুসেনার ব্যবহারের জন্য আগামী তিন মাসের জন্য জম্মু, লে, অমৃতসর সহ মোট ৮টি অসামরিক বিমান বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের এহেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে ১৩০ কোটি মানুষের জীবন ও সম্মানরক্ষার্থে শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়ছে তখন দেশবাসী হিসেবেও আমাদের বেশ কিছু কর্তব্য থেকে যায়। কি সেই কর্তব্য এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

১। দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি কিংবা যুদ্ধ শুরু হলে সবথেকে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে রক্তের জোগান। কারণ যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের আক্রমণে যেমন ভারতীয় জওয়ানেরা আহত হতে পারেন তেমনি সাধারণ মানুষও আক্রমণের শিকার হতে পারেন। তাই রক্তের অভাবে যাতে অসুবিধার মুখে পড়তে না হয় তার জন্য প্রত্যেক দেশবাসীর উচিত এই আপাতকালীন অবস্থায় বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান করা। কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রমাণিত এক বোতল রক্ত তৈরী হতে আমাদের শরীরে মাত্র কয়েক মিনিটই লাগে, তাই দেশের জওয়ান এবং সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে আজ থেকেই বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে রক্তদান করুন।
২। রক্তের পাশাপাশি প্রত্যেকে মানুষের বাঁচার জন্য প্রয়োজন খাদ্য ও জল। দেশে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, তাই খাদ্য ও জলের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী। এরকম পরিস্থিতিতে দেশবাসী হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেক দিন এক প্যাকেট শুকনো খাবার ও এক বোতল পরিশোধিত জল (মিনারেল ওয়াটার) সেইসব সেনা জওয়ান ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চিত করে রাখি তাহলে ১৩০ কোটির দেশ ভারতবর্ষ যুদ্ধকালীন সময়েও কোনোরকম সরকারী সাহায্য ছাড়ায় আমরাই পৌঁছে দিতে পারি এইসমস্ত সামগ্রী। কারণ এই সময় সরকারী সমস্ত বিভাগ যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে চরম ব্যস্ততার মধ্যে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
৩। বর্তমানে আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই কোনও না কোনও সময় বাড়ির সদস্যদের রোগে ভুগতে হয়। তাই আমরা চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে বাড়িতে মজুত রাখি। যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে সঞ্চয় করে রাখা হয়। তাই আজ থেকেই সেই বাড়তি ওষুধ বৈধ তারিখ যাচাই করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে রাখুন। কারণ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনার, আমাদের এই সঞ্চয় করে রাখা ওষুধই বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজে লাগবে। কারণ, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আবশ্যক ওষুধপত্রের যোগানের আকাল দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের ভারতীয় সেনা বা যুদ্ধবিধ্বস্ত সাধারণ দেশবাসীর কাছে সেইসব ওষুধ যাতে আমরা নিঃশুল্কভাবে পৌঁছে দিতে পারি তার জন্য তৈরী থাকতে হবে।
৪। আজ থেকেই প্রত্যেক ভারতীবাসীর বাড়ির ছাদে দেশের জাতীয় পতাকা তেরঙ্গা উড়িয়ে দিন। যাতে আকাশ পথে যুদ্ধের সময়ও দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে শত্রুপক্ষের বিমানের নজরেও সেই তেরঙ্গা রং চোখে পড়ে। প্রত্যেক ভারতবাসীর বুকে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই যুদ্ধ শুধু ভারতীয় সেনাবাহিণীর নয়, আমাদের সম্মান ও অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। তাই ভারতীয় সেনার সেই মহান সৈনিকদেরকে যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও প্রিয়জনদের ছেড়ে দেশ মাতৃকাকে ভালোবেসে আত্মবলিদান করার জন্য যুদ্ধ চালাচ্ছেন তারা যেন মনের ভেতরে সবসময় এটাই রাখতে পারেন যে তাদের পেছনে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আশীর্বাদ ও শুভকামনা রয়েছে এই যুদ্ধের জন্য। ভারতীয় সেনা বিজয় ভবঃ। ভারত মাতা কি জয়। জয় হিন্দ।