অমল মাজি :- এবার তৃণমূল সুপ্রিমো অনেক ভেবেচিন্তে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন | তাই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে | এই দেরি হওয়ার কারণে কেমন হতে পারে প্রার্থী তালিকা ? তৃণমূল সূত্রে খবর, পুরোটাই পিকে টিমের পরামর্শে এবং নির্দেশে হচ্ছে | সমাজের বিশিষ্ট ও কৃতি জগতের একঝাঁক তরুণ ও ফ্রেস মুখ আসতে পারে এবারের প্রার্থী তালিকায় । দলের পুরনো দিনের লড়াকু ও আদি মমতা পন্থী যারা অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেছে এমন কিছু মানুষ কে একদম প্রথম সারিতে তুলে আনা হতে পারে । পার্থী তালিকা হয়তো একদিনে সম্পূর্ন ঘোষিত হবেনা, ধীরে, ধীরে কিছু, কিছু করে হতে পারে । অনেক বাঘা, বাঘা নাম প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে । কারন দলীয় আনুগত্য কে অগ্রাধিকার দিতে সম্পূর্ন রাজনৈতীক জীবন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে । আর কারুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিদ্রোহের আঁচ পেলে তিনি ব্যাক লিস্টেড হতেই পারেন । সম্পূর্ন জনমতের উপর নির্ভর করে পার্থী তালিকা তৈরি হওয়ায় সম্ভবনা রয়েছে এবার । কারুর সুপারিশ করা নাম কে গুরুত্বহীন, এবং জনগনের উল্লেখিত নামকেই সর্বোপরি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে । ২৯৪ এর মধ্যে সর্বাধিক ১৯০ পর্যন্ত নতুন মুখ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল | নতুন ও পুরাতন এর মধ্যে সেই এলাকার মানুষ যাকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও কাছের এবং কাজের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, প্রার্থী তালিকায় তারই নাম আসার সুযোগ রয়েছে |
সুযোগসন্ধানী, দলবদলু, কামানেওয়ালা, গদ্দার, দুর্নীতিপরায়ণ, জনগনকে অবহেলাকারি, দলের দেওয়া গদি কে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবা, দলীয় নির্দেশ অমান্যকারী, দলের মধ্যে থেকে লবি তৈরিকারী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবডাল করে নিজের প্রচার কারী, বিলাসবহুল জীবন যাপন কারী, অসাধু মানুষজনের সঙ্গে ওঠাবসা ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ী দের বেশী গুরুত্ব দেওয়া, এমন মানুষদের নাম বাদ যেতে পারে প্রার্থী তালিকা থেকে । তৃণমূল সূত্রে আরও জানা গেছে, এই প্রার্থী তালিকা তৈরির নেপথ্যে অনেক কিছু বিষয় দেখা হয়েছে |
প্রথমত : প্রতিটি বিধানসভার ৯০ শতাংশ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে | দলীয়, বিরোধী, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে | এলাকার মানুষ যাকে নেতা হিসেবে পেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে । এক্ষেত্রে কোনো মতভেদ, সুপারিশ ও স্বজন পোষণ কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না । এছাড়া শুধু উন্নয়ন নয়, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা এবং জনমানসে তার গ্রহণযোগ্যতা, সহকর্মীদের সঙ্গে তার মিশে যাওয়ার দক্ষতা, এলাকায় বিরোধীদের প্রার্থীর সম্পর্কে মতামত, প্রার্থীর সম্বন্ধে একজন সাধারণ মানুষের কি মত, এলাকার কতজন মানুষ বলছেন যে ওই প্রার্থীর কাছে তিনি বিমুখ হয়ে ফিরেছেন, তিনি পরিসেবা পাননি । এবং কতজন বলছেন যে ওই নেতা হাঁসি মুখে তাদেরকে পরিসেবা প্রদান করেছেন । তাছাড়া ওই এলাকার মানুষ ওই নেতাকে পুনরায় কেন চাইছে, অথবা কি কারনে চাইছে.না ? ওই এলাকার কত বেশী/কম মানুষ “দিদি কে বলো” তে ফোন করেছে, সংশ্লিষ্ট নেতার সম্পর্কে তারা কি ধারণা ব্যাক্ত করছেন । তারা সত্য বলছে ! নাকি অহেতুক তার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বলছেন । এই সমস্তকিছুই ওজন করে দেখা হয়েছে | সংশ্লিষ্ট নেতা গত দুবছর ধরে জানতেও পারেননি যে, গত দুবছর ধরে তিনি একটা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন | আর সেই পরীক্ষার রেজাল্ট আজ বা কাল প্রকাশিত হবে ।
এই পরীক্ষায় কোনো একজন বা দু,চার, দশ জন ব্যাক্তি সংশ্লিষ্ট নেতাকে অকৃতকার্য অথবা কৃতকার্য করতে পারেনি এবং সেটা সম্ভবও নয় । বহুভাবে ও বহুজন দ্বারা এবং বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে বিচার করা হয়েছে | আসলে ওই নেতা যেমন মানুষ, ঠিক তেমন ছবিটাই এবার তিনি দেখতে পাবেন |. অর্থাৎ এবার যদি তিনি টিকিট পান ! সেটা কেবল মাত্র সংশ্লিষ্ট নেতা তার নিজের যোগ্যতায়-ই পাবেন | এক্ষেত্রে ওই প্রার্থীকে কেউ কোনরকম সাহায্য করিনি । আর যদি টিকিট না পান ! তাহলেও সে নিজেই নিজেই দায়ী | অর্থাৎ বিগত ৫ বছরের তার কর্মকাণ্ড দায়ী | অন্য কেউ নয় |
কেউ টিকিট না পেলে রাগের কিছু নেই | কাউকে দোষারোপের করার যায়গা নেই | আগামী দিনের জন্য নিজেকে নতুনরূপে তৈরি করুন । যাতে আগামিতে জনগন আপনাকেই চায় । তৃণমূলের বক্তব্য, এটা রাজনৈতীক দল, কারোর পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে, প্রথমে আপনি, তারপর আপনার ছেলে, তার ছেলে… গদি ভোগ দখল করবে ! রাজনীতিতে জনগনই শেষ কথা বলে | আগে আপনি টিকিট পেয়েছেন, তারপর জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন | এবারে প্রার্থী নির্বাচনে সেই পদ্ধতি কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ আপনি টিকিট পেলে… জানবেন জনগন আপনাকে পার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছে । আর টিকিট না পেলে বুঝতে হবে জনগন আপনাকে চাইছে না । আর জনগন না চাইলে আপনার জেতার সুযোগ কম | তৃনমূল কংগ্রেস এবার জনগনের দ্বারা নির্বাচিত মানুষ দেরকেই প্রার্থী করতে যাচ্ছে | এবং একমাত্র তাদের জেতার সুযোগ অনেক গুন বেশী থাকবে, বা তারা ভীষন রকম লড়াই দিতে পারবে ।
তৃণমূল সূত্রে আরও বলা হচ্ছে , এর পরও তাকে বিচার করা হবে | আড়ালে, আবডালে তাকে লক্ষ করা হবে । সকলের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করুন | নতুন প্রার্থীকে সর্বোতভাবে সাহায্য করুন | নয়তো আগামী তে আপনার নেতার ট্যাগ টাও বিসর্জন দিতে হতে পারে । সকলকে মনে রাখতে হবে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলে সেই পদক্ষেপ কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বলে গণ্য করা হবে । কারন আপনার বিধানসভায় প্রার্থী নব্য,পুরাতন যেই হোক না কেনো, ব-কলমে ২৯৪ টা সিটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ই প্রার্থী । তাই টিকিট না পেলে… দোষারোপ করা বন্ধ করে, মন কে শক্ত করে দলের পক্ষে কাজ করুন । আগামিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ই আপনাদেরকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনবেন ।।