সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ- আশংকা ছিলই। এবার তা ফলপ্রসু হওয়া শুরু হল। লকডাউনের রাশ আলগা হতেই শুরু হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি। এখনও পর্যন্ত সরকারী হিসাবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ৩৬ জনের সক্রিয়তার হিসাব মিলেছে। এরই পাশাপাশি প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। যার মধ্যে সিংহভাগই পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের সংস্পর্শে আসার কারণেই ঘটেছে। পূর্ব জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর অনুযায়ী জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫। বুধবার নতুন করে আরও ৮জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, এই আক্রান্তদের মধ্যে ভাতারের কালিপাহাড়ীতে ১জন, রায়নার আলমপুরে ১জন, মেমারীর বিজরায় ২জন, বর্ধমান শহরের পুর এলাকা উদয়পল্লীর বেলপুকুরে ১জন এবং কালনা ২নং ব্লকের ৩জনের আক্রান্ত হয়েছেন। এঁদের প্রত্যেককেই দুর্গাপরের সনোকা কোডিভ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের পরিবারও তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষজন কে কোয়ারেণ্টাইন সেণ্টারে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি ওই সমস্ত এলাকাকে কন্টেনমেণ্ট জোন করা হচ্ছে। এদিকে,পরিযায়ী শ্রমিকরা জেলায় ঢুকতেই যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুততার সঙ্গে বেড়ে চলেছে তার জেরে রীতিমত গোটা জেলা জুড়েই তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারই মাঝে বুধবার থেকে শর্তসাপেক্ষে জেলায় টোটো বা ই-রিক্সা চলাচলে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি টোটোয় ২জনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না। যাত্রীদের হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক না থাকলে চাপানো যাবে না। প্রত্যেক টোটো চালককে হাতে গ্লাভস, মাস্ক এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তরে হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর টোটের ভেতর ও বাইরের অংশকে স্যানিটাইজ করতে হবে। বলা হয়েছে, কোনো ক্ষেত্রেই যাত্রী বা টোটো চালক ২এর বেশি যাত্রী চাপানোর জন্য কোনোরকম চেষ্টা করবে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন কড়া নজরদারী চালাচ্ছে। এমনকি ভাড়ার ক্ষেত্রেও নিদিষ্ট ভাড়ার অতিরিক্ত নেওয়া যাবে না। আবার, টোটোর পাশাপাশি বুধবার থেকেই আন্তঃরাজ্য বাস চলাচলেও অনুমোদন দেওয়ায় এই আতঙ্ক তীব্র হল। যদিও এখনও পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাস মালিকরা বাস চলাচলের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেয়নি। এরই মাঝে সরকার বিরোধী কতিপয় বাস মালিক সংগঠনগুলি বাসভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে গোঁ ধরে বসে রয়েছেন। এই সমস্ত সংগঠনের বাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূরপাল্লায় যাতায়াত করে। অপরদিকে, জেলার অভ্যন্তরে থাকা বর্ধমান জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা শরৎ কোনার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের বাস চালানোর জন্য বলা হয়েছে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে। এ ব্যাপারে তাঁরা সংগঠনগত ভাবে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর ক্ষেত্রে তাঁরা চরম লোকসানের মুখে পড়বেন। আবার বেপরোয়া ইচ্ছামত ভাড়া নেওয়া হলেও তা যাত্রীরা দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তাঁদের দাবী, একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হোক যাতে বাস মালিক বা যাত্রীরা উভয়েই কোনো সমস্যা না পড়েন। তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা চলতি সপ্তাহের শেষেই আলোচনায় বসবেন। তারপরই প্রশাসনের কাছে সিদ্ধান্ত জানাবেন। ফলত, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী সোমবারের আগে বর্ধমান জেলায় বেসরকারী বাস চলাচল না হবারই সম্ভাবনা। যদিও যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে তার মধ্যে টোটো চলাচল বা বাস চলাচলের এই অনুমতি দেওয়ায় তা আরও ব্যাপকতা লাভ করবে কিনা তা নিয়েই এবার আতঙ্ক মাত্রা ছাড়াতে শুরু করেছে।