নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ “কাস্ট ইওর ভোট” গোটা দেশের মূল স্লোগান বলতে এখন এটাই। কারণ দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচনের আবহ। ১৩০ কোটির দেশ ভারতবর্ষে লোকসভা ভোট হোক কিংবা বিধানসভা ভোট-বিপুল সংখ্যক এই ভোটারদের ভোটগ্রহণ ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। আর গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষের ভোটারদের কাছে ভোট হল তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। ১৮ বছরের উর্ধে ভোটার লিস্টে নাম উঠলেই যেকোনো ভারতীয় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। বর্তমানে দেশ জুড়ে লোকসভা ভোটের আবহ। ৭ দফার ভোটের মধ্যে সোমবার শেষ হয়ে গেল চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ। বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, জম্মু-কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের ৭১টি আসনে সোমবার শেষ হল চতুর্থ দফার ভোট। ভোট দিলেন ১৮ বছরের উর্ধে লক্ষাধিক ভোটার। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে নিজের ভোট দিয়ে আঙুলে ভোট দানের চিহ্ন নিয়ে হাসি মুখে বাইরে আসার ছবি আমরা বিভিন্ন ভোটেই দেখে এসেছি। কিন্তু কেউ ভেবে দেখেছেন ভোটের সময় বাঁ হাতের তর্জনীতে লাগানো কালো কালির রহস্য কী? কেন শত চেষ্টা করে ঘষে ঘষেও সেই কালি আঙুল থেকে তুলতে পারেন না ভোটাররা? আমাদের মধ্যেই অনেকে আছেন যারা ইতিমধ্যেই কৌতূহলবশত নানাভাবে চেষ্টা করেও ভোটের কালো কালি আঙুল থেকে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। না, এতে মন খারাপের কোনও কারণ নেই। আমি, আপনি এবং আরও অনেকেই নিজের জীবনের কোনও না কোনও সময় এই কাজ করেছি তা কেউ স্বীকার করুক বা নাই করুক। কিন্তু কি এই হতচ্ছাড়া কালো কালি যে শত চেষ্টা করেও ওঠানো যায় না? কত কঠিন কালিই তো তেল, কেমিক্যাল, রিমুভার দিয়ে গায়েব করা যায় কিন্তু নাছোড় “ইনডেলিবেল ইনক” (ভোটের সময় ব্যবহৃত কালো কালি) কোনোভাবেই ওঠানো যায় না। কারণ এর পেছনে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান। স্কুল জীবনে আমরা সকলেই পদার্থবিজ্ঞান অল্পবিস্তর পড়েছি, আর যারা বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ জল ভাত। আসলে ভোটারদের বাঁ হাতের তর্জনীতে যে কালো কালি ব্যবহার করা হয় তা হল সিলভার নাইট্রেট (AGNO3)-এর মিশ্রনের সঙ্গে বিশুদ্ধ জল (distiled water) এবং বিভিন্ন রং মিশিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী করা হয় এই “ইনডিলিবেল ইনক”। অবাক লাগলেও ভারতের মাত্র দুটি সংস্থার কাছে ভোটের কাজে ব্যবহৃত এই কালি তৈরীর অনুমোদন রয়েছে। দেশের আর কোথাও এই কালি তৈরীর অনুমতি নেই। এমনকি মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন কর্মীই এই কালি তৈরীর ফর্মুলা সম্পর্কে অবগত আছেন। এর মধ্যে মহীশূরে অবস্থিত Mysore paints and Varnish Limited অন্যতম। মূলত ভারতের এই সংস্থা থেকেই নেপাল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডেনমার্ক, কানাডা এবং গোটা ভারতে “ইনডিলিবেল ইনক” সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে ভারতে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কালিও দেশের এই সংস্থা থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার আবার আসা যাক অদ্ভূতুড়ে এই কালো কালির বিষয়ে। সিলভার নাইট্রেটের মিশ্রণে তৈরী এই বিশেষ কালি আঙুলে দেওয়া মাত্রই তা আমাদের ত্বকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এবং মুহূর্তে ত্বকের সঙ্গে লেগে যায়। আর এরপর ভোটদান কেন্দ্র থেকে আপনি যখন বাইরে বেরিয়ে আসেন তখন সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির সঙ্গে তা ফের বিক্রিয়া করে তা বাদামী রঙ ধারণ করে ত্বকে আরও চেপে বসে। সিলভার নাইট্রেটের কারণেই ভোটের এই কালি বেশ কিছুদিন আঙুলে থেকে গেলেও তা মুছে যায় না। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটে জালিয়াতি বা যাতে কোনও একজন ভোটার একের বেশি ভোট দিতে না পারেন সেই কারণে এই বিশেষ কালি ব্যবহার শুরু করা হয়। নির্বাচন বিধি অনুযায়ী, প্রত্যেক ভোটারের বাঁ হাতের তর্জনীতে এবং যদি কোনও ভোটারের বাঁ হাতের তর্জনী না থাকে তাহলে তা বাঁ হাতের যেকোনো আঙুলে এই কালি লাগানো হয়। আর যদি কোনও ব্যক্তির বাঁ হাতই না থাকে সেক্ষেত্রে তার হাতের যেকোনো অংশে ভোটের কালি ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। স্বভাবত প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন বাঁ হাতে লাগানো হয় এই কালি? তার উত্তরে বলা যায়, সাধারণত আমদের দৈনন্দিন জীবনে ডান হাতের ব্যবহার বিষয় হওয়ায় ওই কালি তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তার সাথে সাথে খাবারের সাথে যাতে কোনভাবে ওই রাসায়নিক কালি বিক্রিয়া করে শরীরের কোনও ক্ষতি না করতে পারে সেইকারনেই মূলত বাঁ হাতের তর্জনীতে ভোটের সময় কালো কালি ব্যবহার করা হয়। তাহলে এবার বুঝলেন তো ভোটের নাছোড় কালো কালির রহস্য? তাই জোর করে ভোটের কালো কালি ওঠানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার ত্বকেরই ক্ষতি হবে। তার থেকে বরং এই বেয়ারা কালিকে প্রাকৃতিক নিয়মেই উঠতে দিন।